বিদ্যাসুন্দর

বিদ্যাসুন্দর মধ্যযুগের একখানা প্রণয়কাব্য; বিদ্যা ও সুন্দরের প্রণয়কাহিনী এর উপজীব্য। কাব্যটির উৎস এগারো শতকের সংস্কৃত কবি বিলহনের চৌরপঞ্চাশিকা। রূপবান ও গুণবান রাজকুমার সুন্দর কালিকাদেবীকে আরাধনায় তুষ্ট করে সুন্দরী বিদুষী রাজকন্যা বিদ্যার পাণিলাভের বর পায়। পরে দেবীপ্রদত্ত শুকপাখি নিয়ে সুন্দর বিদ্যার পিতৃরাজ্যে উপস্থিত হয়। রাজপ্রাসাদের মালিনীর মাধ্যমে চিত্র ও প্রণয়লিপি প্রেরণ করে সুন্দর বিদ্যাকে আকৃষ্ট করে এবং তাদের প্রণয় ঘটে। পরে সুড়ঙ্গপথে সুন্দর বিদ্যার শয়নগৃহে প্রবেশ করে এবং তাদের মিলন হয়। ক্রমে বিদ্যার শরীরে অন্তঃসত্ত্বার লক্ষণ ফুটে উঠলে রাজা ক্রুদ্ধ হন এবং তাঁর আদেশে সুন্দরকে শূলদন্ড প্রদান করা হয়। সুন্দর তখন স্তবদ্বারা দেবীকে পুনরায় তুষ্ট করে প্রাণে রক্ষা পায় এবং বিদ্যাকে লাভ করে।

বিদ্যা ও সুন্দরের এই প্রেমকাহিনী অবলম্বনে প্রথমে বাংলা ভাষায় কাব্য রচনা করেন ষোলো শতকের কবি শাহ বিরিদ খান ও দ্বিজ শ্রীধর। পরে কৃষ্ণরাম, বলরাম, কবিশেখর,  রামপ্রসাদ সেনভারতচন্দ্র রায় প্রমুখ এ ধারায় কাব্য রচনা করে যশস্বী হন। তবে এঁদের মধ্যে ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল বা কালিকামঙ্গলই শ্রেষ্ঠ কাব্য।  [সৌমিত্র শেখর]