বরিশাল সদর উপজেলা

বরিশাল সদর উপজেলা (বরিশাল জেলা)  আয়তন: ৩২৪.৪০ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৩৭´ থেকে ২২°৪৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°১৬´ থেকে ৯০°৩২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে বাবুগঞ্জ, মুলাদি এবং মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে বাকেরগঞ্জ এবং নলছিটি উপজেলা, পূর্বে মেহেন্দীগঞ্জ এবং ভোলা সদর উপজেলা, পশ্চিমে ঝালকাঠি সদর এবং নলছিটি উপজেলা।

জনসংখ্যা ৫২৭০১৭; পুরুষ ২৬৭২০৭, মহিলা ২৫৯৮১০। মুসলিম ৪৮৩২১৮, হিন্দু ৪০৪৭৫, বৌদ্ধ ৭২, খ্রিস্টান ৩২৩৮ এবং অন্যান্য ১৪।

জলাশয় কীর্তনখোলা, কালিজিরা, বরিশাল, নয়াভাঙ্গা, তেঁতুলিয়া নদী উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন ১৯২৩ সালের ১৮ জানুয়ারি বরিশাল থানা গঠিত হয়। পৌরসভা গঠিত হয় ১৯৫৭ সালে এবং সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তর করা হয় ২০০০ সালে।

উপজেলা
সিটি কর্পোরেশন ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১০ ১০৩ ১১০ ৩৩৯৩০৮ ১৮৭৭০৯ ১৬২৫ ৬৯.৬ (২০০১) ৫৯.৩
সিটি কর্পোরেশন
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
- ৩০ ২২৫ ৩২৮২৭৮ - ৭৫.৩
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
২২.৯৮ (২০০১) ১১০৩০ ১৮২৭ (২০০১) ৬০.৩
ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন
ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের নাম আয়তন (বর্গ কিমি) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কাশিপুর ৬৯ ২৭৯১ ৮১৪৮ ৮২৬২ ৬১.৭
চাঁদপুরা ৩২ ৫৯৬৭ ৮১৩২ ৮৬৩২ ৬৩.৮
চন্দ্রমোহন ৩৩ ৫৭৩৫ ৭৮৩৬ ৭৪৮৪ ৫১.৬
চর কাউয়া ৪৩ ৯৩৪৬ ১৫০৭৮ ১৫১৫৪ ৫৯.৭
চর বাড়ীয়া ৩৪ ৪৮৬০ ১১৫১০ ১১৩৯৪ ৬২.৯
চর মোনাই ৫১ ১১৭৫৫ ১৪১৬৩ ১৪৬২৭ ৫৩.৯
জাগুয়া ৬০ ১৮৯৭ ৩০৯২ ৩৪১৭ ৭৮.২
টুঙ্গিবাড়ীয়া ৯৪ ৫০২৫ ৯৪৯১ ১০৩৩০ ৫৬.৭
রায়পাশা কড়াপুর ৭৭ ৪৬৩৮ ৯০২৫ ৯৭০৯ ৬৮.৯
শায়েস্তাবাদ ৮৬ ১১৩১৮ ১১২৫৭ ১১৯৯৮ ৫১.১

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শন ও প্রত্নসম্পদ  মুকুন্দদাসের কালীবাড়ি, শংকর মঠ।

ঐতিহাসিক ঘটনা ১৯০৬ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক পরিষদের সম্মেলনে ব্রিটিশ পুলিশের লাঠিচার্জে বহুলোক হতাহত হয় এবং এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারা ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ১৯১২ সালে শংকর মঠ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলে সশস্ত্র বিপ্লব শুরু হয়।

মুক্তিযুদ্ধ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা শহর সংলগ্ন ঝুনাহার ও সাউদের কাল ব্রিজসহ কয়েকটি স্থানে এবং গৌরনদী, উজিরপুর, বাবুগঞ্জ, মুলাদী ও মেহেন্দীগঞ্জে পাকসেনাদের সঙ্গে বেশ কিছু খন্ডযুদ্ধ পরিচালনা করে। ১৯৭১ সালে ৮ ডিসেম্বর বরিশাল মুক্ত হয়। উপজেলার ১টি স্থানে বধ্যভূমি আবিষ্কৃত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন বরিশাল সদর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৬।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক পত্রিকা: শাহনামা, প্রবাসী, গ্রাম সমাচার, আজকের বার্তা, আজকের কণ্ঠ। সাময়িকী: সাপ্তাহিক লোকবানী, বাখেরগঞ্জ পরিক্রমা, চিরন্তন বাংলা, উপকুল, সমাচার, দিপোলো, সাপ্তাহিক: পায়রা, দি রিভার, ইতিবৃত্ত। অবলুপ্ত: বরিশাল বার্তাবহ (১৮৭০), হিতসাধনী (১৮৭১), বাংলার রঞ্জিকা (১৮৭৩), কাশিপুর নিবাসী (১৮৮১), স্বদেশী (১৮৮৫), ভারত হিতৈষী (১৮৮২), বরিশাল হিতৈষী (১৮৮৫), বিকাশ (১৯০০), সহযোগী (১৮৮৫), প্রদীপ (১৯২৭)।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ২১০, মন্দির ৩০, গির্জা ৫।। ব্যাপ্টিষ্ট ও অক্সফোর্ড গির্জা, সায়েদউনন্নেসা মসজিদ (জামে কসাই) উল্লেখযোগ্য।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৬৯.৩%; পুরুষ ৭০.৫%, মহিলা ৬৮.১%। বিশ্ববিদ্যালয় ১, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ১, মেডিকেল কলেজ ১, শারীরিক শিক্ষা কলেজ ১, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ ২, নার্সিং ইনস্টিটিউট ১, ক্যাডেট কলেজ ১, কলেজ ১৫, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৭০, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩৫০। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: শেরে-বাংলা মেডিকেল কলেজ, বি এম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ (১৮৮৯), অক্সফোর্ড মিশন হাই স্কুল, বরিশাল জেলা স্কুল।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৩, সার্কাস দল ২, নাট্যদল ৪, মহিলা সংগঠন ৫, সিনেমা হল ৪, শিল্পকলা একাডেমী ১, খেলার মাঠ ১১।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ২০.২৪%, অকৃষি শ্রমিক ৫.৫৩%, শিল্প ১.১০%, ব্যবসা ২৩.৮৫%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৬.৪৪%, চাকরি ২২.৭৯%, নির্মাণ ৪.১৬%, ধর্মীয় সেবা ০.৪২%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ২.৫৬% এবং অন্যান্য ১২.৯১%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫০.৬০%, ভূমিহীন ৪৯.৪০%। শহরে ৪৩.১৯% এবং গ্রামে ৫৮.১০% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, পান, তৈলবীজ।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি বালাম চাল, আখ, তিল।

প্রধান ফল-ফলাদি নারিকেল, আম, লিচু, সুপারি, কলা, আমড়া।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার হাঁস-মুরগি ১৬০, গবাদিপশু ৫, হ্যাচারি ২০।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৬২ কিমি, আধাপাকা রাস্তা ১১৭ কিমি, কাঁচারাস্তা ৫১৪ কিমি; নৌপথ ১৪৮ কিমি; বিমানবন্দর ১।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা বরফকল, ফ্লাওয়ার মিল, টেক্সটাইল মিল, তেলকল, বিস্কুট কারখানা, ঔষধ কারখানা, ওয়েল্ডিং কারখানা, সুতা তৈরি কারখানা।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, সূচিশিল্প, বিড়িশিল্প, কাঠের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা চন্দ্রমোহন নতুন বাজার, টুঙ্গিবাড়ীয়া বাজার, লাহার বাজার, শিংহেরকাঠি বাজার, কানাইপুর বাজার, মৌলভীর বাজার, তালুকদার বাজার, গোপের বাজার, স্টীমারঘাট বাজার, দূর্গাপুর বাজার, বাংলা বাজার, সাহেবের হাট, চন্দ্রমোহন হাট, আড়ৎদারী হাট, চকবাজার উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ইলিশ মাছ, ঔষধ, বিড়ি, হস্তশিল্প।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৭৯.৫% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয় জলের উৎস নলকূপ ৯১.৮%, ট্যাপ ৬.০% এবং অন্যান্য ২.২%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৮০.৪% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ১৮.৬% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১.০% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ১, হাসপাতাল ২, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ১, ক্লিনিক ১০, নার্সিং হোম ৯।

এনজিও কেয়ার, ব্র্যাক, কারিতাস, আশা, প্রশিকা। [উষসী ঈসিকা খান]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, বরিশাল সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।