বনমোরগ

বনমোরগ

বনমোরগ (Junglefowl)  Galliformes বর্গের Phasianidae গোত্রের Gallus গণের পাখি। এশিয়ার অনেক বনেই এদের দেখা যায়। Gallus-এর ৪ প্রজাতির মধ্যে বাংলাদেশে আছে ১টি, লাল জংলি মোরগ, Gallus gallus। অন্য ৩ প্রজাতির মধ্যে ধূসর জংলি মোরগ G. sonnerati পশ্চিম, মধ্য ও দক্ষিণ ভারতে আছে। এই জাতীয় পুরুষ পাখিদের ঘাড়ে থাকে ফুলানো পালকগুচ্ছ, ডাকে ভাঙা ভাঙা স্বরে। G. lafayetti আছে কেবল শ্রীলঙ্কায়। পুরুষ পাখিদের ঝুঁটি হলুদ রঙের, কিনার ও নিচের অংশ লাল। তৃতীয় প্রজাতি G. varius আছে মালয় দ্বীপপুঞ্জে। এদের গলায় ফুলানো পালক নেই, ঝুঁটি বেশ বড় কিন্তু খাঁজকাটা নয়।

জংলি মোরগের মধ্যে লাল জংলি মোরগের গুরুত্বই অধিক। প্রত্নতাত্ত্বিক সাক্ষ্য থেকে দেখা গেছে যে, এদের (G. gallus)  প্রায় ৫,২০০ বছর আগে প্রথমে ভারতে পোষ মানানো হয় এবং তখন থেকেই এরা মানুষের জন্য ডিম ও মাংস যুগিয়ে আসছে। উত্তর-পূর্ব ভারত, বাংলাদেশ, মায়ানমার, দক্ষিণ ভিয়েতনাম, মালয় উপদ্বীপ ও লাগোয়া দ্বীপপুঞ্জ এদের আবাসস্থল। একদা এই জাতের মোরগ বাংলাদেশের বনাঞ্চলের সর্বত্রই দেখা যেত। এখন আছে শুধু উত্তর-পূর্ব, দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের বনে। পুরুষ পাখি কমলা-লাল রঙের, গলার পালক হলুদ, লেজে আছে লম্বা পালক, পেটের দিক সাধারণত কালচে বাদামি। বনমোরগের ঝুঁটি হালকা লালচে হলুদ, পিঠ লালচে ধূসর, বুক-পেট হালকা লালচে বাদামি। ছোট ছোট দলে চলাচল করে, সাধারণত একসঙ্গে ৫-৬টি, তাতে ১টি মোরগ ও ৪-৫টি মুরগি।সব ধরনের দানাশস্য, ফসলের কচি ডাল ও কুঁড়ি, ঘাস, ফল, কীটপতঙ্গ, দৈবাৎ ছোটখাটো স্তন্যপায়ী এদের প্রধান খাদ্য।

মানুষের মলমূত্রও খায়। বনমোরগের ডাক গৃহপালিত মোরগের মতোই, কখনও আরও উচ্চ ও তীক্ষ্ণ। প্রধান প্রজননকাল মার্চ-মে। ডিমগুলি গৃহপালিত মুরগির মতোই। ডিম সংখ্যা ৪-৬টি। মুরগিই ডিমে তা দেয় এবং ডিম ফোটার সময়কাল প্রায় ২১ দিন।  [মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম]