বাকল্যান্ড বাঁধ
বাকল্যান্ড বাঁধ ঢাকা শহরের দক্ষিণ দিক দিয়ে প্রবহমান বুড়িগঙ্গা নদীর উত্তর তীরে একটি শহর পরিবেষ্টনী বাঁধ। ১৮৬৪ সনে তৎকালীন নগর কমিশনার সি.টি বাকল্যান্ড এই বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করেন। নদীর ঘাট পর্যন্ত কার্গো ও যাত্রীবাহী স্টিমার চলাচল সুগম করার জন্য পাড়ের নিম্নভাগে পলি প্রতিরোধ করা এবং প্লাবন ও ভাঙন থেকে ঢাকা শহর রক্ষা প্রকল্পের অধীনে এই বাঁধ নির্মিত হয়। সর্বসাধারণের চাঁদায় এই প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছিল। জলভাগের দিকে বাঁধের সম্মুখ অংশের শোভাবৃদ্ধি এবং পশ্চাদভাগে প্রমোদ ভ্রমণের জন্য প্রশস্ত তৃণাচ্ছাদিত মনোরম উদ্যানশোভিত স্থান নির্মাণের পরিকল্পনা এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ প্রকল্পের জন্য প্রথম চাঁদাদাতাদের মধ্যে ছিলেন খাজা আব্দুল গণি এবং ভাওয়াল জমিদার কালীনারায়ণ রায়। ঢাকার প্রায় সকল সম্পদশালী লোকের কাছ থেকে চাঁদা সংগ্রহে উল্লেখযোগ্য সাফল্য সত্ত্বেও এই বিশাল প্রকল্পের জন্য তা ছিল অপ্রতুল। বাকল্যান্ড তখন সরকারি সহযোগিতার জন্য ধর্না দেন।
প্রথমে নর্থব্রুক হল ঘাট থেকে ওয়াইজ ঘাট পর্যন্ত বহমান নদীর সম্মুখভাগের অংশে কার্যক্রম শুরু হয় এবং আরও তহবিল প্রাপ্তিসাপেক্ষে পূর্ব ও পশ্চিম দিকে বিস্তারের পরিকল্পনা করা হয়। বাঁধে দুর্গনির্মাণবৎ পাথর এবং উপরিভাগে ইট ব্যবহার করা হয়।
সদর ঘাটের সন্নিকট তীরভূমি সবুজ রাখা হয়, পরে এ স্থানটি একটি উঁচু বেদীসহ ক্ষুদ্র পার্কের রূপ পায়,যেখানে স্টিমারযোগে আগত পদস্থ ব্যক্তিদেরকে অভ্যর্থনা জানানো হতো এবং প্রতিদিন বিকেলে জনসাধারণ স্থানীয় রেজিমেন্টের ব্যান্ডদলের বাদন উপভোগ করত। এই সবুজ তীরভূমিটুকু হয়ে উঠেছিল শহরের অলঙ্কার ও আর্শীবাদস্বরূপ। প্রশস্ত উঁচু প্রমোদস্থলে জনসাধারণ বিকেল-সন্ধ্যায় পদভ্রমণ করত, অবলোকন করত নদীবক্ষে বিচিত্রগতির ব্যস্ত জলযান আর উপভোগ করতে পারত নদীর শীতল বাতাস। ১৮৭০ সালে খাজা আব্দুল গণি ওয়াইজ ঘাট থেকে পশ্চিমদিকের এবং বাবু রূপলাল দাস ও রঘুনাথ দাস নর্থব্রুক হলের কাছ থেকে পূর্বদিকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এইভাবে প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ এই বাঁধ নির্মিত হয় এবং পরবর্তীকালে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মিউনিসিপ্যালিটির কাছে হস্তান্তরিত হয়। [এস.এম মাহফুজুর রহমান]