বাংলাদেশ গেজেট
বাংলাদেশ গেজেট নিয়মিত প্রকাশিত বিশেষ সরকারি প্রকাশনা, যাতে পাবলিক সার্ভিসে নিয়োগ, পদায়ন এবং প্রশাসনিক আদেশসমূহ ঘোষণা করা হয়। এছাড়াও, এ গেজেটে প্রায়শ চাকুরিবিধি ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/ বিভাগের জারিকৃত গুরুত্বপূর্ণ সরকারি আদেশও সন্নিবেশিত হয়। সাপ্তাহিক ভিত্তিতে প্রতি বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ গেজেট শিরোনামে এটি প্রকাশিত হয়। সরকার মাঝে মাঝে এ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যাও প্রকাশ করে বাংলাদেশ অতিরিক্ত গেজেট নামে। বাংলাদেশ গেজেট-এর আদি নমুনা ভারতে ব্রিটিশ শাসনামলে প্রকাশিত অনুরূপ দলিলে পাওয়া যায়। এ পর্যায়ের সবচেয়ে প্রাচীন যে নমুনা পাওয়া যায় তা হচ্ছে ১৭৮৭ সালের ২৯ মার্চ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কলকাতা গেজেট। এতে বাংলা প্রেসিডেন্সির জেলা কালেক্টরদের নিয়োগ ও অপসারণ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশিত হয়।
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট পূর্ববঙ্গ সরকার ঢাকা গেজেট, এক্সট্রা-অর্ডিনারি নামে একটি গেজেট প্রকাশ করে। এ গেজেটে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে পূর্ববঙ্গ প্রদেশের প্রথম গভর্নর হিসেবে স্যার ফ্রেডারিক বোর্নের নিয়োগ সংক্রান্ত এক গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। অবশ্য স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর ১৯৭৩ সালের ৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ গেজেট প্রকাশনার ফর্মা চূড়ান্ত করা হয়। একই দিন সংস্থাপন মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত এক দাপ্তরিক স্মারকে বলা হয়, স্বাধীনতার পূর্বে দুটি গেজেট প্রকাশিত হতো, একটি কেন্দ্রীয় সরকারের ও অন্যটি প্রাদেশিক সরকারের এবং প্রত্যেক গেজেটের বিষয়, আকার, মুদ্রণলেখ-পংক্তি ইত্যাদি ছিল পৃথকভাবে বিন্যস্ত। উক্ত স্মারকে আরও বলা হয় যে, বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সঙ্গে সঙ্গে নবগঠিত জাতীয় সরকারের প্রয়োজন মেটানোর উপযোগী করে বাংলাদেশ গেজেট ছাপানো জরুরি হয়ে পড়েছে। এভাবে বাংলাদেশ গেজেট ‘ঢাকা গেজেট’’ এর স্থলাভিষিক্ত হয়।
বাংলাদেশ গেজেট-এর প্রতিটি সংখ্যায় সাধারণত কয়েকটি অংশ থাকে। প্রথম অংশে থাকে সুপ্রিম কোর্ট সহ সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগ এবং তাদের সংযুক্ত ও অধস্তন দপ্তরসমূহ কর্তৃক জারিকৃত সংবিধিবদ্ধ বিজ্ঞপ্তি, বিধি ও আদেশসমূহ। দ্বিতীয় অংশে থাকে প্রথম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি; তৃতীয় অংশে থাকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি; চতুর্থ অংশে থাকে কৃতিস্বত্ব (পেটেন্ট) দপ্তরের বিজ্ঞপ্তি; পঞ্চম অংশে পুনর্মুদ্রিত থাকে জাতীয় সংসদের আইন ও বিলের খসড়া; ষষ্ঠ অংশে থাকে বিভিন্ন অধিদপ্তর ও অধস্তন দপ্তরসহ সুপ্রিম কোর্ট, মহাহিসাবনিয়ন্ত্রক ও নিরীক্ষকের অফিস ও বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের জারিকৃত বিজ্ঞপ্তি; সপ্তম অংশে থাকে গৌণ পর্যায়ের প্রশাসনিক দপ্তরসমূহের জারিকৃত আধা-সংবিধিবদ্ধ বিজ্ঞপ্তি এবং সে সাথে গেজেটের অন্য কোনো অংশের অন্তর্ভুক্ত হয় নি এমন বিবিধ বিজ্ঞপ্তি, এবং পরিশেষে অষ্টম অংশে থাকে মূল্য পরিশোধের ভিত্তিতে বেসরকারি ব্যক্তিবিশেষ ও সংস্থার (কর্পোরেশনের) বিজ্ঞাপন ও বিজ্ঞপ্তি।
মাঝে মাঝে প্রকাশিত অতিরিক্ত গেজেট প্রকাশনায় থাকে (১) জেলা ও শহরগুলিতে কলেরা, গুটিবসন্ত, প্লেগ ও অন্যান্য সংক্রামক রোগের আক্রমণ ও তাতে মৃত্যুর সাপ্তাহিক পরিসংখ্যান; (২) বিভিন্ন জেলার ৩০,০০০ বা তারও বেশি জনসংখ্যাবিশিষ্ট শহরগুলিতে জন্ম ও প্রধান প্রধান রোগব্যাধিতে মৃত্যুর খতিয়ান; (৩) আবহাওয়া ও ফসল সম্পর্কিত মাসিক প্রতিবেদন; (৪) আবহাওয়া ও ফসল সম্পর্কিত ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন; (৫) অড়হর, মসুরি ডাল ও অন্যান্য রবিশস্য সম্পর্কিত বার্ষিক হিসাব। বাংলাদেশ গেজেট (অতিরিক্ত)-এ একই দিনে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিগুলি সাধারণত গেজেটের প্রতিটি পাতার উভয় পৃষ্ঠায় বর্ণানুক্রমিকভাবে মন্ত্রণালয়ওয়ারি মুদ্রিত হয়।
মন্ত্রণালয়/বিভাগের সেকশন অফিসার অথবা অধিদপ্তরে সমমর্যাদার অফিসারের চেয়ে নিম্নমর্যাদার কোনো কর্মকর্তাকে বাংলাদেশ গেজেটে প্রকাশের জন্য কোনো বিজ্ঞপ্তি স্বাক্ষর বা তা ইস্যু করার ক্ষমতা প্রদান করা হয় নি। তবে, মন্ত্রণালয়/বিভাগের উপ-সচিবের পদমর্যাদার চেয়ে নিম্ন পদমর্যাদার নন কেবল এমন কোনো কর্মকর্তা বাংলাদেশ গেজেট (অতিরিক্ত)-এর কোনো প্রকাশনাতে অন্তর্ভুক্তির জন্য কোনো বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর ও তা ইস্যু করতে পারেন। বাংলাদেশ গেজেট ও অতিরিক্ত গেজেটের সংখ্যাগুলি সবচেয়ে মূল্যবান সরকারি দলিল বলে বিবেচিত হয়। গেজেটগুলি জনসাধারণ মূল্যের বিনিময়ে সংগ্রহ করতে পারেন। [এ.এম.এম শওকত আলী]