বালিয়াকান্দি উপজেলা

বালিয়াকান্দি উপজেলা (রাজবাড়ী জেলা)  আয়তন: ২২৮.৯৯ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°৩৩´ থেকে ২৩°৪৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°২৬´ থেকে ৯০°৪০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে পাংশা উপজেলা, দক্ষিণে মধুখালী উপজেলা, পূর্বে রাজবাড়ী সদর উপজেলা, পশ্চিমে পাংশা ও শ্রীপুর উপজেলা।

জনসংখ্যা ২০৭০৮৬; পুরুষ ১০৩৬৭৫, মহিলা ১০৩৪১১। মুসলিম ১৬৪২০৬, হিন্দু ৪২৮১৯, খ্রিস্টান ৫৭, বৌদ্ধ ৩ এবং অন্যান্য ১।

জলাশয় প্রধান নদী: হারা, চিত্রা, চন্দনা, গড়াই, পুর্সালী। জাসাই বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন বালিয়াকান্দি থানা গঠিত হয় ১৮৮১ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১৫০ ২৫৮ ৯৮৯৭ ১৯৭১৮৯ ৯০৪ ৬৬.৯ ৫৪.৯
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৫.৬৩ (২০০১) ৯৮৯৭ ১২৭১ (২০০১) ৬৬.৯
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
ইসলামপুর ৪৭ ৮২৩২ ১৫৩০৬ ১৫৬৬৪ ৫৩.৬
বহরপুর ১৭ ৯৩৪২ ১৭৪৫১ ১৭০৩৯ ৫৫.০
বালিয়াকান্দি ১৯ ৬৩২৪ ১৩৭৭৬ ১৩৮২১ ৫৪.৫
জামালপুর ৫৭ ৯৭৯৪ ১৫২১২ ১৪৮৮৪ ৫৭.৯
জংগল ৬৬ ৭২৩৬ ১০২৫৩ ১০০৪৮ ৫৪.১
নারুয়া ৮৫ ৬১১৩ ১২৭৬৯ ১২৯৮৪ ৫৪.৪
নওয়াবপুর ৯৫ ৯৫৪৫ ১৮৯০৮ ১৮৯৭১ ৫৭.৬

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ কল্যাণ দীঘি (রাজধরপুর, খননকৃত ১৪৬৫ খ্রিস্টাব্দ), জোড়বাংলা হিন্দু মন্দির (নলিয়া, সতের শতক), সমাধি নগর মঠ (জঙ্গলবাড়ি, উনিশ শতক)।

ঐতিহাসিক ঘটনা ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহের অন্যতম ঘাঁটি ছিল বালিয়াকান্দি। এ উপজেলার সোনাপুর গ্রামের কৃষকরা নীল আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে বালিয়াকান্দিতে স্থানীয় রাজাকার ও পুলিশবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে রাজাকার ও পুলিশবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট পরাজিত হয়ে আত্মসমর্পণ করে এবং মুক্তিযোদ্ধারা বেশকিছু অস্ত্রশস্ত্র হস্তগত করে। উপজেলার বহরপুরে ১টি গণকবর এবং রামদিয়ায় ১টি বধ্যভূমি রয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন বালিয়াকান্দি উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৭।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ১৫২, মন্দির ১১৩, মাযার ১০, তীর্থস্থান ১।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৫.৫%; পুরুষ ৫৭.১% মহিলা ৫৩.৮%। কলেজ ৪, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২১, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮৮, মাদ্রাসা ৫। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বাকশাভাঙ্গী সরকারি বিদ্যালয় (১৮৯৪), পটরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯১৯)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৯, ক্লাব ১১, নাট্যমঞ্চ ২, নাট্যদল ৫, মহিলা সংগঠন ২, সিনেমা হল ৪, খেলার মাঠ ৮।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭১.৪%, অকৃষি শ্রমিক ২.২৭%, শিল্প ০.৪৮%, ব্যবসা ১১.৯%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.২%, চাকরি ৪.৬৮%, নির্মাণ ০.৯%, ধর্মীয় সেবা ০.১৬%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.২৭% এবং অন্যান্য ৪.৭৪%।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, আখ, তৈলবীজ, খয়ের।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি কার্পাস, জাফরান।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, নারিকেল, কলা।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১৯, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি ১১১।

কুটিরশিল্প লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, দারুশিল্প, বাঁশের কাজ, নকশি কাঁথা, নকশি পাখা।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৩৮ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৬৯ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪৪৫ কিমি; রেলপথ ২০ কিমি; নদীপথ ২৬ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ডুলি, ঘোড়ার গাড়ি।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৬, মেলা ৫। বহরপুর হাট, জামালপুর হাট, সোনাপুর হাট, বালিয়াকান্দি হাট এবং হরি ঠাকুরের মেলা ও বেরুলী মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  পাট, আখ, তৈলবীজ, খয়ের।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩৯.৪% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৫.৮%, ট্যাপ ০.২% এবং অন্যান্য ৪.০%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৮১.০% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ১৫.৫% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৩.৫% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, স্যাটেলাইট ক্লিনিক ৬, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৩।

এনজিও ব্র্যাক, আশা।  [বদরুল আলম টিপু]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; বালিয়াকান্দি উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।