বাংলাদেশ ইনস্টিটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ
বাংলাদেশ ইনস্টিটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) বাংলাদেশের সাথে সম্পৃক্ত উন্নয়ন বিষয়ক নীতি-সংশ্লিষ্ট গবেষণা পরিচালনা করে থাকে। ইনস্টিটিটিউটের উদ্দেশ্যসমূহ হচ্ছে: ক. উন্নয়ন ও জনকল্যাণের লক্ষ্যে উন্নয়ন অর্থনীতি, জনসংখ্যা তত্ত্ব এবং জাতীয় নীতি-পরিকল্পনার সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সামাজিক ক্ষেত্রসমূহের অধ্যয়ন, গবেষণা ও জ্ঞান বিস্তারের বিষয় উৎসাহিতকরণ; খ. নীতিসমূহের পরিকল্পনা ও প্রণয়নের উদ্দেশ্যে তথ্য সংগ্রহ, উপাত্ত প্রস্ত্ততি, অনুসন্ধান পরিচালনা ও গবেষণা প্রকল্প গ্রহণ এবং পরিকল্পনা ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন; গ. সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনীতি, উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ, জনসংখ্যাতত্ত্ব ও অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সুবিধা প্রদান; ঘ. উপরে উল্লিখিত ক্ষেত্রসমূহের ওপর আধুনিক গবেষণা কৌশল ও পদ্ধতির ব্যাপারে সর্বপ্রকার তথ্য ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান।
করাচিতে ১৯৫৭ সালের জুন মাসে পাকিস্তান ইনস্টিটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট ইকনোমিকস (পাইড) প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭১-এর ডিসেম্বরে এটি ঢাকায় স্থানান্তরিত হয় এবং এর নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট ইকনোমিকস করা হয়। ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে এটির নতুন নামকরণ হয় বাংলাদেশ ইনস্টিটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ। পরিকল্পনা মন্ত্রীর সভাপতিত্বে এটিকে বোর্ড অব ট্রাস্টি পরিচালিত একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিবন্ধন করা হয়। বিআইডিএস-এর মতোই গবেষণার উদ্দেশ্যসম্পন্ন অপর দুটি প্রতিষ্ঠান দ্য পপুলেশন স্টাডি সেন্টার এবং ন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর রিসার্চ অন হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্টকে যথাক্রমে ১৯৮২ এবং ১৯৮৩ সালে এর সাথে একীভূত করা হয়। প্রথম দিকে নিয়মিত বাজেট বরাদ্দের মাধ্যমে ইনস্টিটিউটের অর্থ যোগানো হতো। ১৯৮৩ সালে সরকার ইনস্টিটিউট পরিচালনার জন্য পৌনঃপুনিক ব্যয় নির্বাহের নিশ্চয়তা বিধানের উদ্দেশ্যে একটি নিয়মিত ব্যয় নির্বাহের তহবিল গঠন করে। এই তহবিল রাষ্ট্রীয় বাজেট সহায়তা প্রাপ্তির ওপর নির্ভরতা থেকে মুক্তি দেয় এবং এটি অনেক বেশি স্বায়ত্তশাসন ভোগ করা আরম্ভ করে। ইনস্টিটিউটটি কতিপয় দাতা সংস্থা ও ফাউন্ডেশনের বৈদেশিক আর্থিক সহায়তাও লাভ করে থাকে।
ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম পরিচালিত হয় ১১ সদস্যের একটি ট্রাস্টি বোর্ডের তত্ত্বাবধানে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী এ বোর্ডের প্রধান, এছাড়াও বোর্ডে থাকেন ১০ জন সদস্য। মহাপরিচালক হচ্ছেন বিআইডিএস-এর প্রধান নির্বাহী। তাঁকে সহায়তা করেন একজন সচিব, যিনি ট্রাস্টি বোর্ডের সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সংস্থাটির প্রশাসনিক বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য রয়েছে পলিসি কো-অর্ডিনেশন কমিটি (পিসিসি), অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যাফেয়ার্স কমিটি (এএসি) এবং ফাইন্যান্স কমিটি (এফসি) নামে তিনটি কমিটি। এছাড়াও ফেলোদের সমন্বয়ে রয়েছে একটি উপদেষ্টা কমিটি, যা ইনস্টিটিউটের পেশাভিত্তিক কর্মসূচি পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে দিক-নির্দেশনা দিয়ে থাকে। বিশিষ্ট পেশাজীবীদের মধ্য থেকে পলিসি কো-অর্ডিনেশন কমিটি মনোনয়নক্রমে জ্যেষ্ঠ ফেলোগণকে বাছাই করা হয় এবং তাদেরকে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ কর্তৃক তিন বছর মেয়াদের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়।
বিআইডিএস-এর পাঁচটি গবেষণা বিভাগ রয়েছে, যার প্রতিটির প্রধান বিভাগ কর্তৃক মনোনীত হন এবং তাদেরকে পলিসি কো-অর্ডিনেশন কমিটি কর্তৃক এক বছর মেয়াদের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। এই পাঁচটি বিভাগ হচ্ছে কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন, সাধারণ অর্থনীতি, মানব সম্পদ উন্নয়ন, শিল্প ও ভৌত অবকাঠামো এবং জনসংখ্যা গবেষণা। অবশ্য, গবেষকদের যেহেতু নানাবিধ বিষয়ে আগ্রহ ও দক্ষতা রয়েছে সেহেতু তাদের পক্ষে একটি বিভাগের সদস্য হওয়ার বিষয়টি অন্য বিভাগের অধীনে গবেষণা তৎপরতা এবং অন্যান্য কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কোন বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। বোর্ড অব ট্রাস্টিজ কর্তৃক অনুমোদিত ৭৬টি গবেষণামূলক পদ থাকলেও এ সকল পদের সবগুলি সব সময় পূরণ করা সম্ভব হয় না। এ সকল পদে কর্মরত গবেষকগণকে বিভিন্ন শাখার শতাধিক স্টাফ সহায়তা করে থাকেন। ঐ সকল শাখার মধ্যে আছে প্রশাসন, হিসাব, গ্রন্থাগার, প্রকাশনা এবং কম্পিউটার শাখা। বিআইডিএস-এর গবেষণা প্রকল্পের আয়ের নীট সঞ্চয় থেকে গঠিত একটি বিশেষ গবেষণা ও উন্নয়ন তহবিল (এসআরডিএফ) আছে। এই তহবিলের উদ্দেশ্য হচ্ছে বিআইডিএস-এর কোন সদস্য কর্তৃক পরিচালিত গবেষণা কার্যক্রমে সহায়তা প্রদান করা। তহবিলে অর্থ থাকা সাপেক্ষে এসআরডিএফ গ্রন্থাগার এবং ইনস্টিটিউটের অবকাঠামোর প্রয়োজনেও সহায়তা প্রদান করা হয়। বিআইডিএস-এর গ্রন্থাগার সংগ্রহে আছে ১,২০,০০০ বই, জার্নাল এবং মাইক্রো চিপস। গ্রন্থাগার তার ব্যবহারকারীদের গণসচেতনতা, অনুলিপি, আন্তঃগ্রন্থাগার পুস্তক বিনিময় ও পাঠের সুবিধা এবং ব্যাপক সহযোগিতাসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদান করে থাকে। এটি ৪০০টি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে বিনিময় কর্মসূচি পরিচালনা করে আসছে এবং নিজেদের প্রকাশনার বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে বিপুলসংখ্যক কাগজপত্র ও জার্নাল পেয়ে থাকে।
দ্য বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ নামে বিআইডিএস একটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ত্রৈমাসিক জার্নাল প্রকাশ করে থাকে, যাতে বিআইডিএস ছাড়াও দেশ ও বিদেশের স্বনামধন্য গবেষকদের গবেষণা প্রবন্ধ, নোট, পুস্তক পর্যালোচনা থাকে। বাংলায় প্রকাশিত বার্ষিক জার্নাল বাংলাদেশ উন্নয়ন সমীক্ষা প্রতিষ্ঠানটির গবেষণার ফলাফল জনসাধারণের জন্য প্রকাশ করে। গবেষণা প্রবন্ধসমূহ পুস্তক আকারে প্রকাশ করা হয় এবং সেগুলি কোন বিশেষ বিষয়ে ইনস্টিটিউট কর্তৃক গৃহীত গবেষণা সম্পর্কে আলোকপাত করে। [শারমিন নাজ]