বানর
বানর (Macaque) স্তন্যপায়ীদের Primate বর্গের অতি পরিচিত এক প্রাণিদল। এদের প্রধানত দেখা যায় দক্ষিণ এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকায়। বানর বুদ্ধিমান ও সামাজিক জন্তু; অধিকাংশ প্রজাতিই গাছে বাস করে। নিরামিষভোজী হলেও এদের বাসস্থান ও খাদ্যে পর্যাপ্ত বৈচিত্র্য আছে। বাংলাদেশে ১০ প্রজাতির প্রাইমেটের মধ্যে রয়েছে ৫ প্রজাতির বানর। পৃথিবীতে বর্তমানে বিদ্যমান ১৯ প্রজাতির বানরের মধ্যে এক প্রজাতি ছাড়া অন্য সবগুলি ছড়িয়ে আছে এশিয়ায় আফগানিস্তান থেকে জাপান, ফিলিপাইন থেকে বোর্নিও পর্যন্ত।
বানররা গাট্টাগোট্টা, হনুমানদের তুলনায় মুখাগ্র দীর্ঘতর, নিতম্বে রয়েছে লোমহীন কড়া চামড়া। বানরের মুখ কুকুরের মতো। চলাচল করে সদলবলে, দলনেতা হয় একটি পুরুষ বানর। এরা বীজ, ফল, কীটপতঙ্গ, টিকটিকি ইত্যাদি খাদ্যে অভ্যস্ত। কয়েক প্রজাতি ভূচর। কাঁকড়াভুক বা লম্বালেজী বানর দক্ষ সাঁতারু, খায় কাঁকড়া জাতীয় প্রাণী। এক সময় চকোরিয়া, সুন্দরবন ও টেকনাফে প্রচুর ছিল, এখন দুষ্প্রাপ্য। Rhesus বানর (M. mulatta) নগরজীবনে সহজেই অভ্যস্ত হয়ে ওঠে এবং প্রায়শই বড় বড় দলে বাজার ও মন্দিরের আশেপাশে থাকে।ঢাকা শহরের তাঁতীবাজার, বনগ্রাম, লালবাগ, গেন্ডারিয়া ও নবাবগঞ্জে এখনও শতাধিক বানর আছে। হলদে-ধূসর এই বানরের মুখমন্ডল লোমহীন ও ফ্যাকাসে, লেজ দেহদৈর্ঘ্যের প্রায় অর্ধেক।
বড় আকারের পুরুষ বানর ৬০ সেমি লম্বা হতে পারে। এদের ২৫-৬০ সদস্যের একেকটি দল নানা আবাসস্থলে বন ও বিভিন্ন উচ্চতার পাথুরে পাহাড়ে থাকে। সর্বভুক এই জন্তুগুলি প্রায়শ ফসলের ক্ষেত ও বাগানে হামলা চালায়। মানুষের মতো এদের রক্তেও Rh ফ্যাক্টর থাকায় এই বানর চিকিৎসা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ব্যাপকভাবে ব্যবহূত হয়।
বাংলাদেশে বানরের প্রজাতিগুলি হচ্ছে খাটোলেজী বানর (Stumptail Macaque, Macaca arctoides), আসামী বানর (Assamese Macaque, Macaca assamensis), প্যারাইল্লা বানর/লম্বালেজী বানর (Crab-eating Macaque/Long-tailed Macaque, Macaca fascicularis) এবং রেসাস বানর (Rhesus Macaque, Macaca mulatta)। [মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম]