বিনুনী প্রবাহ
বিনুনী প্রবাহ (Braided Stream) কম সর্পিলতা সম্পন্ন নদীসমূহের নদীখাত ও নদীখাত উপত্যকার অনুপাত ১.৫-এর কম। বিনুনী নদীখাতসমূহের বৈশিষ্ট্য হলো, নদীখাতের বালির চরা ঘিরে নিম্ন সর্পিলতা সম্পন্ন নদীখাতসমূহের অবিরত স্থানান্তরের ফলে সৃষ্ট জালিকাময় বিস্তৃতি। প্রধান নদীখাতটি একাধিক নদীখাতে বিভক্ত হয়, যা এক পর্যায়ে মিলিত হয়, পুনঃবিভক্ত হয় আবার একে অপরের সাথে মিলে যায়। নদীখাতের বালির চরা নিম্নতম প্রবাহের সময় স্রোতধারাকে একাধিক নদীখাতে বিভক্ত করে, যা উচ্চ প্রবাহকালীন সময়ে প্রায়শই জলাবৃত থাকে। একটি নদীখাতে এক বা একাধিক পলল দ্বীপ বা বালির চরা থাকতে পারে।
বিনুনী গড়ে ওঠা নদীখাতের মধ্যে পলি স্তরের অবক্ষেপণের ফলে সৃষ্ট বালুচরের সাথে সম্পর্কিত। বালির চরা নদীর তলদেশে বৃহৎ বিস্তৃতি নিয়ে গড়ে ওঠে এবং ভাটির দিকে সরে যায়, কেননা পলি বালির চরার উপর পরিবাহিত হয়ে নিম্ন স্রোতধারায় সঞ্চিত হয়। বালির চরা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে নদীখাতের পূর্বে পানি ছিল এমন এলাকা অধিকতর হারে দখল করতে থাকে। ফলশ্রুতিতে প্রবাহটি নদীখাতের প্রশস্ততা বৃদ্ধির জন্য এর তীর ভূমিকে পার্শ্বীয়ভাবে ভাঙ্গে, যাতে তার পানি ধারণ ও অপসারণের ক্ষমতা বজায় থাকে। অত্যন্ত উচ্চ প্রবাহকালীন সময়ে নদীর তলদেশে বাহিত ভারের অধিকাংশ পরিবাহিত হয়, পূর্বের সঞ্চিত বালির চরা ক্ষয় হয় এবং এই প্রণালীর মাধ্যমে পলি পুনর্বণ্টিত হয়। উচ্চ প্রবাহ হ্রাস পাওয়ার সাথে সাথে অপসারণের মাত্রা কমে যায়। বিনুনী প্রবাহের নদীখাত সমূহের ধরন অপসারণের মাত্রার উঠানামার সাথে অবিরত পরিবর্তিত হয়। বিনুনী প্রবাহ ঘটে যেখানে নতিমাত্রা খাড়া। এ প্রবাহের রয়েছে উচ্চহারের অপসারণ এবং এর তীরসমূহ সহজে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এমন নরম পলি সমন্বয়ে গঠিত।
বাংলাদেশের ব্রহ্মপুত্র-যমুনা পৃথিবীর বৃহত্তম বিনুনী নদীসমূহের একটি আদর্শ উদাহরণ। বাংলাদেশে প্রবেশের পরে নদীটির নতিমাত্রার দ্রুত পতন ঘটে এবং ফলশ্রুতিতে নেপাল, চীন এবং ভারতের উৎসভূমি থেকে প্রচুর পলি বাহিত হয়ে নদীখাতে সঞ্চিত হয়, যা বিনুনী বালির চরা সৃষ্টি করে, স্থানীয়ভাবে এসব চর হিসেবে পরিচিত। বর্ষা মৌসুমে এসব চরের অধিকাংশই জলমগ্ন হয় এবং সকল বিনুনী খাত একটি প্রশস্ত নদীখাতে পরিণত হয়; কোন কোন স্থানে তা ৪ কিমি-এরও অধিক প্রশস্ত হয়। এ মৌসুমে বন্যা এবং তীরভূমির ভাঙন অত্যন্ত প্রবল হয়ে ওঠে। [কাজী মতিন উদ্দিন আহমেদ]