বরাহমিহির
বরাহমিহির (৪৯৯?-৫৮৭?) প্রাচীন ভারতীয় জ্যোতির্বিদ ও কবি। আনুমানিক ৪৯৯ খ্রিস্টাব্দে বরাহমিহির ভারতের অবন্তিনগরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন রাজা বিক্রমাদিত্যের সভার নবরত্নের অন্যতম। বরাহমিহির জ্যোতির্বিজ্ঞান ছাড়াও গণিতশাস্ত্র, আবহবিদ্যা, পূর্তবিদ্যা ও স্থাপত্যবিদ্যায় সুপন্ডিত ছিলেন। বরাহমিহির ৫৫০ খ্রিস্টাব্দে পঞ্চসিদ্ধান্তিকা নামক বিখ্যাত গ্রন্থ রচনা করেন, যা জ্যোতির্বিদ্যা ও জ্যোতিষশাস্ত্রের সংক্ষিপ্তসার। এই অমূল্য গ্রন্থটি পাঁচটি অংশ (সিদ্ধান্ত) নিয়ে গঠিত: সূর্যসিদ্ধান্ত, রোমকসিদ্ধান্ত, পৌলিশসিদ্ধান্ত, পৈতামহসিদ্ধান্ত ও বাশিষ্ঠসিদ্ধান্ত। তিনি পদ্যে লিখিত বৃহৎসংহিতা নামে অন্য একটি প্রসিদ্ধ জ্যোতিষ গ্রন্থ রচনা করেন, যাতে জ্যোতিষী দৃষ্টিকোণ থেকে বহু পাথরের বিবরণ ও পাক-ভারতের নানা ভৌগোলিক তথ্য; সূর্য-চন্দ্রাদির গতি ও প্রভাব; আবহবিদ্যা, স্থাপত্য এবং পূর্ত কর্মাদি প্রসঙ্গে জ্যোতির্বিদ্যার প্রয়োজনীয়তা প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা রয়েছে। পন্ডিত বরাহমিহির তাঁর এই গ্রন্থে ‘ব্রজলেপ’ নামে আধুনিক সিমেন্টের সমগোত্রীয় একটি বস্ত্তর প্রস্ত্ততপ্রণালি বর্ণনা করেছেন। প্রাচীন ভারতে তাঁর তৈরি ব্রজলেপের গাঁথুনী দিয়ে বড় বড় ইমারত তৈরি হতো। বরাহমিহির ভারতীয় পঞ্জিকার সংস্কারক। তিনিই বর্ষ গণনায় বৈশাখকে প্রথম মাস হিসেবে গণ্য করার রীতি প্রচলন করেন। এর আগে চৈত্র ও বৈশাখকে বসন্ত ঋতুর অন্তর্গত বলে ধরা হতো। বর্তমানে প্রচলিত ভারতীয় তথা বাংলা বর্ষ গণনায় বরাহমিহিরের পদ্ধতিই অনুসরণ করা হয়। পৃথিবীর আকার ও আকৃতি সম্বন্ধেও তাঁর স্বচ্ছ ধারণা ছিল। বরাহমিহিরের সঠিক মৃত্যুকাল জানা যায় না। কারও মতে তিনি ৫৮৭ খ্রিস্টাব্দে, আবার কারও মতে ৫৭৮ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। [মোঃ মাহবুব মোর্শেদ]