বাঘারপাড়া উপজেলা

বাঘারপাড়া উপজেলা (যশোর জেলা)  আয়তন: ৩০৮.২৯ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°০৮´ থেকে ২৩°২১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°১৩´ থেকে ৮৯°২৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) ও শালিখা উপজেলা, দক্ষিণে নড়াইল সদর ও যশোর সদর উপজেলা, পূর্বে শালিখা ও নড়াইল সদর উপজেলা, পশ্চিমে যশোর সদর উপজেলা।

জনসংখ্যা ২১৬৮৯৭; পুরুষ ১০৭৫৬৮, মহিলা ১০৯৩২৯। মুসলিম ১৮১৩১৯, হিন্দু ৩৫৩২১, খ্রিস্টান ২৫ এবং অন্যান্য ২৩২।

জলাশয় চিত্রা ও ভৈরব নদী এবং আফরা খাল ও দৈতলা খাল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন বাঘারপাড়া থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৫৫ ১৯১ ৮২৯০ ২০৮৬০৭ ৭০৪ ৬২.৩ ৫২.৪
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৩.০৩ ১২ ৮২৯০ ২৭৩৬ ৬২.৩
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
জহুরপুর ৬৬ ৬৮৬৫ ৯৬০৬ ৯৯৫৯ ৪৯.৮
জামদিয়া ৫৭ ৭৭৬৪ ১১৬৬৬ ১১৮১১ ৫০.৯
দরাজহাট ২৮ ৬৩৬৮ ৯৩২৩ ৯২৭৯ ৫২.৮
দোহাকুলা ৪৭ ৮১১২ ১১৪৯৩ ১১৮০৭ ৫৬.৪
ধলগ্রাম ৩৮ ৬৬১০ ৯১৫২ ৯৩৭১ ৫৬.৪
নারিকেলবাড়ীয়া ৭৬ ৮৩৬৪ ১২৫০৪ ১২৭৯০ ৪৭.২
বন্দবিলা ১৯ ৮২৫২ ১৫০৩৩ ১৪৯৭৩ ৫৩.৫
বাসুয়ারী ০৯ ৬২৩৯ ১১৫১০ ১১৭১২ ৫২.২
রায়পুর ৮৫ ৭৮৩৪ ১৩০৮৭ ১৩৫৩১ ৫৩.১

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ জমিদার বাড়ি (তেলকুপ), নীলকুঠির নিদর্শন (জহুরপুর ও পদ্মাবিলা গ্রাম), বড় খুদরা মসজিদ ও কালীমন্দির, নারিকেলবাড়ীয়া কালীমন্দির, দীঘির পাড় মসজিদ (নিত্যানন্দপুর), কাটুরাকান্দি ও প্রেমচারা গ্রামে ২০০ বছরের পুরাতন মসজিদ।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বরে দোহাকুলা গ্রামে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে রাজাকারদের লড়াই হয়। লড়াইতে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৮ ডিসেম্বর সেকান্দারপুর গ্রামে রাজাকারদের সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং ৩০ জন রাজাকার নিহত হয়। ৭ ডিসেম্বর এ উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়।

বিস্তারিত দেখুন বাঘারপাড়া উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৬।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩৪২, মন্দির ১০৪, গির্জা ১, তীর্থস্থান ১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: বড় খুদরা মসজিদ, কাটুরাকান্দি মসজিদ, নারিকেলবাড়ীয়া মসজিদ বন্দবিলা মসজিদ, ঢেপখালী মন্দির, বড় খুদরা মন্দির।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫২.৮%; পুরুষ ৫৪.৭%, মহিলা ৫১.০%। কলেজ ৯, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৬, ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট ১, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯২, কমিউনিটি স্কুল ৩, মাদ্রাসা ৩৪। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: শহীদ সিরাজ উদ্দীন হোসেন ডিগ্রি কলেজ (১৯৭২), বাঘারপাড়া ডিগ্রি কলেজ (১৯৭২), বাঘারপাড়া মহিলা ডিগ্রি কলেজ (১৯৯৮), ভাঙ্গুড়া আইডিয়াল কলেজ (১৯৯৪), বাকড়ী বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৩৫), ধলগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৩৯), ছাতিয়ানতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৪০), নারিকেলবাড়ীয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৪৪), বাঘারপাড়া পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৫৮), চাড়াভিটা মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৭০), কৃষ্ণনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৮৭), চন্ডীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৯৫), পূর্ব পাইকপাড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৩৪), বাঘারপাড়া সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯১০), বাঘারপাড়া সিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৯২২)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান  লাইব্রেরি ২, ক্লাব ৪৩, যাত্রাদল ১, সিনেমা হল ১, নাট্যদল ৩, মহিলা সংগঠন ৩, খেলার মাঠ ৩২।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭২.৪৭%, অকৃষি শ্রমিক ২.২৮%, শিল্প ১.১৬%, ব্যবসা ১১.০৯%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৪৪%, চাকরি ৫.৩৫%, নির্মাণ ০.৬৮%, ধর্মীয় সেবা ০.১২%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৭৫% এবং অন্যান্য ৩.৬৬%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬৯.৪৪%, ভূমিহীন ৩০.৫৬%। শহরে ৬২.৭৫% এবং গ্রামে ৬৯.৮৫% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, সরিষা, আলু, পাট, আখ, মরিচ, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি চিনা, কাউন, তিসি, ভুট্টা।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, জাম, কাঁঠাল, পেঁপে, কলা, লিচু, পেয়ারা, তাল, নারিকেল।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৩৫ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৭০ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪৮২ কিমি; নৌপথ ১২ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ডুলি।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, দারুশিল্প, বাঁশ ও বেত শিল্প, হস্তশিল্প, নকশি কাঁথা।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৬, মেলা ৩। চাড়াভিটা হাট, নারিকেলবাড়ীয়া হাট, ভাঙ্গুড়া হাট, ছাতিয়ানতলা হাট, বসুন্দিয়া হাট, খাজুরা হাট এবং কালুডাঙ্গা বৈশাখী মেলা, কাতলামারী পৌষমেলা, নারিকেলবাড়ীয়া ঝুলন মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  কলা, পেঁপে, কাঁঠাল, পাট।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৫১.২% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৭.৭%, ট্যাপ ০.২% এবং অন্যান্য ২.১%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা উপজেলার ৫৭.১% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩৭.৫% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৫.৪% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৯, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৩, ক্লিনিক ২, কমিউনিটি ক্লিনিক ২৩।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা, পিস ফাউন্ডেশন।  [বিপ্লব সেন]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; বাঘারপাড়া উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।