বাহাদুর গাজী
বাহাদুর গাজী ভাওয়ালের জমিদার এবং বাংলার বিখ্যাত বারো ভূঁইয়াদের অন্যতম। তিনি চৌরার গাজী বংশোদ্ভুত। গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জের মাইল খানেক উত্তরে শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত চৌরায় এ পরিবার প্রথম বসতি স্থাপন করে। বাহাদুর গাজী ছিলেন বিখ্যাত ভূঁইয়া ফজল গাজীর পুত্র ও উত্তরাধিকারী। এ বংশের আদি পুরুষ পাহলোয়ান শাহ ইসলাম প্রচারের লক্ষ্যে ভাওয়াল এলাকায় আসেন এবং চৌদ্দ শতকের গোড়ার দিকে এখানে বসতি স্থাপন করেন। পাহলোয়ান শাহের পুত্র কারফর্মা সাহেবও ছিলেন একজন দরবেশ প্রকৃতির লোক। তিনি দিল্লির সুলতানের নিকট থেকে এক সনদের মাধ্যমে ভাওয়াল পরগণার জায়গির লাভ করেন। বাহাদুর গাজী ছিলেন পাহলোয়ান শাহের অধস্তন নবম পুরুষ।
বাহাদুর গাজী সম্রাট আকবরের সময় দিল্লির রাজদরবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র রক্ষা করতেন। বাহাদুর গাজী সম্রাটের প্রতি তাঁর আনুগত্যের স্মারক হিসেবে ৪৮,৩৭৯ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৩৫টি রণতরী উপঢৌকন হিসেবে দিল্লিতে প্রেরণ করেন। একটি রাজকীয় সনদের সাক্ষ্যমতে, সম্রাট আকবর বাহাদুর গাজীকে ভাওয়ালের জমিদারীতে বহাল রাখেন।
বাহাদুর গাজী ছিলেন মুসা খান মসনদ-ই-আলার ঘনিষ্ঠ সহযোগী। তিনি তাঁর বিপুলসংখ্যক রণতরী নিয়ে মুগলদের বিরুদ্ধে মুসা খানের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং মুসা খানের চূড়ান্ত পরাজয়ের (১৬১১ খ্রি.) পরেই কেবল মুগলের বশ্যতা স্বীকার করেন। মুগলদের বিরুদ্ধে মুসা খানের শেষ যুদ্ধে বাহাদুর গাজীকে ২০০ রণতরীসহ চৌরায় মোতায়েন করা হয়েছিল। মুগল সেনাপতি আবদুল ওয়াহিদের নিকট পরাজয়ের পর বাহাদুর গাজী মুগল সেনাপতির সঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর গিয়ে সুবাহদার ইসলাম খানের নিকট আনুগত্য প্রকাশ করেন। সুবাহদার বাহাদুর গাজীকে সসম্মানে গ্রহণ করেন, তাঁকে তাঁর জমিদারিতে বহাল রাখেন। কিন্তু তাঁর সব রণতরী বাজেয়াপ্ত করে রাজকীয় নৌবহরের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সামন্ত জমিদার হিসেবে তিনি মুগলদের বিভিন্ন সামরিক অভিযানে অংশ নেন এবং যশোরের রাজা প্রতাপাদিত্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে (১৬১১-১২) ও মুগলদের কামরূপ অভিযানে (১৬১৩) সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।
আফগান নেতা খাজা উসমানের সহযোগিতায় হাসানপুরের মুগল সেনা-ছাউনিতে নেতৃস্থানীয় মনসবদারদের বন্দি বা হত্যা করা এবং ঢাকায় সুবাহদার ইসলাম খানকে বন্দি করার এক গভীর ষড়যন্ত্র করেছিলেন বানিয়াচঙ্গের জমিদার আনোয়ার খান। এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে বাহাদুর গাজী এবং মুসা খানের ভ্রাতা মাহমুদ খান সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। অচিরেই বাহাদুর গাজীর গোপন কার্যকলাপ প্রকাশ পায় এবং গোটা ষড়যন্ত্র বানচাল হয়ে যায়। বাহাদুর গাজীকে শৃঙ্খলিত করে কড়া নজরদারিতে রাখা হয়। [মুয়ায্যম হুসায়ন খান]