বারোমাসি গান
বারোমাসি গান বাংলা বারোমাসের বর্ণনাযুক্ত বিরহবেদনার গান। এ গানে বছরের বারোমাসের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা এবং আশা-নিরাশার কথা বর্ণনা করা হয়। বারোমাসি অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ গান। সাধারণত বৈশাখ মাস থেকে এ গানের বর্ণনা শুরু হয়। এ গান পরিবেশনের কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই। বছরের প্রায় সব ঋতুতেই এ গান পরিবেশিত হয়। এ গানের পরিবেশক অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নারী, যে বারো মাসের প্রাকৃতিক বর্ণনাসহ নিজের দুঃখ-যন্ত্রণার কথা গানের মাধ্যমে বর্ণনা করে।
বাঙালি সংস্কৃতির মৌল উপাদান বারোমাসি গানের মধ্যে পাওয়া যায়। বিশেষ বিশেষ দেবদেবীর বন্দনা, পৌরাণিক, ঐতিহ্যিক বা সামাজিক ঘটনা, প্রেম এবং কৃষিকর্ম বারোমাসি গানের বিষয়। বাংলা বারোমাসি গানগুলি সাহিত্যিক, সামাজিক ও ঐতিহাসিক দিক থেকে বিশেষ মূল্যবান। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই বারোমাসি গান জনপ্রিয়। এ দেশের গ্রামে গ্রামে কৃষাণিরা ক্ষেত-নিড়ানির সময় শ্রম লাঘবের উদ্দেশ্যে সমবেতভাবে কোনোরকম বাদ্যযন্ত্র ছাড়াই মনের আনন্দে এ গান পরিবেশন করে। এ অর্থে বারোমাসি গানকে কর্মসঙ্গীতও বলা যায়। বারোমাসি গানের সুর বিচ্ছেদমূলক। এ গানে কোনো নির্দিষ্ট সুর নেই, সাধারণত আঞ্চলিক সুরে এ গান গাওয়া হয়।
চট্টগ্রাম এবং পাবনা জেলায় প্রচলিত বারোমাসি গানের নাম যথাক্রমে ‘সীতার বারোমাসি’ ও ‘নীলার বারোমাসি’। কাহিনী দুটির মধ্যে অনেকাংশে মিল রয়েছে। চট্টগ্রাম এলাকায় প্রচলিত ‘সীতার বারোমাসি’ গানের বর্ণনায় আছে: ‘আষাঢ় মাসেতে দেখ ঘন বরষণ/ কোথা প্রভু রামচন্দ্র দেবর লক্ষ্মণ\ কর্মফলে দশাননে আনিয়াছে হরি/ ধার্মিক লক্ষ্মণ মোরে নাও না হরি \’
ষোলো শতকের কবি মুকুন্দরামের কালকেতু উপাখ্যানে আছে ফুল্লরার বারোমাসি। এতে অভাবগ্রস্ত পরিবারে ফুল্লরার বারোমাসের দুঃখ-বেদনার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। [আবদুল ওয়াহাব]