বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেড

বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেড (বিসিবিএল)  বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেড (বিসিবিএল) একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক। কোম্পানি আইন ১৯৯৪-এর অধীনে ১৯৯৮ সালের ১ জুন একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হয়। ব্যাংকটি যথাক্রমে ২০০০ মিলিয়ন ও ৯২০ মিলিয়ন টাকা অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধন নিয়ে ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯৯ তারিখে ব্যবসায় আরম্ভ করে। এর শেয়ার মূলধনের মধ্যে ৩০০ মিলিয়ন টাকা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ কর্তৃক পরিশোধিত এবং ৫২০ মিলিয়ন টাকার শেয়ার ব্যাংকটির পূর্বসূরি প্রতিষ্ঠান সাবেক বাংলাদেশ কমার্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড (বিসিআইএল)-এর শেয়ার হোল্ডারদের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ১০০ মিলিয়ন টাকার শেয়ার মূলধন কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ করা হয়েছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে তা পরিশোধের প্রক্রিয়া চলছে। ২০১৯ সালে ব্যাংকটির অনুমোদিত ও পরিশোধকৃত মূলধন ছিল যথাক্রমে ১০,০০০ মিলিয়ন ও ১,৯৮৯ মিলিয়ন টাকা। ২০১৯ সালে এটির মালিকানার বিভাজন ছিল: সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকবহির্ভুত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ৫.১৫%, সোনালী-জনতা-অগ্রণী ব্যাংক ১১.৩২%, বাংলাদেশ সরকার ৩৩.৯৪%, এবং আমানতকারী ও অন্যান্য বেসরকারি শেয়ার হোলডার ৪৯.৫৯%।

একটি অব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অবলুপ্ত বাংলাদেশ কমার্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ২৭ জানুয়ারি ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৯২ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ব্যবসায় অব্যাহত রাখে। কিন্তু তরল সম্পদের সংকটে পড়ে এটি কার্যক্রম চালাতে ব্যর্থ হওয়ায় এপ্রিল ১৯৯২-এ বাংলাদেশ ব্যাংক এটির ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ কমার্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড-এর আমানতকারীরা দুর্ভোগে পড়ে এবং কর্মকর্তা-কর্মচারিরা তাদের চাকরি হারায়। ভুক্তভোগী আমানতকারী ও কর্মকর্তা-কর্মচারিরা কোম্পানিটি যেকোনোভাবে পুনরায় চালু করে তাদের স্বার্থরক্ষা ও দুর্ভোগ লাঘবের জন্য জোরালো আন্দোলন শুরু করে। অবশেষে দেশের গোটা ব্যাংকিং খাতকে সংক্রমণজনিত ক্ষতির হাত থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশ কমার্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডকে বিলুপ্ত করে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে। বিসিআইএল-কে বিসিবিএল-এ রূপান্তর এবং এর ব্যবসায়িক ও প্রশাসনিক পুনর্গঠন, কার্যসম্পাদন এবং পরিচালনার জন্য ৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮ তারিখে সরকার ১০ সদস্যবিশিষ্ট একটি পরিচালক পর্ষদ গঠন করে। সাবেক বিসিআইএল-এর ২৪টি শাখাকে পুনর্গঠন করে বিসিবিএল-এর পূর্ণাঙ্গ শাখা হিসেবে চালু করা হয়। একটি তফসিলি বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেড ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯৯ তারিখে বাণিজ্যিক ব্যাংকিং ব্যবসায় আরম্ভ করে।

মৌল তথ্য ও পরিসংখ্যান (অর্থের পরিমাণসমূহ মিলিয়ন টাকায়)

বিররণ ২০০৪ ২০০৯ ২০১৫ ২০১৯
অনুমোদিত মূলধন ২০০০ ২০০০ ১০,০০০ ১০,০০০
পরিশোধিত মূলধন ৯২০ ৯২০ ১,৯৮৯ ১,৯৮৯
আমানত ৪২৮২ ৭৬০৪ ২৪,২০৮ ৩৪,০৩৯
ঋণ ও অগ্রিম ৪১৩৬ ৬২৫৬ ১৬,০৫৯ ২২,৪৭৬
বিনিয়োগ ২৬০ ৭১০ ৪,১০৬ ৫,৫২৭
মোট পরিসম্পদ ৫৬১৩ ৯৪২০ ৩০,০৫০ ৩৯,৫৫০
বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবসা পরিচালনা ৮৯০১ ৪৫৭৭৪ ৬১২৩ ৯৩২৯
ক) রপ্তানি ২৩৪৩ ১০২১২ ২,৩০২ ২,৫৪২
খ) আমদানি ৪৮০৬ ৩৫১৩৭ ২,৮৪৩ ৩,৬৯৮
গ) রেমিট্যান্স ১৭৫২ ১২৫ ৯৭৮ ২,০৮৯
মোট জনবল ৪৪৭ ৪৫৪ ৮১৫ ১১০১
শাখা (সংখ্যায়) ২৫ ২৫ ৪৮ ৬৭

উৎস অর্থবিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সরকার, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলী, ২০০৪-০৫ থেকে ২০০৯-১০; বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, বার্ষিক প্রতিবেদন, ২০১৯

বিভিন্ন পেশা ও গ্রুপের আমানতকারীদের আকর্ষণ এবং উদ্বুদ্ধ করার জন্য বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেড বেশ কয়েকটি নতুন ধরনের আমানত স্কিম চালু করে। এগুলির মধ্যে মাসিক মুনাফা-ভিত্তিক আমানত স্কিম, পেনসন সঞ্চয় স্কিম, সুদবিহীন আমানত ও ঋণ স্কিম, ভোক্তা ঋণ স্কিম এবং সঞ্চয় সার্টিফিকেট-এর বিপরীতে মানি প্লান্টেশন স্কিম উল্লেখযোগ্য। তবে ব্যাংকটির একটি বড় সমস্যা অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া ও তা আদায়ে ব্যর্থতা। ২০১৯ সালে ব্যাংকটির এনপিএল ছিল ১১,২৩৫ মিলিয়ন টাকা এবং ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি আয় এবং শেয়ার প্রতি অপারেটিং লোকসান ছিল যথাক্রমে ৬৪.৮৬ টাকা এবং ৩১.৪৪ টাকা।

সরকার কর্তৃক মনোনীত ৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি পরিচালক পর্ষদ ব্যাংকটির সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ ও নীতিকৌশল অনুমোদন করে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক-এর প্রধান কার্যনির্বাহী। বর্তমানে (২০১০) ব্যাংকটির কর্মকর্তা-কর্মচারির সংখ্যা ৪৫৪ এবং শাখার সংখ্যা ২৫। সাবেক বিসিআইএল-এর প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটটি ব্যাংকটি উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করে। বর্তমানে এটিকে পুনর্গঠন ও সংস্কার করে এখানে নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। [এস এম মাহফুজুর রহমান]