বলীখেলা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
২ নং লাইন: ২ নং লাইন:
'''বলীখেলা'''  চট্রগ্রামের একটি লোকক্রীড়া। প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এই লোকক্রীড়াটি''' '''কবে শুরু হয়েছিল তার সঠিক তথ্য জানা যায় না। অনেকের মতে মুগল আমলে এ খেলা শুরু হয়েছিল এবং মুসলিম আমলেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। ‘মল্ল’ বা ‘বলী’ উপাধিতে ভূষিত বহু হিন্দু-মুসলমান পরিবারের অস্তিত্বই তার প্রমাণ। বিত্তবান ভূস্বামীরা তখন নিরাপত্তা ও আভিজাত্য প্রদর্শনের জন্য বেতনভোগী নামি-দামি কুস্তিগির রাখতেন। তাদের দৈহিক শক্তির শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারিত হতো বলীখেলার মাধ্যমে। বিজয়ীরা ‘বলী’ (বলবান) হিসেবে নন্দিত হতো।
'''বলীখেলা'''  চট্রগ্রামের একটি লোকক্রীড়া। প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এই লোকক্রীড়াটি''' '''কবে শুরু হয়েছিল তার সঠিক তথ্য জানা যায় না। অনেকের মতে মুগল আমলে এ খেলা শুরু হয়েছিল এবং মুসলিম আমলেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। ‘মল্ল’ বা ‘বলী’ উপাধিতে ভূষিত বহু হিন্দু-মুসলমান পরিবারের অস্তিত্বই তার প্রমাণ। বিত্তবান ভূস্বামীরা তখন নিরাপত্তা ও আভিজাত্য প্রদর্শনের জন্য বেতনভোগী নামি-দামি কুস্তিগির রাখতেন। তাদের দৈহিক শক্তির শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারিত হতো বলীখেলার মাধ্যমে। বিজয়ীরা ‘বলী’ (বলবান) হিসেবে নন্দিত হতো।


[[Image:BaliKhela.jpg|thumb|400px|right|বলীখেলা]]
বলীখেলার স্বর্ণযুগ ছিল প্রথম মহাযুদ্ধের পর থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সময়কাল পর্যন্ত। সে সময় চট্টগ্রাম জেলার সর্বত্র চৈত্র থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত ধুমধামের সঙ্গে বলীখেলার আয়োজন করা হতো। তখন ওই অঞ্চলের অনেকেই ছিলেন ইয়াংগুন তথা মায়ানমার প্রবাসী। তাদের বলা হতো ’রেঙ্গুইন্যা’। রেঙ্গুইন্যাদের হাতে ছিল প্রচুর অর্থ এবং তারাই ছিল বলীখেলার প্রধান পৃষ্ঠপোষক। পরবর্তীকালে রেঙ্গুইন্যাদের ছাড়াও দেশের অনেক প্রথিতযশা ব্যক্তিত্বও বলীখেলার প্রচন্ড সমঝদার ছিলেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক  [[ফজল, আবুল|আবুল ফজল]] বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে বলীখেলার আয়োজন করতেন। পাকিস্তান আমলের জনৈক মন্ত্রী এ.কে খানও যৌবনে বলীখেলায় অংশ নিতেন বলে জানা যায়। ঢাকার নবাব আবদুল গনিও ছিলেন বলীখেলার একজন সমঝদার পৃষ্ঠপোষক। তিনিও ঢাকার শাহবাগে একাধিকবার বলীখেলার আয়োজন করেছিলেন।
বলীখেলার স্বর্ণযুগ ছিল প্রথম মহাযুদ্ধের পর থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সময়কাল পর্যন্ত। সে সময় চট্টগ্রাম জেলার সর্বত্র চৈত্র থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত ধুমধামের সঙ্গে বলীখেলার আয়োজন করা হতো। তখন ওই অঞ্চলের অনেকেই ছিলেন ইয়াংগুন তথা মায়ানমার প্রবাসী। তাদের বলা হতো ’রেঙ্গুইন্যা’। রেঙ্গুইন্যাদের হাতে ছিল প্রচুর অর্থ এবং তারাই ছিল বলীখেলার প্রধান পৃষ্ঠপোষক। পরবর্তীকালে রেঙ্গুইন্যাদের ছাড়াও দেশের অনেক প্রথিতযশা ব্যক্তিত্বও বলীখেলার প্রচন্ড সমঝদার ছিলেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক  [[ফজল, আবুল|আবুল ফজল]] বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে বলীখেলার আয়োজন করতেন। পাকিস্তান আমলের জনৈক মন্ত্রী এ.কে খানও যৌবনে বলীখেলায় অংশ নিতেন বলে জানা যায়। ঢাকার নবাব আবদুল গনিও ছিলেন বলীখেলার একজন সমঝদার পৃষ্ঠপোষক। তিনিও ঢাকার শাহবাগে একাধিকবার বলীখেলার আয়োজন করেছিলেন।


পৃষ্ঠপোষকের অভাবে বর্তমানে বলীখেলার ধুমধাম অনেকটাই স্তিমিত হয়ে পড়েছে। চট্টগ্রামে বর্তমানে যে খেলা প্রচলিত আছে তার প্রবর্তন করেন আবদুল জববার সওদাগর ১৯০৯ সালে। তাঁর লক্ষ্য ছিল বিট্রিশবিরোধী আন্দোলনে দেশের যুব সমাজকে সংগঠিত করা। তার বলীখেলার জনপ্রিয়তা এখনও অক্ষুণ্ণ রয়েছে।
পৃষ্ঠপোষকের অভাবে বর্তমানে বলীখেলার ধুমধাম অনেকটাই স্তিমিত হয়ে পড়েছে। চট্টগ্রামে বর্তমানে যে খেলা প্রচলিত আছে তার প্রবর্তন করেন আবদুল জববার সওদাগর ১৯০৯ সালে। তাঁর লক্ষ্য ছিল বিট্রিশবিরোধী আন্দোলনে দেশের যুব সমাজকে সংগঠিত করা। তার বলীখেলার জনপ্রিয়তা এখনও অক্ষুণ্ণ রয়েছে।
[[Image:BaliKhela.jpg|thumb|400px|right|বলীখেল]]


খেলার আগে ঢোল বাজিয়ে প্রচারকার্য চালানো হয়। আমন্ত্রিত বলীরা সাহাব (সঙ্গী) ও সমর্থকদের নিয়ে ঢোল বাজিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতা চলে কয়েক পর্বে। চূড়ান্ত বিজয়ীকে মাথায় নিয়ে তার সমর্থকরা ঢোল বাজিয়ে আনন্দ করে।
খেলার আগে ঢোল বাজিয়ে প্রচারকার্য চালানো হয়। আমন্ত্রিত বলীরা সাহাব (সঙ্গী) ও সমর্থকদের নিয়ে ঢোল বাজিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতা চলে কয়েক পর্বে। চূড়ান্ত বিজয়ীকে মাথায় নিয়ে তার সমর্থকরা ঢোল বাজিয়ে আনন্দ করে।


পূর্বে জেলার বিভিন্ন স্থানে বলীখেলার যেসব আসর বসত সে সবের অধিকাংশই এখন লুপ্ত বা লুপ্তপ্রায়। তবে চট্টগ্রাম শহরের লালদিঘীর ময়দানে আয়োজিত জববারের বলীখেলা এখনও সগৌরবে টিকে আছে। এই খেলাকে কেন্দ্র করে সেখানে বিশাল এলাকা জুড়ে তিনদিন ব্যাপী মেলা বসে। এই বার্ষিক উৎসব ফলাও করে স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
পূর্বে জেলার বিভিন্ন স্থানে বলীখেলার যেসব আসর বসত সে সবের অধিকাংশই এখন লুপ্ত বা লুপ্তপ্রায়। তবে চট্টগ্রাম শহরের লালদিঘীর ময়দানে আয়োজিত জববারের বলীখেলা এখনও সগৌরবে টিকে আছে। এই খেলাকে কেন্দ্র করে সেখানে বিশাল এলাকা জুড়ে তিনদিন ব্যাপী মেলা বসে। এই বার্ষিক উৎসব ফলাও করে স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। [মাহবুবুল হক]
 
[মাহবুবুল হক]
 
[[en:Bali Khela]]
 
[[en:Bali Khela]]
 
[[en:Bali Khela]]


[[en:Bali Khela]]


[[en:Bali Khela]]
[[en:Bali Khela]]

০৭:২০, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

বলীখেলা  চট্রগ্রামের একটি লোকক্রীড়া। প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এই লোকক্রীড়াটি কবে শুরু হয়েছিল তার সঠিক তথ্য জানা যায় না। অনেকের মতে মুগল আমলে এ খেলা শুরু হয়েছিল এবং মুসলিম আমলেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। ‘মল্ল’ বা ‘বলী’ উপাধিতে ভূষিত বহু হিন্দু-মুসলমান পরিবারের অস্তিত্বই তার প্রমাণ। বিত্তবান ভূস্বামীরা তখন নিরাপত্তা ও আভিজাত্য প্রদর্শনের জন্য বেতনভোগী নামি-দামি কুস্তিগির রাখতেন। তাদের দৈহিক শক্তির শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারিত হতো বলীখেলার মাধ্যমে। বিজয়ীরা ‘বলী’ (বলবান) হিসেবে নন্দিত হতো।

বলীখেলা

বলীখেলার স্বর্ণযুগ ছিল প্রথম মহাযুদ্ধের পর থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সময়কাল পর্যন্ত। সে সময় চট্টগ্রাম জেলার সর্বত্র চৈত্র থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত ধুমধামের সঙ্গে বলীখেলার আয়োজন করা হতো। তখন ওই অঞ্চলের অনেকেই ছিলেন ইয়াংগুন তথা মায়ানমার প্রবাসী। তাদের বলা হতো ’রেঙ্গুইন্যা’। রেঙ্গুইন্যাদের হাতে ছিল প্রচুর অর্থ এবং তারাই ছিল বলীখেলার প্রধান পৃষ্ঠপোষক। পরবর্তীকালে রেঙ্গুইন্যাদের ছাড়াও দেশের অনেক প্রথিতযশা ব্যক্তিত্বও বলীখেলার প্রচন্ড সমঝদার ছিলেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক  আবুল ফজল বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে বলীখেলার আয়োজন করতেন। পাকিস্তান আমলের জনৈক মন্ত্রী এ.কে খানও যৌবনে বলীখেলায় অংশ নিতেন বলে জানা যায়। ঢাকার নবাব আবদুল গনিও ছিলেন বলীখেলার একজন সমঝদার পৃষ্ঠপোষক। তিনিও ঢাকার শাহবাগে একাধিকবার বলীখেলার আয়োজন করেছিলেন।

পৃষ্ঠপোষকের অভাবে বর্তমানে বলীখেলার ধুমধাম অনেকটাই স্তিমিত হয়ে পড়েছে। চট্টগ্রামে বর্তমানে যে খেলা প্রচলিত আছে তার প্রবর্তন করেন আবদুল জববার সওদাগর ১৯০৯ সালে। তাঁর লক্ষ্য ছিল বিট্রিশবিরোধী আন্দোলনে দেশের যুব সমাজকে সংগঠিত করা। তার বলীখেলার জনপ্রিয়তা এখনও অক্ষুণ্ণ রয়েছে।

খেলার আগে ঢোল বাজিয়ে প্রচারকার্য চালানো হয়। আমন্ত্রিত বলীরা সাহাব (সঙ্গী) ও সমর্থকদের নিয়ে ঢোল বাজিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতা চলে কয়েক পর্বে। চূড়ান্ত বিজয়ীকে মাথায় নিয়ে তার সমর্থকরা ঢোল বাজিয়ে আনন্দ করে।

পূর্বে জেলার বিভিন্ন স্থানে বলীখেলার যেসব আসর বসত সে সবের অধিকাংশই এখন লুপ্ত বা লুপ্তপ্রায়। তবে চট্টগ্রাম শহরের লালদিঘীর ময়দানে আয়োজিত জববারের বলীখেলা এখনও সগৌরবে টিকে আছে। এই খেলাকে কেন্দ্র করে সেখানে বিশাল এলাকা জুড়ে তিনদিন ব্যাপী মেলা বসে। এই বার্ষিক উৎসব ফলাও করে স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। [মাহবুবুল হক]