বাংলাদেশ গ্রন্থাগার সমিতি

বাংলাদেশ গ্রন্থাগার সমিতি গ্রন্থাগার ও গ্রন্থাগারিকদের জাতীয় সংগঠন যা ১৯৫৬ সালের জুলাই মাসে পাকিস্তান গ্রন্থাগার সমিতি (পাকিস্তান লাইব্রেরি অ্যাসোসিয়েশন) নামে প্রতিষ্ঠি হয়। ১৯৫৪ সালের জুলাই মাসে ঢাকার পলাশী ব্যারাকে একটি গ্রন্থাগার সমিতি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্যে অন্যতম আবদুর রহমান মৃধা, এ.ই.এম শামসুল হক, রকিব হোসাইন, সিদ্দিক আহমেদ চৌধুরী, জামিল খান, খন্দকার আবদুর রব এবং তোফাজ্জল হোসেন। পরের বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের প্রধান এবং খন্ডকালীন গ্রন্থাগারিক ড. নাফিস আহমেদের নেতৃত্বে একটি অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা ছিলেন আহমদ হোসাইন, আবদুর রহমান মৃধা, রকিব হোসাইন, এ.এম মোতাহার আলী খান এবং নার্গিস জাফর। ১৯৫৬ সালের জানুয়ারি মাসে প্রস্তাবিত পূর্ব পাকিস্তান লাইব্রেরি অ্যাসোসিয়েশনের খসড়া গঠনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য তিন সদস্যের একটি উপকমিটি গঠন করা হয়। আহমদ হোসাইন, আবদুর রহমান মৃধা ও রকিব হোসাইনকে নিয়ে গঠিত এই কমিটিকে সহায়তা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের রিডার শামসুজ্জামান আনসারী। তাঁদের সুপারিশের ভিত্তিতে গঠিত হয় পাকিস্তান গ্রন্থাগার সমিতি। ১৯৫৭ সালের ৩০ জুন ঢাকার ইউএসআইএস মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত প্রথম বার্ষিক সাধারণ সভায় সমিতির খসড়া সংবিধান অনুমোদিত হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর সংগঠনটির নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ গ্রন্থাগার সমিতি। ১৯৭৬ সালে সংগঠনটি আন্তর্জাতিক লাইব্রেরি অ্যাসোসিয়েশন (ইফলা) ও কমনওয়েলথ লাইব্রেরি অ্যাসোসিয়েশনের (কমলা) স্বীকৃতি অর্জন করে।

১৯৫৭ সালের বার্ষিক সাধারণ সভায় গঠিত সমিতির প্রথম কার্যকরী পরিষদের সভাপতি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন গ্রন্থাগারিক মো. সিদ্দিক খান, সম্পাদকের দায়িত্ব পান ইউএসআইএসের প্রধান গ্রন্থাগারিক রকিব হোসাইন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সহকারী গ্রন্থাগারিক আবদুর রহমান মৃধা নির্বাচিত হয়েছিলেন কোষাধ্যক্ষ। কমিটির সদস্য সংখ্যা ছিল ১৫। বর্তমানে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্য সংখ্যা ২১। সভাপতি, মহাসচিব ও কোষাধ্যক্ষ ছাড়াও কমিটিতে থাকেন তিনজন সহ-সভাপতি, একজন যুগ্ম মহাসচিব, একজন সাংগঠনিক সম্পাদকসহ মোট চারজন সম্পাদক এবং ১০ জন কাউন্সিলর। কাউন্সিলরদের ছয়টি পদ দেশের ছয়টি বিভাগের জন্য সংরক্ষিত। সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভায় তিন বছরের জন্য এ কমিটি নির্বাচিত হয়ে থাকে।

বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) জনসাধারণের মধ্যে গ্রন্থাগার সেবার উন্নতি ঘটানো, গ্রন্থাগার সেবার জন্য প্রশিক্ষণ ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা, দেশের বাইরে অবস্থিত গ্রন্থাগারগুলির সঙ্গে পারস্পরিক স্বার্থে যোগাযোগ স্থাপন ও গ্রন্থাগার পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের পেশাগত অবস্থানের উন্নতি সাধনের লক্ষ্য নিয়ে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তারা দেশের গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করে আসছে। গ্রন্থাগার বিজ্ঞানে প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি এর মধ্যে অন্যতম। ১৯৫৮ সালের অক্টোবর মাসে পূর্ব পাকিস্তান গ্রন্থাগার সমিতির উদ্যোগে ঢাকার কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরিতে ছয় মাসের একটি সার্টিফিকেট কোর্স চালু করা হয়। ১৯৫৯-৬০ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রন্থাগার বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা কোর্স চালুর আগে এটাই ছিল এ দেশে গ্রন্থাগার বিজ্ঞানে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণের একমাত্র প্রতিষ্ঠান। ঢাকার বাইরে ১৯৭৩ সালে সর্বপ্রথম রাজশাহীতে এ সার্টিফিকেট কোর্স চালু করা হয়। বর্তমানে দেশের বিভাগীয় শহরগুলিসহ বড় বড় জেলা শহরগুলিতেও সমিতির উদ্যোগে এ কোর্স পরিচালিত হয়। এছাড়া সমিতি ঢাকায় স্থাপিত ইনস্টিটিউট অব লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্স (আইএলআইএস) নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে গ্রন্থাগার বিজ্ঞানে ডিপ্লোমা কোর্সও পরিচালনা করে থাকে।

পূর্ব পাকিস্তান লাইব্রেরি অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে ১৯৬৬ সালে ইস্টার্ন লাইব্রেরিয়ান নামে একটি সমৃদ্ধ জার্নাল প্রকাশ করা হয়। ১৯৮৯ সাল থেকে সমিতির মুখপত্র উপাত্ত নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে গ্রন্থাগার বিজ্ঞান বিষয়ক নানা সেমিনার-সিম্পোজিয়াম ও প্রশিক্ষণ কোর্স আয়োজনের পাশাপাশি দেশের গ্রন্থাগার ও গ্রন্থাগারিকদের নানা দাবি আদায়েও সংগঠনটি কাজ করে থাকে। [মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান]