বিদ্যাভূষণ, সতীশচন্দ্র
বিদ্যাভূষণ, সতীশচন্দ্র (১৮৭০-১৯২০) সংস্কৃত ও পালি ভাষার পন্ডিত। ১৮৭০ সালের ৩০ জুলাই রাজবাড়ী জেলার বালিয়কান্দি উপজেলায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা পীতাম্বর বিদ্যাবাগীশ ছিলেন একজন জ্যোতিষশাস্ত্রজ্ঞ। সতীশচন্দ্র ১৮৮৮ সালে নবদ্বীপ হিন্দু স্কুল থেকে প্রবেশিকা পাস করেন। তারপর ফরিদপুরের জ্যোতিষী ও কবিরাজ গুরুদাস রায়ের নিকট তিনি সূর্যসিদ্ধান্ত অধ্যয়ন করেন। ১৮৯২ সালে তিনি কৃষ্ণনগর কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে সংস্কৃতে অনার্সসহ বি.এ এবং পরের বছর কলকাতার সংস্কৃত কলেজ থেকে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ব্যাকরণ, অলঙ্কার, কাব্য, ন্যায়, স্মৃতি, বেদ প্রভৃতি শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। ১৯০৮ সালে তিনি ‘Middle Age School of Indian Logic’ শীর্ষক অভিসন্দর্ভ লিখে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ.ডি ডিগ্রি ও গ্রিফিথ পুরস্কার লাভ করেন।
সতীশচন্দ্র প্রথমে কৃষ্ণনগর কলেজে এবং পরে সংস্কৃত কলেজে ও প্রেসিডেন্সি কলেজে সংস্কৃত বিষয়ে অধ্যাপনা করেন। কিছুদিন তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েও অধ্যাপনা করেন। তিনি সিংহলে মাহিন্দা কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন (১৯০৯)। বহু বছর তিনি (১৮৯৪-১৯১৬) বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা সম্পাদনা করেন।
সতীশচন্দ্র পালি ভাষা ও বৌদ্ধশাস্ত্রেও পারদর্শী ছিলেন। ১৯০১ সালে তিনি পালি ভাষায় এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। সরকার কর্তৃক Buddhist Text Society-র সহযোগী সম্পাদক নিযুক্ত হয়ে তিনি ২২ বছর দায়িত্ব পালন করেন এবং এ সময় পালি ভাষায় বহু গ্রন্থ রচনা করেন। ১৮৯৭ সালে সরকার কর্তৃক তিববতি ভাষার অনুবাদক নিযুক্ত হয়ে তিনি রায়বাহাদুর শরচ্চন্দ্র দাসের সহকারী হিসেবে তিববতি-ইংরেজি অভিধান রচনা করেন। বৌদ্ধ সাহিত্যে পান্ডিত্যের জন্য তিনি ‘ত্রিপিটক বাগীশ্বর’, যোধপুর শ্বেতাম্বর জৈন কনফারেন্স থেকে ‘শাস্ত্রসুধাকর’ এবং নিখিল ভারত জৈন কনফারেন্স থেকে ‘সিদ্ধান্ত মহোদধি’ (১৯১৩) উপাধি পান। এছাড়া তিনি ‘নবদ্বীপ বিদগ্ধজননী সভা’ কর্তৃক ‘বিদ্যাভূষণ’ এবং ১৯০৬ সালে ভারত সরকার কর্তৃক ‘মহামহোপাধ্যায়’ উপাধিতে ভূষিত হন।
সতীশচন্দ্র রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটি (লন্ডন) ও বেঙ্গল এশিয়াটিক সোসাইটির (কলকাতা) সদস্য এবং বুদ্ধিষ্ট টেক্সটবুক সোসাইটির কার্যনির্বাহী কমিটির সভ্য ছিলেন। তিনি পালি, তিববতি, চীনা, জাপানি, শ্যামদেশীয়, ইংরেজি, জার্মান ও ফরাসি ভাষায় ব্যুৎপন্ন ছিলেন। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় রচিত তাঁর গ্রন্থসংখ্যা বাইশ। সেসবের মধ্যে আত্মতত্ত্ব প্রকাশ, বুদ্ধদেব, ভবভূতি, Tibetan Dictionary (যুগ্ম), Nyayasutras and Gautama, Six Systems of Indian Philosophy, A History of Indian Logic প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। ১৯২০ সালের ২৫ এপ্রিল তাঁর মৃত্যু হয়। [দিলীপকুমার ভট্টাচার্য্য]