বাঘ

বাঘ (Bengal Tiger)  Carnivora বর্গের Felidae গোত্রের বৃহত্তম বনবিড়াল। রয়েল বেঙ্গল টাইগার বা বাংলার বাঘ (Panthera tigris tigris) বাংলাদেশের জাতীয় পশু। দেহবর্ণ গাঢ়-হলুদ থেকে লালচে হলুদ, তাতে লম্বা কালো ডোরা, পেছন ও উরুতেই বেশি। পেটের দিক সাদাটে। বাচ্চারাও ডোরাসহ জন্মে। হলুদ রঙের লেজে অনেকগুলি কালো বেড়, আগা কালো। কানের পেছন কালো রঙের, তাতে একটি স্পষ্ট সাদা দাগ। চোখের মণি গোল। নখর থাবার ভিতরে ঢোকে। মাথাসহ দৈর্ঘ্য ১৪০-২৮০ সেমি, লেজ ৬০-১১০ সেমি, কাঁধ পর্যায়ে  উচ্চতা ৯৫-১১০ সেমি। বাঘ ও বাঘিনীর ওজন যথাক্রমে ১৮০-২৮০ এবং ১১৫-১৮৫ কেজি, বাঘিনী আকারেও ছোট। Guinness Book of World Records অনুসারে সবচেয়ে ভারি ওজনের বাঘ হলো ১,০২৫ পাউন্ড ওজনের আমুর বা সাইবেরীয় পুরুষ বাঘ Panthera tigris attaica। সাধারণত সাইবেরীয় বাঘেরাই বেশি ভারি, পুরুষ প্রায়শ ৩ শতাধিক কেজি, আর সুমাত্রার বাঘের (Panthera tigris sumatrae) ওজন মাত্র ১৩০ কেজি।

রয়েল বেঙ্গল টাইগার

বাঘ সাধারণত নিঃসঙ্গ, কখনও জোড়ায় থাকে। প্রধানত নিশাচর, মাঝারি ও বড় আকারের স্তন্যপায়ী মহিষ, হরিণ, বুনো শূকর ও সজারু ইত্যাদি শিকার করে খায়। একসঙ্গে ২-৫টি বাচ্চা প্রসব করে। গর্ভকাল আনুমানিক ১৪-১৫ সপ্তাহ। অধিকাংশ বাচ্চাই ফেব্রুয়ারি-মে মাসের মধ্যে জন্মায়। মায়ের যত্নেই ৪-৫ মাস লালিত-পালিত হয়। বাচ্চারা এক বছর বা আরও বেশি সময় মায়ের সঙ্গে থাকে। বাঘিনী ও বাঘ প্রজননক্ষম হয় যথাক্রমে ৩ ও ৪ বছর বয়সে। বড় আকারের বাঘের দৈনিক মাংস চাহিদা গড়পড়তা ৮-৯ কেজি। নিজের চেয়ে দ্বিগুণ বড় জন্তু শিকার করতে পারে। লভ্য শিকারের সংখ্যার ওপরই একটি এলাকায় বাঘের সংখ্যা নির্ভর করে।

বাঘ অত্যন্ত অভিযোজন দক্ষ জন্তু; উষ্ণমন্ডলীয় অরণ্য, ম্যানগ্রোভ জলাভূমি, পত্রমোচী বন সর্বত্রই বসবাস করতে পারে। নানা জলবায়ুতে উপমহাদেশের অত্যুষ্ণ বনাঞ্চল থেকে রাশিয়ায় তুষারঢাকা হিমশীতল দূরপ্রাচ্যেও বাঘেরা বসবাস করে। এক সময়ে বাংলাদেশের সবগুলি বনেই বাঘ ছিল, এখন আছে শুধুই সুন্দরবনে এবং অত্যন্ত বিপন্ন একটি প্রাণী হিসেবে।

বাঘের ৮টি উপপ্রজাতির মধ্যে ৫টি এখনও জীবিত। বেঙ্গল টাইগার (Panthera tigris tigris) আছে বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, নেপাল, চীন ও পশ্চিম মায়ানমারে; আমুর (সাইবেরীয়) বাঘ (P. tigris attica) সাইবেরিয়া, মাঞ্চুরিয়া ও উত্তর-চীনে; দক্ষিণ-চীনের (আময়) বাঘ (P. tigris ameyensis) কেবল চীনদেশে; সুমাত্রার বাঘ (P. tigris sumatrae) সুমাত্রায়; ইন্দোচীন বাঘ (P. tigris corbetti) কাম্পুচিয়া, চীন, লাওস, মালয়, পূর্ব-মায়ানমার, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে।

বাঘের ৮টি উপপ্রজাতির মধ্যে ৫টি এখনও জীবিত। বেঙ্গল টাইগার (Panthera tigris tigris) আছে বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, নেপাল, চীন ও পশ্চিম মায়ানমারে; আমুর (সাইবেরীয়) বাঘ (P. tigris attica) সাইবেরিয়া, মাঞ্চুরিয়া ও উত্তর-চীনে; দক্ষিণ-চীনের (আময়) বাঘ (P. tigris ameyensis) কেবল চীনদেশে; সুমাত্রার বাঘ (P. tigris sumatrae) সুমাত্রায়; ইন্দোচীন বাঘ (P. tigris corbetti) কাম্পুচিয়া, চীন, লাওস, মালয়, পূর্ব-মায়ানমার, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে। গত পঞ্চাশ বছরে বাঘের যে ৩টি প্রজাতি লোপ পেয়েছে তা হলো জাভার বাঘ (P. tigris sondaica), বালির বাঘ (P. tigris balica) ও কাস্পিয়ান (তুরান/হিরকানীয়) বাঘ (P. tigris virgata)। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বনেজঙ্গলে এখন বাঘের সংখ্যা ৭ হাজারেরও কম বাংলাদেশ (৩৬২), ভুটান (৬৭-৮১), চীন (১১০-১৪০), ভারত (২৫০০-৩৭৫০), মায়ানমার (২৩০-৪৬৫), নেপাল (৯৩-৯৭), রাশিয়া (৩৩০-৩৩৭), ভিয়েতনাম (২০০), কাম্পুচিয়া (১৫০-৩০০), লাওস (অজানা) ও উত্তর কোরিয়া (আনুমানিক ১০), থাইল্যান্ড (২৫০-৫০১), মালয়েশিয়া (৪৯১-৫১০), ইন্দোনেশিয়া (সুমাত্রা,  ৪০০-৫০০)।

বিপন্নতার কারণ আবাসভূমি উচ্ছেদ, খাবারের অভাব, চামড়া ও অন্যান্য প্রত্যঙ্গের জন্য অবৈধ শিকার, বিপজ্জনক হয়ে উঠলে মানুষ কর্তৃক নিধন। সংরক্ষণ পরিস্থিতি: বিপন্ন বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কনভেনশন (CITES) বিধিমালার ১ নং পরিশিষ্টে এবং বাংলাদেশ (বন্যপ্রাণী) (সংরক্ষণ) (সংশোধন) বিধির [BW (P) (A) A] ১৯৭৪-এর অন্তর্ভুক্তি। সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজন অবৈধ শিকার বন্ধের ব্যবস্থা, ভক্ষ্য শিকারগুলির সুরক্ষা ও সংখ্যাবৃদ্ধি, মানুষ-বাঘ সংঘাত বন্ধের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের ক্ষতিপূরণ প্রদান। [মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম]

আরও দেখুন বিড়াল; বন্যপ্রাণী; সুন্দরবন