বাঙালি পল্টন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১০ নং লাইন: ১০ নং লাইন:
বাঙালি পল্টনের ৬৩ জন সদস্যের রোগ-ব্যাধি ও অন্যান্য কারণে মৃত্যু হয়। ১৯২৪ সালের আগস্ট মাসে মৃত সৈনিকদের সম্মানে কলকাতার কলেজ স্কোয়ারে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়। কিছু সৈনিক ও বাঙালি অফিসার মেসোপটেমিয়ায় অবস্থানকালে প্রশংসনীয় কাজের জন্য বিভিন্ন খেতাব ও স্বীকৃতি লাভ করেন। এ স্বীকৃতি সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হয়। ১৯১৯ সালের জুলাই মাসে লন্ডনে ভিক্টরি মার্চ ও পিস সেলিব্রেশন অনুষ্ঠিত হয়। এ অনুষ্ঠানে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে সৈনিক ও অফিসাররা অংশগ্রহণ করেন। ৪৯তম বেঙ্গলি রেজিমেন্ট থেকে একজন ব্রিটিশ ও একজন ভারতীয় অফিসার এবং দু’জন সৈনিক অংশগ্রহণ করেন।
বাঙালি পল্টনের ৬৩ জন সদস্যের রোগ-ব্যাধি ও অন্যান্য কারণে মৃত্যু হয়। ১৯২৪ সালের আগস্ট মাসে মৃত সৈনিকদের সম্মানে কলকাতার কলেজ স্কোয়ারে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়। কিছু সৈনিক ও বাঙালি অফিসার মেসোপটেমিয়ায় অবস্থানকালে প্রশংসনীয় কাজের জন্য বিভিন্ন খেতাব ও স্বীকৃতি লাভ করেন। এ স্বীকৃতি সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হয়। ১৯১৯ সালের জুলাই মাসে লন্ডনে ভিক্টরি মার্চ ও পিস সেলিব্রেশন অনুষ্ঠিত হয়। এ অনুষ্ঠানে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে সৈনিক ও অফিসাররা অংশগ্রহণ করেন। ৪৯তম বেঙ্গলি রেজিমেন্ট থেকে একজন ব্রিটিশ ও একজন ভারতীয় অফিসার এবং দু’জন সৈনিক অংশগ্রহণ করেন।


বাঙালি পল্টন কোনও সাধারণ পল্টন হিসেবে গঠিত হয় নি। এ পল্টনে মূলত মধ্যবিত্ত ও শিক্ষিত শ্রেণি বা ভদ্র সমাজের তরুণরা সৈনিক হিসেবে যোগ দেয়। এদের অনেকেই যুদ্ধের পূর্বে উচ্চ বেতনে চাকুরিরত ছিলেন। কেউ কেউ সে সময় গ্র্যাজুয়েট, মাস্টার্স বা ওকালতি পাস করেন। কয়েকজন নওয়াব, জমিদার ও ধনী পরিবারের তরুণও বাঙালি পল্টনে যোগ দেন। বাঙালি পল্টনে উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে ছিলেন সুবেদার মেজর শৈলেন্দ্রনাথ বসু, সুবেদার মেজর কুমার অধিক্রম মজুমদার, জমিদার নওয়াব  [[হাবিবুল্লাহ, খাজা|খাজা হাবিবুল্লাহ]], জমিদার  [[সাহা, রনদা প্রসাদ|রণদাপ্রসাদ সাহা]], হাবিলদার  [[ইসলাম, কাজী নজরুল|কাজী নজরুল ইসলাম]], সৈনিক  [[আলম, মাহবুব-উল|মাহবুব-উল আলম]] প্রমুখ।  [মুহাম্মদ লুৎফুল হক]
বাঙালি পল্টন কোনও সাধারণ পল্টন হিসেবে গঠিত হয় নি। এ পল্টনে মূলত মধ্যবিত্ত ও শিক্ষিত শ্রেণি বা ভদ্র সমাজের তরুণরা সৈনিক হিসেবে যোগ দেয়। এদের অনেকেই যুদ্ধের পূর্বে উচ্চ বেতনে চাকুরিরত ছিলেন। কেউ কেউ সে সময় গ্র্যাজুয়েট, মাস্টার্স বা ওকালতি পাস করেন। কয়েকজন নওয়াব, জমিদার ও ধনী পরিবারের তরুণও বাঙালি পল্টনে যোগ দেন। বাঙালি পল্টনে উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে ছিলেন সুবেদার মেজর শৈলেন্দ্রনাথ বসু, সুবেদার মেজর কুমার অধিক্রম মজুমদার, জমাদার নওয়াব  [[হাবিবুল্লাহ, খাজা|খাজা হাবিবুল্লাহ]], জমাদার  [[সাহা, রনদা প্রসাদ|রণদাপ্রসাদ সাহা]], হাবিলদার  [[ইসলাম, কাজী নজরুল|কাজী নজরুল ইসলাম]], সৈনিক  [[আলম, মাহবুব-উল|মাহবুব-উল আলম]] প্রমুখ।  [মুহাম্মদ লুৎফুল হক]
 
[[en:Bangali Paltan]]
 
[[en:Bangali Paltan]]
 
[[en:Bangali Paltan]]
 
[[en:Bangali Paltan]]


[[en:Bangali Paltan]]
[[en:Bangali Paltan]]

১৫:১০, ১৯ জুন ২০২১ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

বাঙালি পল্টন  প্রথম মহাযুদ্ধে (১৯১৪-১৯১৮) অংশগ্রহণকারী বাঙালি সৈন্যদের নিয়ে গঠিত রেজিমেন্ট। এ যুদ্ধের প্রারম্ভে সর্বপ্রথম ভারতীয় সেনাবাহিনীতে বাঙালিদের অন্তর্ভুক্তি শুরু হয়। এ সময় বাংলা থেকে কিছু অযোদ্ধা সৈনিক এবং দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করা হয়। ১৯১৬ সালের মাঝামাঝি ব্রিটিশ সরকার বাঙালি দ্বারা গঠিত যোদ্ধা রেজিমেন্ট বা বাঙালি পল্টন গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় এবং বাঙালি পল্টনের প্রথম ইউনিটের নামকরণ করা হয় বেঙ্গলি ডবল কোম্পানি। ভারতীয় বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত এসব ডবল কোম্পানিতে ২২৮ জন করে সৈনিক মজুদ থাকত। ১৯১৬ সালের ৭ আগস্ট বাংলার গভর্নর লর্ড কারমাইকেল ঢাকায়  বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলএর সমাপনী বক্তৃতায় এ কোম্পানি গঠনের ঘোষণা দেন। বাঙালি নেতারা কোম্পানি গঠনে সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য বেঙ্গলি রেজিমেন্ট কমিটি নামে একটি সংস্থা গঠন করেন। কলকাতায় কেন্দ্রীয় অফিসসহ তদানীন্তন বাংলার প্রতিটি জেলা ও বড় মহকুমা সদরে কমিটির শাখা অফিস খোলা হয়। বেঙ্গলি ডবল কোম্পানিতে যোগদানের জন্য বিভিন্ন এলাকায় সভা, পত্রিকায় প্রচার ও অন্যান্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এসব সভায় বাংলার বরেণ্য নেতা এবং জমিদার ও  নবাবরাও অংশগ্রহণ করেন। কারণ জনগণকে কোম্পানিতে যোগদানে প্রেরণা জোগানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে তাদের ওপর নির্দেশ ছিল। ১৯১৬ সালের ৩০ আগস্ট কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ম সেনানিবাসে বেঙ্গলি ডবল কোম্পানির সৈন্য ভর্তি কার্যক্রম চালু হয়। ১২ সেপ্টেম্বর বেঙ্গলি ডবল কোম্পানির প্রথম দশ জন সৈনিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য কলকাতা থেকে নওশেরা যাত্রা করে। পরবর্তী সময়ে ভর্তি হওয়া সৈনিকরা বিভিন্ন দফায় নওশেরায় পৌঁছে। নওশেরায় বেঙ্গলি ডবল কোম্পানির প্রশিক্ষণের দায়িত্বে ছিল ৪৬ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট। বেঙ্গলি ডবল কোম্পানির ২২৮ জন সৈনিক নওশেরায় চার মাস প্রশিক্ষণ শেষে ১৯১৭ সালের জানুয়ারি মাসে করাচি পৌঁছে।

বেঙ্গলি ডবল কোম্পানির প্রথম রেজিমেন্ট পূর্ণ হলেও বাংলায় সৈন্যভর্তি কার্যক্রম চলতে থাকে এবং ভর্তিকৃত সৈনিকদের করাচি পাঠানো হয়। করাচিতে ১৬তম রাজপুত, ১০৬ হাজরা এবং ১১৬ মারাঠা রেজিমেন্টের অধীনে ভর্তিকৃত সৈনিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এভাবে বেঙ্গলি ডবল কোম্পানির জনবল বৃদ্ধি করে ১৯১৭ সালের ২৬ জুন বাঙালিদের প্রথম ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়। এ সময় বাঙালি পল্টনের নামকরণ হয় ৪৯তম বেঙ্গলি রেজিমেন্ট বা সংক্ষেপে ৪৯তম বেঙ্গলিজ।

বাঙালি পল্টন বা ৪৯তম বেঙ্গলি রেজিমেন্ট এর প্রথম ব্যাটালিয়ন তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে ১৯১৭ সালের জুলাই মাসের মধ্যে মেসোপটেমিয়ার যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য করাচি ত্যাগ করে এবং বসরা, মাকিনা হয়ে সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি বাগদাদ পৌঁছে। বাঙালি পল্টন ১৯১৮ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত বাগদাদে অবস্থান করে। বাগদাদ অবস্থানকালে বাঙালি পল্টন বিভিন্ন সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনার নিরাপত্তা দায়িত্ব পালন করে। বাগদাদে অবস্থানের শেষের দিকে অসুস্থ হয়ে বেশকিছু সৈন্যের মৃত্যু ঘটে এবং অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ কারণে ৪৯তম বেঙ্গলিজকে বাগদাদ থেকে আজিজিয়া শহরে এবং মার্চের মাঝামাঝি সময়ে কূত-এ পাঠানো হয়। সেখানে অবস্থানকালে সৈনিকদের স্বাস্থ্যগত অবস্থার বিশেষ উন্নতি হয় নি। ব্যাটালিয়নকে অক্টোবরের শেষের দিকে কূত থেকে বসরার সন্নিকটে তানুমাতে পাঠানো হয়। তানুমা, কূত ও আজিজিয়া অবস্থানকালে বেঙ্গলিজ মুলত বিভিন্ন নিরাপত্তা দায়িত্ব পালন করে এবং এর পাশাপাশি সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। ১৯১৮ সালের নভেম্বর মাসে যুদ্ধ বিরতি ঘোষিত হয়। তানুমাতে বাঙালি পল্টন যুদ্ধ পরবর্তী পুনর্বাসন দায়িত্ব পালন করে। কিছু কিছু সৈনিককে বাগদাদসহ অন্যান্য স্থানেও নিয়োগ করা হয়। মেসোপটেমিয়ার যুদ্ধ সমাপ্তির পর ১৯১৯ সালের এপ্রিল মাসে কুর্দিস্থানে বিদ্রোহ দেখা দেয়। এ বিদ্রোহ দমনে বাঙালি ব্যাটালিয়নের ২৩৫ জন সৈনিক অংশগ্রহণ করেন। বাঙালি পল্টন জুন মাসের মাঝামাঝি কুর্দিস্থানের উদ্দেশ্যে তানুমা ত্যাগ করে এবং অপারেশন শেষে সেপ্টেম্বর মাসে তানুমা ফিরে আসে। বাঙালি পল্টন ১৯২০ সালের আগস্ট মাসের মধ্যে তানুমা ত্যাগ করে করাচি হয়ে কলকাতা প্রত্যাবর্তন করে। ১৯২০ সালের ৩০ আগস্ট বাঙালি পল্টন তথা ৪৯তম বেঙ্গলি রেজিমেন্ট ভেঙে দেয়া হয়।

বাঙালি পল্টনের প্রথম ব্যাটালিয়ন ১৯১৭ সালের জুলাই মাসে বাগদাদ চলে গেলে রেজিমেন্টের বাকি সৈনিকরা করাচি অবস্থান করে এবং সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে থাকে। বেঙ্গলিজের এ অংশকে বলা হত ‘করাচি ডেপো’। এছাড়া কলকাতাতেও বাঙালি পল্টনের একটি ডেপো ছিল যাকে ‘কলকাতা ডেপো’ বলা হত। এখানে মূলত ভর্তিকৃত নতুন সৈনিকরা অবস্থান করত। উপরন্তু কিছু সৈনিক করাচি থেকে ছুটিতে আসা-যাওয়ার পথে ও অন্যান্য প্রয়োজনে কলকাতা ডেপোতে অবস্থান করত। ১৯১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পূর্ব বাংলায় খুব বেশি সৈনিক ভর্তি হওয়ার ফলে ঐ মাসে সাময়িকভাবে ঢাকাতেও ডেপো চালু করা হয়। এর নাম ছিল ‘ঢাকা ডেপো’।

বাঙালি পল্টনের ৬৩ জন সদস্যের রোগ-ব্যাধি ও অন্যান্য কারণে মৃত্যু হয়। ১৯২৪ সালের আগস্ট মাসে মৃত সৈনিকদের সম্মানে কলকাতার কলেজ স্কোয়ারে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়। কিছু সৈনিক ও বাঙালি অফিসার মেসোপটেমিয়ায় অবস্থানকালে প্রশংসনীয় কাজের জন্য বিভিন্ন খেতাব ও স্বীকৃতি লাভ করেন। এ স্বীকৃতি সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হয়। ১৯১৯ সালের জুলাই মাসে লন্ডনে ভিক্টরি মার্চ ও পিস সেলিব্রেশন অনুষ্ঠিত হয়। এ অনুষ্ঠানে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে সৈনিক ও অফিসাররা অংশগ্রহণ করেন। ৪৯তম বেঙ্গলি রেজিমেন্ট থেকে একজন ব্রিটিশ ও একজন ভারতীয় অফিসার এবং দু’জন সৈনিক অংশগ্রহণ করেন।

বাঙালি পল্টন কোনও সাধারণ পল্টন হিসেবে গঠিত হয় নি। এ পল্টনে মূলত মধ্যবিত্ত ও শিক্ষিত শ্রেণি বা ভদ্র সমাজের তরুণরা সৈনিক হিসেবে যোগ দেয়। এদের অনেকেই যুদ্ধের পূর্বে উচ্চ বেতনে চাকুরিরত ছিলেন। কেউ কেউ সে সময় গ্র্যাজুয়েট, মাস্টার্স বা ওকালতি পাস করেন। কয়েকজন নওয়াব, জমিদার ও ধনী পরিবারের তরুণও বাঙালি পল্টনে যোগ দেন। বাঙালি পল্টনে উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে ছিলেন সুবেদার মেজর শৈলেন্দ্রনাথ বসু, সুবেদার মেজর কুমার অধিক্রম মজুমদার, জমাদার নওয়াব  খাজা হাবিবুল্লাহ, জমাদার  রণদাপ্রসাদ সাহা, হাবিলদার  কাজী নজরুল ইসলাম, সৈনিক  মাহবুব-উল আলম প্রমুখ। [মুহাম্মদ লুৎফুল হক]