বিশুদ্ধিমার্গ

বিশুদ্ধিমার্গ বৌদ্ধ দর্শনমতে দুঃখাদি থেকে মুক্তিলাভের সাধন পথ। এর শাব্দিক অর্থ বিশুদ্ধ পথ। বৌদ্ধ দর্শনের মূল বক্তব্য হলো জগৎ অনিত্য, দুঃখময় ও অনাত্ম। তাই অনিত্যকে অনিত্যরূপে, দুঃখকে দুঃখরূপে এবং অনাত্মকে অনাত্মরূপে দেখার যে প্রজ্ঞাদৃষ্টি তাই বিশুদ্ধিমার্গ। বিশুদ্ধিমার্গই সর্বদুঃখ থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র পথ। তাই এ পথকে বিমুক্তিমার্গ বা বিমুক্তিপথ নামেও আখ্যায়িত করা হয়। পালি ভাষায় একে বলা হয় ‘বিমুত্তিমাগ্গ’। বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা ইহলোক ও পরলোকের সুখ কামনায় বিহারকেন্দ্রিক সাধনা কেন্দ্রে বিশুদ্ধিমার্গের অনুশীলন করে।

বৌদ্ধ দর্শনমতে চারিত্রিক শুদ্ধতাই ধর্মচর্যার মূল ভিত্তি। চরিত্র শুদ্ধ না হলে অধ্যাত্ম কিংবা গার্হস্থ্য জীবনে উৎকর্ষ লাভ সম্ভব নয়। দুঃশীল ও দুর্নীতি পরিত্যাগের মাধ্যমে চরিত্র শোধন করা সম্ভব। এর জন্য বুদ্ধ নির্দেশিত , সমাধি ও প্রজ্ঞার অনুশীলন অপরিহার্য; কারণ চিত্তের পরিশোধন মানে কামক্রোধাদি চৈত্তিক রিপুসমূহের মূলোৎপাটনপূর্বক চিত্তকে শুদ্ধ ও ক্লেশশূন্য করা। আর এ কাজ সম্ভব হয় একমাত্র প্রজ্ঞা অর্জিত হলে। শীল ও সমাধি অনুশীলনের মাধ্যমে এই প্রজ্ঞা অর্জিত হয়। প্রজ্ঞানুশীল বা প্রজ্ঞা ভাবনার শেষ সীমায় উপনীত হলে সাধক রিপুমুক্ত হন। এ অবস্থায় তাঁকে বলা হয় অর্হৎ। অর্হৎদের অন্তরে কোনো প্রকার বন্ধনের লেশমাত্র থাকে না। এতাদৃশ বন্ধনহীন অবস্থাই জীবনের পরম অর্জন, পরম বিশুদ্ধি। আর এটি আয়ত্ত করার উপায়ই হলো বিশুদ্ধিমার্গ।

বিশুদ্ধিমার্গের অনুশীলন বিভিন্ন মেয়াদের হয়ে থাকে, যেমন: এক সপ্তাহ, এক পক্ষ, একমাস, তিনমাস ইত্যাদি। বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারে স্থায়ী অনুশীলন কেন্দ্রও গড়ে উঠেছে। চিত্তের মল পরিশোধনপূর্বক বিমুক্তিমার্গ লাভের প্রত্যাশায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ এই কেন্দ্রগুলিতে আয়োজিত ভাবনায় অংশগ্রহণ করে। [সুমন কান্তি বড়ুয়া]