বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৮৫৭
বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৮৫৭ সরকারিভাবে ১৮৫৭ সালের বিশ্ববিদ্যালয় আইন-(২) হিসেবে পরিচিত। কলকাতায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ভারতীয় আইনসভা কর্তৃক অনুমোদিত হয়ে এটি ১৮৫৭ সালের ২৪ জানুয়ারি গভর্নর জেনারেলের সম্মতি লাভ করে। এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে এ আইনের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ‘মহারানীর অধীনস্থ সকল শ্রেণি ও সম্প্রদায়ের প্রজাগণকে নিয়মিত এবং উদারনৈতিক শিক্ষা লাভ অধিকতর উৎসাহিত করা’ এবং পরীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে সাহিত্য, বিজ্ঞান, কলা-র বিভিন্ন শাখায় ব্যক্তিবর্গের ব্যুৎপত্তি নির্ণয় করা এবং স্ব স্ব ক্ষেত্রে তাদের অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ অ্যাকাডেমিক ডিগ্রি প্রদান করা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণ করতেন সরকার কর্তৃক নিযুক্ত এর চল্লিশ জন ফেলো। এঁদের অধিকাংশই ছিলেন সিভিল সার্ভিসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তাঁদের মধ্যে ছিলেন গভর্নর জেনারেল লর্ড ক্যানিং (প্রথম চ্যান্সেলর হিসেবে), বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর ফ্রেডারিক জেমস হ্যালিডে এবং বাংলার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি স্যার জেমস উইলিয়ম কোলভিল যিনি ছিলেন প্রথম ভাইস-চ্যান্সেলর। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সিনেট ৩৮ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হয়, তাঁদের মধ্যে ৬ জন ছিলেন ভারতীয়। উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন ছিল সমগ্র উত্তর ভারত, মধ্য প্রদেশ এবং ব্রিটিশ শাসিত বার্মা।
প্রথম উপাচার্যের মেয়াদকাল ছিল দুবছর। সিদ্ধান্ত হয় যে, গভর্নর জেনারেল বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট সদস্যদের মনোনীত করার পর তাঁদের থেকে একজনকে উপাচার্য পদে নিযুক্ত করবেন। সিদ্ধান্ত হয় যে, স্থায়ী ব্যবস্থা গঠন না করা পর্যন্ত আপাতত ডিগ্রি প্রদান, বিভিন্ন নিয়ম-বিধি প্রণয়ন ও সংশোধন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষক, কর্মকর্তা এবং কর্মচারী নিয়োগ কিংবা কোন নিয়োগ বাতিল করা প্রভৃতি কর্মকান্ড সিনেটের তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সভা চ্যান্সেলর অথবা তাঁর অনুপস্থিতিতে ভাইস-চ্যান্সেলরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হতো এবং সভায় উপস্থিত সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির জন্য বছরে অন্তত একটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতো। বহু বছর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের প্রধান উৎস ছিল প্রবেশিকা পরীক্ষাসহ অন্যান্য বিভিন্ন পরীক্ষার সংগৃহীত ফিসসমূহ।
বোম্বে এবং মাদ্রাজের অপর দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রথম দিকে চারটি অনুষদ ছিল, যেমন কলা ও বিজ্ঞান, আইন, চিকিৎসা এবং প্রকৌশল। অধিভুক্তকরণ ও পরীক্ষা গ্রহণই ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালযের নিজস্ব কোন শিক্ষাদান কার্যক্রম ছিল না। বিশ শতকের প্রথম কয়েক দশক পর্যন্ত এ অবস্থাই বিদ্যমান ছিল। [জাহেদা আহমদ]