বাংলাদেশ লেখক শিবির
বাংলাদেশ লেখক শিবির একটি সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে আহমদ শরীফ, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সরদার ফজলুল করিম, হুমায়ুন কবির প্রমুখ প্রগতিশীল লেখক সম্প্রদায়ের উদ্যোগে ‘লেখক সংগ্রাম শিবির’ নামে প্রথম এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে এর নতুন নামকরণ করা হয় ‘বাংলাদেশ লেখক শিবির’। এর মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল দেশের প্রগতিশীল লেখকদের সংগঠিত করে প্রগতিশীল আন্দোলনকে এগিয়ে নেওয়া। এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে লেখক শিবির আলোচনা সভা, গ্রন্থ প্রকাশ ও বিভিন্ন ধরণের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে সংগঠনের নীতিমালা ও গঠনতন্ত্র প্রণীত হয়। সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পরিসর বৃদ্ধির লক্ষ্যে নাট্যশিল্পী, চিত্রশিল্পী, সঙ্গীতশিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীদের জন্য সদস্যপদ উন্মুক্ত করা হয়। পরে শিবিরের ছত্রছায়ায় দেশের সকল সাংস্কৃতিক সংগঠনকে সমন্বিত করে গঠিত হয় ‘গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ফ্রন্ট’।
আশির দশকে দেশের বিভিন্ন স্থানে লেখক শিবিরের ষাটটি শাখা গড়ে ওঠে। ১৯৭২ সালে শিবিরের প্রথম সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির গুপ্তঘাতকের হাতে নিহত হলে তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে ‘হুমায়ুন কবির স্মৃতি-পুরস্কার’ প্রবর্তিত হয়। এযাবৎ পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন আরজ আলী মাতুববর, হুমায়ূন আহমেদ, কায়েস আহমেদ, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, হাসান আজিজুল হক ও শওকত আলী।
আশির দশকেই লেখক শিবিরের উদ্যোগে সাংস্কৃতিক আন্দোলন শীর্ষক একটি পত্রিকা প্রকাশিত হয়। ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ত্রৈমাসিক পত্রিকা তৃণমূল। স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলনে লেখক শিবির বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। বিভিন্ন সময়ে শিবিরের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন যথাক্রমে আহমদ শরীফ (১৯৭০-৮০), বদরুদ্দীন ওমর (১৯৮১-৮৬), হাসান আজিজুল হক (১৯৮৬-৯৩) ও আব্দুল মতিন খান (১৯১৩-৯৬); সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন হুমায়ুন কবির (১৯৭০-৭২), শাহরিয়ার কবির (১৯৭৬-৮০), আবরার আহমদ (১৯৮১-৮৪), আনু মুহম্মদ (১৯৮৪-৯৩) ও মনিরুল ইসলাম (১৯৯৩-৯৯)। এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: বাংলাদেশের উৎপাদন পদ্ধতি, বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত, বাংলাদেশের অর্থনীতির সংকট ও বাংলাদেশের শিক্ষা: অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। [আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ]