বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
২ নং লাইন: ২ নং লাইন:
'''বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল''' (বিএনপি)  বাংলাদেশের অন্যতম  শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক দল। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কর্তৃক বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠিত হয়। জিয়াউর রহমান তাঁর শাসনকে অসামরিকীকরণের অভিপ্রায়ে ১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রাক্কালে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) নামে একটি দল গঠন করেন। উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুল সাত্তার ছিলেন এর আহবায়ক। জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে, বিশেষ করে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দলের কর্মকান্ডে অনুপ্রাণিত হয়ে এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিবেচনায় রেখে ঢাকার রমনা ময়দানে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠনের ঘোষণা দেন। অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রথম মহাসচিব। জিয়াউর রহমান ছিলেন এর আহবায়ক।
'''বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল''' (বিএনপি)  বাংলাদেশের অন্যতম  শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক দল। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কর্তৃক বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠিত হয়। জিয়াউর রহমান তাঁর শাসনকে অসামরিকীকরণের অভিপ্রায়ে ১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রাক্কালে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) নামে একটি দল গঠন করেন। উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুল সাত্তার ছিলেন এর আহবায়ক। জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে, বিশেষ করে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দলের কর্মকান্ডে অনুপ্রাণিত হয়ে এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিবেচনায় রেখে ঢাকার রমনা ময়দানে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠনের ঘোষণা দেন। অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রথম মহাসচিব। জিয়াউর রহমান ছিলেন এর আহবায়ক।


'''সদস্য পদ '''''' '''বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের জন্ম হয় তদানীন্তন বাংলাদেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দলের জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ নেতাকর্মীদের সম্মিলনে। মুক্তদ্বার নীতি অনুসরণ করে দলকে ব্যাপকভিত্তিক একটি জাতীয়তাবাদী দল হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষে জিয়াউর রহমান দক্ষিণপন্থী, বামপন্থী ও মধ্যপন্থী মতাদর্শের নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে দল গড়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ১৯৭৯ সালে জাতীয় সংসদে নির্বাচিত বিএনপি দলীয় সদস্যদের ১৬% পূর্বে ছিলেন মুসলিম লীগের, ১৫% ন্যাপের (ভাসানী), ৯% আওয়ামী লীগ, ৩% ইউনাইটেড পিপলস পার্টির, ২% গণতান্ত্রিক দল, ৬% ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন, ৬% অন্যান্য দল থেকে আগত নেতাকর্মী। ৪০% ছিলেন অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
'''সদস্য পদ'' বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের জন্ম হয় তদানীন্তন বাংলাদেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দলের জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ নেতাকর্মীদের সম্মিলনে। মুক্তদ্বার নীতি অনুসরণ করে দলকে ব্যাপকভিত্তিক একটি জাতীয়তাবাদী দল হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষে জিয়াউর রহমান দক্ষিণপন্থী, বামপন্থী ও মধ্যপন্থী মতাদর্শের নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে দল গড়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ১৯৭৯ সালে জাতীয় সংসদে নির্বাচিত বিএনপি দলীয় সদস্যদের ১৬% পূর্বে ছিলেন মুসলিম লীগের, ১৫% ন্যাপের (ভাসানী), ৯% আওয়ামী লীগ, ৩% ইউনাইটেড পিপলস পার্টির, ২% গণতান্ত্রিক দল, ৬% ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন, ৬% অন্যান্য দল থেকে আগত নেতাকর্মী। ৪০% ছিলেন অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।


'''উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য''''''  দেশের''' অর্থনৈতিক অগ্রগতি, জনসাধারণের সুখ ও সমৃদ্ধি, রাষ্ট্রীয় সংহতি সুদৃঢ়করণ ও সংরক্ষণের জন্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল জিয়াউর রহমান কর্তৃক ঘোষিত ১৯ দফা কর্মসূচিকে লক্ষ হিসেবে গ্রহণ করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, দেশের স্বাধীনতা, অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা; সংবিধানের চারটি মূলনীতি অর্থাৎ গণতন্ত্র, সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা, জাতীয়তাবাদ এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার অর্থে সমাজতন্ত্র;  বাংলাদেশকে একটি আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে গড়ে তোলা; জনসংখ্যা বিস্ফোরণ রোধ করা; দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা এবং দারিদ্রে্যর অভিশাপ থেকে জনগণকে মুক্তি দেয়া; দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেসরকারি উদ্যোগকে উৎসাহ দান; ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-জাতিসত্তা নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সমন্বয়ে জাতীয় ঐক্য সুদৃঢ় করা।
''উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য''  দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি, জনসাধারণের সুখ ও সমৃদ্ধি, রাষ্ট্রীয় সংহতি সুদৃঢ়করণ ও সংরক্ষণের জন্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল জিয়াউর রহমান কর্তৃক ঘোষিত ১৯ দফা কর্মসূচিকে লক্ষ হিসেবে গ্রহণ করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, দেশের স্বাধীনতা, অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা; সংবিধানের চারটি মূলনীতি অর্থাৎ গণতন্ত্র, সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা, জাতীয়তাবাদ এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার অর্থে সমাজতন্ত্র;  বাংলাদেশকে একটি আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে গড়ে তোলা; জনসংখ্যা বিস্ফোরণ রোধ করা; দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা এবং দারিদ্রে্যর অভিশাপ থেকে জনগণকে মুক্তি দেয়া; দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেসরকারি উদ্যোগকে উৎসাহ দান; ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-জাতিসত্তা নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সমন্বয়ে জাতীয় ঐক্য সুদৃঢ় করা।


সংক্ষেপে, জিয়াউর রহমানের ভাষ্য অনুযায়ী জাতীয়তাবাদী দলের প্রধান লক্ষ ছিল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য এবং জনগণের মধ্যে স্বনির্ভরতার চেতনা সৃষ্টি। ১৯-দফা কর্মসূচি ছিল দলের মৌল আদর্শ। রাষ্ট্রনীতির চারটি মৌলিক আদর্শ তথা গণতন্ত্র, সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস, জাতীয়তাবাদ এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার অর্থে সমাজতন্ত্র, এই ছিল দলীয় কর্মসূচির মর্মবাণী।
সংক্ষেপে, জিয়াউর রহমানের ভাষ্য অনুযায়ী জাতীয়তাবাদী দলের প্রধান লক্ষ ছিল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য এবং জনগণের মধ্যে স্বনির্ভরতার চেতনা সৃষ্টি। ১৯-দফা কর্মসূচি ছিল দলের মৌল আদর্শ। রাষ্ট্রনীতির চারটি মৌলিক আদর্শ তথা গণতন্ত্র, সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস, জাতীয়তাবাদ এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার অর্থে সমাজতন্ত্র, এই ছিল দলীয় কর্মসূচির মর্মবাণী।


'''পটভূমি'''  রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রতিষ্ঠাকালে জাতি ছিল বহুধা বিভক্ত। এই বিভক্তি শুধুমাত্র ডান, বাম বা মধ্য ইত্যাকার রাজনৈতিক দর্শনের ভিত্তিতেই সৃষ্টি হয় নি, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন বা করেন নি অথবা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ও বিপক্ষের শক্তি হিসেবেও তা প্রকট হয়ে উঠেছিল। এই বিভক্তি শুধু রাজনৈতিক মহলেই যে সীমিত ছিল তা নয়, জাতীয় পর্যায়ে তা বিস্তৃত হয়ে পড়ে। কার্যত ছাত্রসমাজ, শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ, পেশাজীবী-বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতিসেবী, এমন কী প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মধ্যেও তা বিস্তৃতি লাভ করে। সামরিক বাহিনীতেও তার প্রভাব পড়ে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের অন্যতম লক্ষ ছিল এই বিভাজন দূরীকরণ এবং সমগ্র জাতি যেন একক সত্তা হিসেবে কাজ করতে পারে সেজন্য বিবদমান গোষ্ঠি, উপদল ও সামাজিক শক্তিগুলোকে একত্রীকরণ।
''পটভূমি''  রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রতিষ্ঠাকালে জাতি ছিল বহুধা বিভক্ত। এই বিভক্তি শুধুমাত্র ডান, বাম বা মধ্য ইত্যাকার রাজনৈতিক দর্শনের ভিত্তিতেই সৃষ্টি হয় নি, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন বা করেন নি অথবা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ও বিপক্ষের শক্তি হিসেবেও তা প্রকট হয়ে উঠেছিল। এই বিভক্তি শুধু রাজনৈতিক মহলেই যে সীমিত ছিল তা নয়, জাতীয় পর্যায়ে তা বিস্তৃত হয়ে পড়ে। কার্যত ছাত্রসমাজ, শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ, পেশাজীবী-বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতিসেবী, এমন কী প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মধ্যেও তা বিস্তৃতি লাভ করে। সামরিক বাহিনীতেও তার প্রভাব পড়ে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের অন্যতম লক্ষ ছিল এই বিভাজন দূরীকরণ এবং সমগ্র জাতি যেন একক সত্তা হিসেবে কাজ করতে পারে সেজন্য বিবদমান গোষ্ঠি, উপদল ও সামাজিক শক্তিগুলোকে একত্রীকরণ।


জন্মলগ্ন থেকেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রধানত জাতীয় পর্যায়ে ঐকমত্য সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এর কার্যক্রম শুরু করে। বাংলাদেশে স্বাধীনতা-পরবর্তী সরকারের অনুসৃত নীতি, বিশেষ করে বাংলাদেশের ভারতমুখিনতা এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের পরিবর্তে ইন্দো-সোভিয়েত অক্ষের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পৃক্ততা পরিহার করে বাংলাদেশকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দেবার নীতি অনুসরণ করতে শুরু করে। এই নীতিকে অনেকেই বলেছেন ‘নিরপেক্ষ’ এবং ‘স্বাধীন’ পররাষ্ট্র নীতি।
জন্মলগ্ন থেকেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রধানত জাতীয় পর্যায়ে ঐকমত্য সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এর কার্যক্রম শুরু করে। বাংলাদেশে স্বাধীনতা-পরবর্তী সরকারের অনুসৃত নীতি, বিশেষ করে বাংলাদেশের ভারতমুখিনতা এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের পরিবর্তে ইন্দো-সোভিয়েত অক্ষের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পৃক্ততা পরিহার করে বাংলাদেশকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দেবার নীতি অনুসরণ করতে শুরু করে। এই নীতিকে অনেকেই বলেছেন ‘নিরপেক্ষ’ এবং ‘স্বাধীন’ পররাষ্ট্র নীতি।


'''সাংগঠনিক কাঠামো  '''বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে যে, এই দল দেশের প্রাথমিক স্তর অর্থাৎ গ্রাম থেকে সংগঠিত হয়ে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে। দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে ১১-সদস্য বিশিষ্ট স্থায়ী কমিটি। সদস্যগণ দলের চেয়ারম্যান কর্তৃক নিযুক্ত হবেন। এর নিচে রয়েছে জাতীয় নির্বাহী কমিটি। জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সংখ্যা ১৪০। তার নিচে রয়েছে ৭৫টি জেলা কমিটি। জেলা কমিটির তত্ত্বাবধানে রয়েছে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে বহুসংখ্যক কমিটি। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এই সকল কমিটি গঠিত হবে।
''সাংগঠনিক কাঠামো'' বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে যে, এই দল দেশের প্রাথমিক স্তর অর্থাৎ গ্রাম থেকে সংগঠিত হয়ে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে। দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে ১১-সদস্য বিশিষ্ট স্থায়ী কমিটি। সদস্যগণ দলের চেয়ারম্যান কর্তৃক নিযুক্ত হবেন। এর নিচে রয়েছে জাতীয় নির্বাহী কমিটি। জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সংখ্যা ১৪০। তার নিচে রয়েছে ৭৫টি জেলা কমিটি। জেলা কমিটির তত্ত্বাবধানে রয়েছে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে বহুসংখ্যক কমিটি। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এই সকল কমিটি গঠিত হবে।


'''দলের সমর্থন ভিত্তি  '''বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের নিকট জনপ্রিয় করে তোলার জন্য নেতৃবৃন্দ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত এই দলকে বিস্তৃত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কেন্দ্র থেকে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, এমন কী গ্রাম পর্যন্ত এর সমর্থন ভিত্তি প্রসারিত হয়। তাছাড়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের বিভিন্ন সহযোগী ফ্রন্টও রয়েছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, জাতীয়তাবাদী যুবদল, জাতীয়তাবাদী মহিলা দল, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল, জাতীয়তাবাদী কৃষক দল, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। প্রথমে এই সংগঠনগুলি ছিল জাতীয়তাবাদী দলের অংগ সংগঠন। বর্তমানে এগুলি মূল দলের সহযোগী সংগঠন।
''দলের সমর্থন ভিত্তি'' বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের নিকট জনপ্রিয় করে তোলার জন্য নেতৃবৃন্দ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত এই দলকে বিস্তৃত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কেন্দ্র থেকে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, এমন কী গ্রাম পর্যন্ত এর সমর্থন ভিত্তি প্রসারিত হয়। তাছাড়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের বিভিন্ন সহযোগী ফ্রন্টও রয়েছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, জাতীয়তাবাদী যুবদল, জাতীয়তাবাদী মহিলা দল, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল, জাতীয়তাবাদী কৃষক দল, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। প্রথমে এই সংগঠনগুলি ছিল জাতীয়তাবাদী দলের অংগ সংগঠন। বর্তমানে এগুলি মূল দলের সহযোগী সংগঠন।


দলটি তুলনামূলকভাবে নতুন। এর নেতৃত্বে ছিলেন অনেকটা তরুণ ও মধ্যবয়সী ব্যক্তিবর্গ। তাই তরুণদের নিকট এর আবেদন প্রচুর। ব্যবসা-বাণিজ্যে বেসরকারি উদ্যোগকে সম্পৃক্ত করার জন্য দেশের ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতিরাও এই দলের প্রতি আকৃষ্ট। জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা এবং স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণের ফলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন দেশের বুদ্ধিজীবী মহল। ইসলামী মূল্যবোধের জন্য দেশের বিরাট সংখ্যক আলেম-ওলামাও রয়েছেন এর সমর্থকরূপে। এই দলের সমর্থন ভিত্তি গ্রামাঞ্চলে যেমন শক্তিশালী, তেমনি সুদৃঢ় শহরাঞ্চলেও।
দলটি তুলনামূলকভাবে নতুন। এর নেতৃত্বে ছিলেন অনেকটা তরুণ ও মধ্যবয়সী ব্যক্তিবর্গ। তাই তরুণদের নিকট এর আবেদন প্রচুর। ব্যবসা-বাণিজ্যে বেসরকারি উদ্যোগকে সম্পৃক্ত করার জন্য দেশের ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতিরাও এই দলের প্রতি আকৃষ্ট। জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা এবং স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণের ফলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন দেশের বুদ্ধিজীবী মহল। ইসলামী মূল্যবোধের জন্য দেশের বিরাট সংখ্যক আলেম-ওলামাও রয়েছেন এর সমর্থকরূপে। এই দলের সমর্থন ভিত্তি গ্রামাঞ্চলে যেমন শক্তিশালী, তেমনি সুদৃঢ় শহরাঞ্চলেও।


'''দলের সাফল্য  '''বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের অর্জন অনেক। জিয়াউর রহমানের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে বহু দলীয় গণতন্ত্রের পথ প্রশস্ত হয়। গণতন্ত্রকে কার্যকর করার লক্ষে দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ক্ষেত্র তৈরি হয়। দেশের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে পেশাদারিত্বের সূচনা নতুনভাবে অনুভূত ও কার্যকর হতে থাকে। জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার লক্ষে নতুন নতুন কর্মসূচি গৃহীত হতে থাকে। জাতীয় অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চারের লক্ষে বেসরকারি উদ্যোগকে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত করা হয় উৎপাদন ব্যবস্থায়। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে থাকে। দক্ষিণ এশিয়ায় পারস্পরিক সহযোগিতার সূত্র প্রতিষ্ঠার সূচনাও হয় এই সময়কালে।
''দলের সাফল্য'' বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের অর্জন অনেক। জিয়াউর রহমানের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে বহু দলীয় গণতন্ত্রের পথ প্রশস্ত হয়। গণতন্ত্রকে কার্যকর করার লক্ষে দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ক্ষেত্র তৈরি হয়। দেশের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে পেশাদারিত্বের সূচনা নতুনভাবে অনুভূত ও কার্যকর হতে থাকে। জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার লক্ষে নতুন নতুন কর্মসূচি গৃহীত হতে থাকে। জাতীয় অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চারের লক্ষে বেসরকারি উদ্যোগকে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত করা হয় উৎপাদন ব্যবস্থায়। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে থাকে। দক্ষিণ এশিয়ায় পারস্পরিক সহযোগিতার সূত্র প্রতিষ্ঠার সূচনাও হয় এই সময়কালে।


১৯৭৮ সালের ৩ জুনে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হলে বিচারপতি আবদুস সাত্তার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসাবে ১৯৮১ সালের ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ১৪০টি আসন লাভের মাধ্যমে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আবির্ভূত হয় এবং সরকার গঠন করে। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ৩০০টি আসনের ১৯৩টি আসন লাভ করে পুনরায় ক্ষমতাসীন হয়। ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনের পর বিএনপির নেতা জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতার ভূমিকা পালন করেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নবম সংসদের  সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল অনেকটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ৩০০ আসনের মধ্যে ৩০টি আসনে জয়লাভ করে বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় সংসদে ভূমিকা পালন করছে।  [এমাজউদ্দীন আহমদ]
১৯৭৮ সালের ৩ জুনে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হলে বিচারপতি আবদুস সাত্তার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসাবে ১৯৮১ সালের ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ১৪০টি আসন লাভের মাধ্যমে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আবির্ভূত হয় এবং সরকার গঠন করে। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ৩০০টি আসনের ১৯৩টি আসন লাভ করে পুনরায় ক্ষমতাসীন হয়। ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনের পর বিএনপির নেতা জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতার ভূমিকা পালন করেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নবম সংসদের  সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল অনেকটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ৩০০ আসনের মধ্যে ৩০টি আসনে জয়লাভ করে বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় সংসদে ভূমিকা পালন করছে।  [এমাজউদ্দীন আহমদ]


[[en:Bangladesh Nationalist Party]]
[[en:Bangladesh Nationalist Party]]
[[en:Bangladesh Nationalist Party]]
[[en:Bangladesh Nationalist Party]]


[[en:Bangladesh Nationalist Party]]
[[en:Bangladesh Nationalist Party]]

০৬:৪৫, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)  বাংলাদেশের অন্যতম  শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক দল। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কর্তৃক বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠিত হয়। জিয়াউর রহমান তাঁর শাসনকে অসামরিকীকরণের অভিপ্রায়ে ১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রাক্কালে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) নামে একটি দল গঠন করেন। উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুল সাত্তার ছিলেন এর আহবায়ক। জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে, বিশেষ করে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দলের কর্মকান্ডে অনুপ্রাণিত হয়ে এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিবেচনায় রেখে ঢাকার রমনা ময়দানে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠনের ঘোষণা দেন। অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রথম মহাসচিব। জিয়াউর রহমান ছিলেন এর আহবায়ক।

'সদস্য পদ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের জন্ম হয় তদানীন্তন বাংলাদেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দলের জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ নেতাকর্মীদের সম্মিলনে। মুক্তদ্বার নীতি অনুসরণ করে দলকে ব্যাপকভিত্তিক একটি জাতীয়তাবাদী দল হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষে জিয়াউর রহমান দক্ষিণপন্থী, বামপন্থী ও মধ্যপন্থী মতাদর্শের নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে দল গড়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ১৯৭৯ সালে জাতীয় সংসদে নির্বাচিত বিএনপি দলীয় সদস্যদের ১৬% পূর্বে ছিলেন মুসলিম লীগের, ১৫% ন্যাপের (ভাসানী), ৯% আওয়ামী লীগ, ৩% ইউনাইটেড পিপলস পার্টির, ২% গণতান্ত্রিক দল, ৬% ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন, ৬% অন্যান্য দল থেকে আগত নেতাকর্মী। ৪০% ছিলেন অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।

উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য  দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি, জনসাধারণের সুখ ও সমৃদ্ধি, রাষ্ট্রীয় সংহতি সুদৃঢ়করণ ও সংরক্ষণের জন্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল জিয়াউর রহমান কর্তৃক ঘোষিত ১৯ দফা কর্মসূচিকে লক্ষ হিসেবে গ্রহণ করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, দেশের স্বাধীনতা, অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা; সংবিধানের চারটি মূলনীতি অর্থাৎ গণতন্ত্র, সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা, জাতীয়তাবাদ এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার অর্থে সমাজতন্ত্র;  বাংলাদেশকে একটি আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে গড়ে তোলা; জনসংখ্যা বিস্ফোরণ রোধ করা; দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা এবং দারিদ্রে্যর অভিশাপ থেকে জনগণকে মুক্তি দেয়া; দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেসরকারি উদ্যোগকে উৎসাহ দান; ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-জাতিসত্তা নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সমন্বয়ে জাতীয় ঐক্য সুদৃঢ় করা।

সংক্ষেপে, জিয়াউর রহমানের ভাষ্য অনুযায়ী জাতীয়তাবাদী দলের প্রধান লক্ষ ছিল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য এবং জনগণের মধ্যে স্বনির্ভরতার চেতনা সৃষ্টি। ১৯-দফা কর্মসূচি ছিল দলের মৌল আদর্শ। রাষ্ট্রনীতির চারটি মৌলিক আদর্শ তথা গণতন্ত্র, সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস, জাতীয়তাবাদ এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার অর্থে সমাজতন্ত্র, এই ছিল দলীয় কর্মসূচির মর্মবাণী।

পটভূমি  রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রতিষ্ঠাকালে জাতি ছিল বহুধা বিভক্ত। এই বিভক্তি শুধুমাত্র ডান, বাম বা মধ্য ইত্যাকার রাজনৈতিক দর্শনের ভিত্তিতেই সৃষ্টি হয় নি, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন বা করেন নি অথবা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ও বিপক্ষের শক্তি হিসেবেও তা প্রকট হয়ে উঠেছিল। এই বিভক্তি শুধু রাজনৈতিক মহলেই যে সীমিত ছিল তা নয়, জাতীয় পর্যায়ে তা বিস্তৃত হয়ে পড়ে। কার্যত ছাত্রসমাজ, শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ, পেশাজীবী-বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতিসেবী, এমন কী প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মধ্যেও তা বিস্তৃতি লাভ করে। সামরিক বাহিনীতেও তার প্রভাব পড়ে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের অন্যতম লক্ষ ছিল এই বিভাজন দূরীকরণ এবং সমগ্র জাতি যেন একক সত্তা হিসেবে কাজ করতে পারে সেজন্য বিবদমান গোষ্ঠি, উপদল ও সামাজিক শক্তিগুলোকে একত্রীকরণ।

জন্মলগ্ন থেকেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রধানত জাতীয় পর্যায়ে ঐকমত্য সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এর কার্যক্রম শুরু করে। বাংলাদেশে স্বাধীনতা-পরবর্তী সরকারের অনুসৃত নীতি, বিশেষ করে বাংলাদেশের ভারতমুখিনতা এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের পরিবর্তে ইন্দো-সোভিয়েত অক্ষের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পৃক্ততা পরিহার করে বাংলাদেশকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দেবার নীতি অনুসরণ করতে শুরু করে। এই নীতিকে অনেকেই বলেছেন ‘নিরপেক্ষ’ এবং ‘স্বাধীন’ পররাষ্ট্র নীতি।

সাংগঠনিক কাঠামো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে যে, এই দল দেশের প্রাথমিক স্তর অর্থাৎ গ্রাম থেকে সংগঠিত হয়ে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে। দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে ১১-সদস্য বিশিষ্ট স্থায়ী কমিটি। সদস্যগণ দলের চেয়ারম্যান কর্তৃক নিযুক্ত হবেন। এর নিচে রয়েছে জাতীয় নির্বাহী কমিটি। জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সংখ্যা ১৪০। তার নিচে রয়েছে ৭৫টি জেলা কমিটি। জেলা কমিটির তত্ত্বাবধানে রয়েছে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে বহুসংখ্যক কমিটি। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এই সকল কমিটি গঠিত হবে।

দলের সমর্থন ভিত্তি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের নিকট জনপ্রিয় করে তোলার জন্য নেতৃবৃন্দ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত এই দলকে বিস্তৃত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কেন্দ্র থেকে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, এমন কী গ্রাম পর্যন্ত এর সমর্থন ভিত্তি প্রসারিত হয়। তাছাড়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের বিভিন্ন সহযোগী ফ্রন্টও রয়েছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, জাতীয়তাবাদী যুবদল, জাতীয়তাবাদী মহিলা দল, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল, জাতীয়তাবাদী কৃষক দল, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। প্রথমে এই সংগঠনগুলি ছিল জাতীয়তাবাদী দলের অংগ সংগঠন। বর্তমানে এগুলি মূল দলের সহযোগী সংগঠন।

দলটি তুলনামূলকভাবে নতুন। এর নেতৃত্বে ছিলেন অনেকটা তরুণ ও মধ্যবয়সী ব্যক্তিবর্গ। তাই তরুণদের নিকট এর আবেদন প্রচুর। ব্যবসা-বাণিজ্যে বেসরকারি উদ্যোগকে সম্পৃক্ত করার জন্য দেশের ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতিরাও এই দলের প্রতি আকৃষ্ট। জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা এবং স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণের ফলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন দেশের বুদ্ধিজীবী মহল। ইসলামী মূল্যবোধের জন্য দেশের বিরাট সংখ্যক আলেম-ওলামাও রয়েছেন এর সমর্থকরূপে। এই দলের সমর্থন ভিত্তি গ্রামাঞ্চলে যেমন শক্তিশালী, তেমনি সুদৃঢ় শহরাঞ্চলেও।

দলের সাফল্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের অর্জন অনেক। জিয়াউর রহমানের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে বহু দলীয় গণতন্ত্রের পথ প্রশস্ত হয়। গণতন্ত্রকে কার্যকর করার লক্ষে দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ক্ষেত্র তৈরি হয়। দেশের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে পেশাদারিত্বের সূচনা নতুনভাবে অনুভূত ও কার্যকর হতে থাকে। জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার লক্ষে নতুন নতুন কর্মসূচি গৃহীত হতে থাকে। জাতীয় অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চারের লক্ষে বেসরকারি উদ্যোগকে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত করা হয় উৎপাদন ব্যবস্থায়। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে থাকে। দক্ষিণ এশিয়ায় পারস্পরিক সহযোগিতার সূত্র প্রতিষ্ঠার সূচনাও হয় এই সময়কালে।

১৯৭৮ সালের ৩ জুনে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হলে বিচারপতি আবদুস সাত্তার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসাবে ১৯৮১ সালের ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ১৪০টি আসন লাভের মাধ্যমে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আবির্ভূত হয় এবং সরকার গঠন করে। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ৩০০টি আসনের ১৯৩টি আসন লাভ করে পুনরায় ক্ষমতাসীন হয়। ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনের পর বিএনপির নেতা জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতার ভূমিকা পালন করেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নবম সংসদের  সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল অনেকটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ৩০০ আসনের মধ্যে ৩০টি আসনে জয়লাভ করে বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় সংসদে ভূমিকা পালন করছে।  [এমাজউদ্দীন আহমদ]