বিদ্যুৎ ব্যবস্থা

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:২৯, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

বিদ্যুৎ ব্যবস্থা  একটি সমন্বিত নেটওয়ার্ক যা বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও সরবরাহ সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি ও উপকরণকে সংযুক্ত করে। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় ৫০ হার্টজ ফ্রিকোয়েন্সিতে এবং ১১ কিলোভোল্ট বা ১৫ কিলোভোল্টে যা উচ্চ ভোল্টের সঞ্চালন নেটওয়ার্ক বা গ্রিডে প্রেরণের জন্য ট্রান্সফরমার দিয়ে ১৩২ বা ২৩০ কেভিতে উন্নীত করা হয়। বিভিন্ন ধরনের গ্রাহকদের কাছে সরবরাহ করার জন্য গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ গ্রিড সাব-স্টেশনে ট্রন্সফরমারের মাধ্যমে ৩৩ কেভি, ১১ কেভি এবং ০.৪ কেভিতে নামিয়ে আনা হয়।

২০০৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ গ্রিডে প্রায় ২,৩১৪ সার্কিট কিলোমিটার ২৩০ কেভি লাইন, ৫,৫৩৩ সার্কিট কিলোমিটার ১৩২ কেভি লাইন এবং ১৬৭ সার্কিট কিলোমিটার ৬৬ কেভি সঞ্চালন লাইন অন্তর্ভুক্ত ছিল। ২৩০ কেভি এবং ৬৬ কেভি লাইনগুলি ১৩২ কেভি নেটওয়ার্কের সাথে যথাক্রমে ২৩০/১৩২ কেভি এবং ১৩২/৬৬ কেভি আন্তঃবাস ট্রান্সফরমারের মাধ্যমে সংযুক্ত। এ ছাড়া ৮৫টি গ্রিড সাব-স্টেশন আছে যেগুলিতে উচ্চ ভোল্টের সঞ্চালন লাইন থেকে বিদ্যুৎ নিয়ে লক্ষাধিক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ৩১ কেভি, ১১ কেভি এবং ০.৪ কেভি বিতরণ লাইন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছে সরবরাহ করা হয়।

বাংলাদেশে রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) গ্রাহকদের নিকট সরবরাহকৃত বিদ্যুতের প্রায় ৭৫% উৎপাদন করে। আর দেশি-বিদেশি কোম্পানিগুলির যৌথ মালিকানাধীন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি যেমন স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী (Independent Power Producer-IPP) এবং ভাড়ায় চালিত বিদ্যুৎ প্লান্টগুলি (Rental Power Plant-RPP) অবশিষ্ট ২৫% ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদন করে বিউবোর কাছে গ্রিডের মাধ্যমে বিক্রয় করে। বিউবো আবার বিভিন্ন বিতরণ সংস্থার কাছে বিদ্যুৎ বিক্রয় করে। অবশ্য কয়েকটি ছোট ছোট IPP পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ৩৩ কেভি বিতরণ নেটওয়ার্কে সরাসরি বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। গ্রিড সিস্টেম বা সঞ্চালন লাইনের নেটওয়ার্কটি পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (PGCB) নামক একটি সরকরি কোম্পানির মালিকানা ও পরিচালনাধীন। সারাদেশে বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্ব কয়েকটি সরকারি সংস্থা বা কোম্পানির উপরে নিজ নিজ সুনির্দিষ্ট এলাকা ভিত্তিক ন্যাস্ত আছে। এ সমস্ত প্রতিষ্ঠান হল বিউবো, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, ডিপিডিসি, ডেসকো এবং ওজোপডিকো (পশ্চিম অঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি)।

বাংলাদেশ ভৌগোলিকভাবে পদ্মা ও যমুনা নদী দ্বারা দুটি সুস্পষ্ট অঞ্চলে বিভক্ত। পূর্বাঞ্চলে জলবিদ্যুৎ ও পর্যাপ্ত গ্যাসফিল্ড থাকায় বিদ্যুতের সিংহভাগ এ অঞ্চলে উৎপাদিত হয়। পক্ষান্তরে পশ্চিমাঞ্চলে কয়েকটি জায়গায় কয়লার খনির সন্ধান পাওয়া গেলেও শুধুমাত্র বড়পুকুরিয়া থেকে কয়লা উত্তোলন শুরু হয়েছে। সেখান থেকে আহরিত কয়লা ২৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাবিশিষ্ট একটি বিদুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে ব্যবহার করা হচ্ছে। পশ্চিমাঞ্চলে কয়লার পাশাপাশি বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ফার্নেস অয়েল দিয়ে এবং পূর্বাঞ্চল থেকে যমুনা সেতুর নিচ দিয়ে একটি পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্যাস নিয়েও কিছু সীমিত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই পশ্চিমাঞ্চল একটি বিদ্যুৎ ঘাটতি এলাকা যাকে পূর্বাঞ্চল থেকে ২৩০ কেভির দুটি পূর্ব-পশ্চিম আন্তঃসংযোগ সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে প্রায় ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আনতে হয়। এ কারণে সিস্টেমে কোন গোলযোগ হলে ব্ল্যাকআউট পরিহার বা সীমিত করার লক্ষ্যে দুটি অঞ্চলের সিস্টেমকে তাৎক্ষণিকভাবে আলাদা করে পরিচালনা করার সুযোগ নেই বললেই চলে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সেক্টরে বেসরকারি এবং বিদেশি উদ্যোগ ও বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বিবিধ সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা সত্ত্বেও পুরনো বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলির সময়োচিত ওভারহলিং এবং নতুন নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনে অর্থ সংকুলান ও পর্যাপ্ত জ্বালানি সরবরাহের সমস্যা রয়েই গেছে। অথচ প্রতি বৎসরই গ্রাহকদের বিদ্যুৎ চাহিদা প্রায় ১০% হারে বেড়ে চলছে। তাছাড়া বর্তমান বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির পুরাতন জরাজীর্ণ দশা, উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাওয়া ও প্রায়ই সমস্যায় পতিত হওয়া এবং কম চাপে গ্যাস সরবরাহের দরুণ বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম হয়। ২০০৯ সালে গ্রীষ্মকালীন একটি দিনে সর্বোচ্চ চাহিদাকালীন সময়ে সচরাচর ৫০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদার বিপরীতে পূর্বাঞ্চলে ৩৩০০ মেগাওয়াট এবং পশ্চিমাঞ্চলে ৬০০ মেগাওয়াট মাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদিত হতো। স্পষ্টতই গ্রিড সিস্টেম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানটিকে সিস্টেম স্থিতিশীল ও কর্মক্ষম রাখার স্বার্থে ১০০০ মেগাওয়াট এর মত ব্যাপক লোডশেডিং এর আশ্রয় নিতে হয়।

তবে সরকার কর্তৃক প্রতিবেশী দেশসমূহ যেমন নেপাল, ভুটান, মায়ানমার থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির প্রচেষ্টা এবং গ্রিড বহির্ভূত দুর্গম গ্রামাঞ্চলে ক্ষুদ্র পরিসরে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যক্রম গ্রহণের পাশাপাশি আগামী এক দশকের মধ্যে পশ্চিমাঞ্চলে আরো কয়েকটি কয়লাভিত্তিক এবং একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থার জন্য আশাব্যাঞ্জক হতে পারে।

[এস শাহনেওয়াজ আহমেদ]