বঙ্গীয় অববাহিকা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
২ নং লাইন: ২ নং লাইন:
'''বঙ্গীয় অববাহিকা '''(Bengal Basin)  পশ্চিমে পশ্চিমবঙ্গ থেকে পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য এবং উত্তরে শিলং মালভূমির পাদদেশ থেকে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর বরাবর বিস্তৃত অববাহিকা। এটি মূলত টারশিয়ারি যুগের শিলাস্তর দিয়ে পরিপূর্ণ, যদিও উত্তরবঙ্গে ভূগর্ভে অতি প্রাচীন পারমিয়ান যুগের শিলাস্তর বিদ্যমান। ভূত্বকীয় ভারতীয় প্লেট (Indian Plate) এবং এশিয়ান প্লেটের (Asian Plate) সংঘর্ষের ফলে বঙ্গীয় অববাহিকার উৎপত্তি হয়েছে। ইয়োসিন উপযুগের শেষাংশে এই সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকে একদিকে টেথিস সাগরের বিলুপ্তি এবং অপরদিকে হিমালয় পর্বতের সৃষ্টি-এই দুটি ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে বঙ্গীয় অববাহিকার জন্ম হয় এবং ক্রমাগতভাবে তা হিমালয় পর্বত থেকে আগত নদীধারা কর্তৃক বাহিত পলিমাটি দ্বারা ভরাট হয়ে বঙ্গীয় বদ্বীপের সৃষ্টি করে।
'''বঙ্গীয় অববাহিকা '''(Bengal Basin)  পশ্চিমে পশ্চিমবঙ্গ থেকে পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য এবং উত্তরে শিলং মালভূমির পাদদেশ থেকে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর বরাবর বিস্তৃত অববাহিকা। এটি মূলত টারশিয়ারি যুগের শিলাস্তর দিয়ে পরিপূর্ণ, যদিও উত্তরবঙ্গে ভূগর্ভে অতি প্রাচীন পারমিয়ান যুগের শিলাস্তর বিদ্যমান। ভূত্বকীয় ভারতীয় প্লেট (Indian Plate) এবং এশিয়ান প্লেটের (Asian Plate) সংঘর্ষের ফলে বঙ্গীয় অববাহিকার উৎপত্তি হয়েছে। ইয়োসিন উপযুগের শেষাংশে এই সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকে একদিকে টেথিস সাগরের বিলুপ্তি এবং অপরদিকে হিমালয় পর্বতের সৃষ্টি-এই দুটি ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে বঙ্গীয় অববাহিকার জন্ম হয় এবং ক্রমাগতভাবে তা হিমালয় পর্বত থেকে আগত নদীধারা কর্তৃক বাহিত পলিমাটি দ্বারা ভরাট হয়ে বঙ্গীয় বদ্বীপের সৃষ্টি করে।


[[Image:BengalBasin.jpg|thumbnail|300px|right]]
গাঙ্গেয় উপত্যকা থেকে বঙ্গীয় অববাহিকাকে পৃথক করার একটি কারণ হচ্ছে, এই অববাহিকা আসাম উপসাগর ভরাট হয়ে যাওয়ার দীর্ঘ সময় পর সেখান থেকে উৎপন্ন হয়েছে। অন্যদিকে আরেকটি কারণ হচ্ছে, এই অববাহিকায় গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদের মিলিত প্রবাহ দ্বারা পর্যায়ক্রমিক সৃষ্ট বদ্বীপসমূহ গড়ে উঠেছে। সবচেয়ে পুরাতন বদ্বীপটি উত্তরে বরেন্দ্রভূমি ও মধুপুর গড় - এই দুই সোপানভূমির পশ্চাতে পরিত্যক্ত হয়েছে। অন্যান্য পুরাতন বদ্বীপসমূহ অপেক্ষাকৃত নতুন নতুন পলি সঞ্চয়নের নিচে চাপা পড়েছে অথবা প্রধান প্রধান নদীসমূহের বার বার গতিপথ পরিবর্তনের ফলে ক্ষয়প্রাপ্ত/ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। বর্তমানে বঙ্গীয় অববাহিকা দুটি প্রধান প্লাইসটোসিন চত্বর-মধুপুর গড় ও বরেন্দ্রভূমি, গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীপ্রণালীর সক্রিয় প্লাবনভূমি এবং গঙ্গানদী গঠিত মৃতপ্রায় বদ্বীপ ও সুন্দরবনাঞ্চলের অপরিণত বদ্বীপ ধারণ করছে। সমুদ্রমুখী এবং মেঘনা মোহনায় গড়ে ওঠা অনেক উপকূলীয় দ্বীপও এই অববাহিকার অন্তর্ভুক্ত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অববাহিকার গড় উচ্চতা সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় ২ মিটার থেকে হিমালয় পাদদেশের নিকটবর্তী এলাকায় ১০০ মিটারেরও অধিক উচ্চতায় পৌঁছেছে। অববাহিকার অধিকাংশ স্থান গড় সমুদ্রসীমার ৫ মিটার থেকে ১০ মিটার উচ্চতার মধ্যে অবস্থিত, যা পৃথিবীর নিম্ন উচ্চতাবিশিষ্ট সমভূমিসমূহের মধ্যে একটি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে স্বল্প উচ্চতায় অবস্থিতি এই সমভূমিকে সমুদ্রপৃষ্ঠের যেকোন উচ্চতাবৃদ্ধির ঝুঁকির সম্মুখীন করেছে।
গাঙ্গেয় উপত্যকা থেকে বঙ্গীয় অববাহিকাকে পৃথক করার একটি কারণ হচ্ছে, এই অববাহিকা আসাম উপসাগর ভরাট হয়ে যাওয়ার দীর্ঘ সময় পর সেখান থেকে উৎপন্ন হয়েছে। অন্যদিকে আরেকটি কারণ হচ্ছে, এই অববাহিকায় গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদের মিলিত প্রবাহ দ্বারা পর্যায়ক্রমিক সৃষ্ট বদ্বীপসমূহ গড়ে উঠেছে। সবচেয়ে পুরাতন বদ্বীপটি উত্তরে বরেন্দ্রভূমি ও মধুপুর গড় - এই দুই সোপানভূমির পশ্চাতে পরিত্যক্ত হয়েছে। অন্যান্য পুরাতন বদ্বীপসমূহ অপেক্ষাকৃত নতুন নতুন পলি সঞ্চয়নের নিচে চাপা পড়েছে অথবা প্রধান প্রধান নদীসমূহের বার বার গতিপথ পরিবর্তনের ফলে ক্ষয়প্রাপ্ত/ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। বর্তমানে বঙ্গীয় অববাহিকা দুটি প্রধান প্লাইসটোসিন চত্বর-মধুপুর গড় ও বরেন্দ্রভূমি, গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীপ্রণালীর সক্রিয় প্লাবনভূমি এবং গঙ্গানদী গঠিত মৃতপ্রায় বদ্বীপ ও সুন্দরবনাঞ্চলের অপরিণত বদ্বীপ ধারণ করছে। সমুদ্রমুখী এবং মেঘনা মোহনায় গড়ে ওঠা অনেক উপকূলীয় দ্বীপও এই অববাহিকার অন্তর্ভুক্ত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অববাহিকার গড় উচ্চতা সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় ২ মিটার থেকে হিমালয় পাদদেশের নিকটবর্তী এলাকায় ১০০ মিটারেরও অধিক উচ্চতায় পৌঁছেছে। অববাহিকার অধিকাংশ স্থান গড় সমুদ্রসীমার ৫ মিটার থেকে ১০ মিটার উচ্চতার মধ্যে অবস্থিত, যা পৃথিবীর নিম্ন উচ্চতাবিশিষ্ট সমভূমিসমূহের মধ্যে একটি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে স্বল্প উচ্চতায় অবস্থিতি এই সমভূমিকে সমুদ্রপৃষ্ঠের যেকোন উচ্চতাবৃদ্ধির ঝুঁকির সম্মুখীন করেছে।


এক সময় এই ভূমি ছিল বিশ্বের অন্যতম বন্যপ্রাণিসমৃদ্ধ বৃষ্টিবহুল বনভূমিসমূহের একটি, যেখানে হাতি, বাঘ, বুনোমোষ, তিন প্রজাতির গন্ডার এবং সাত প্রজাতির হরিণ বিচরণ করতো। পরবর্তীতে এই বৃষ্টিবহুল বনরাজির সামান্য কিছু অবশেষ ব্যতীত বাকিটা বিলুপ্তির শিকার হয়েছে। বিদ্যমান বনভূমিসমূহও তাদের মূল বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলেছে, একমাত্র সুন্দরবন তার অকৃত্রিম বৈশিষ্ট্য বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। সুন্দরবন বিশ্বের একমাত্র বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনভূমি। বঙ্গীয় অববাহিকায় আরও রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম ক্রান্তীয় জলাভূমি। মানব বসতি বিস্তারের মাধ্যমে ভূদৃশ্যগত পুরোপুরি পরিবর্তনের পূর্বে জলাভূমিগুলো ছিল সর্বাধিক জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ ক্ষেত্র। এই অববাহিকা বর্তমানে দুই কোটি জনসংখ্যাপূর্ণ দুটি মেগাসিটি ঢাকা ও কলকাতাকে ধারণ করছে।  [ডি.কে গুহ এবং হারুন-অর-রশিদ]
এক সময় এই ভূমি ছিল বিশ্বের অন্যতম বন্যপ্রাণিসমৃদ্ধ বৃষ্টিবহুল বনভূমিসমূহের একটি, যেখানে হাতি, বাঘ, বুনোমোষ, তিন প্রজাতির গন্ডার এবং সাত প্রজাতির হরিণ বিচরণ করতো। পরবর্তীতে এই বৃষ্টিবহুল বনরাজির সামান্য কিছু অবশেষ ব্যতীত বাকিটা বিলুপ্তির শিকার হয়েছে। বিদ্যমান বনভূমিসমূহও তাদের মূল বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলেছে, একমাত্র সুন্দরবন তার অকৃত্রিম বৈশিষ্ট্য বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। সুন্দরবন বিশ্বের একমাত্র বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনভূমি। বঙ্গীয় অববাহিকায় আরও রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম ক্রান্তীয় জলাভূমি। মানব বসতি বিস্তারের মাধ্যমে ভূদৃশ্যগত পুরোপুরি পরিবর্তনের পূর্বে জলাভূমিগুলো ছিল সর্বাধিক জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ ক্ষেত্র। এই অববাহিকা বর্তমানে দুই কোটি জনসংখ্যাপূর্ণ দুটি মেগাসিটি ঢাকা ও কলকাতাকে ধারণ করছে।  [ডি.কে গুহ এবং হারুন-অর-রশিদ]
[[en:Bengal Basin]]
[[en:Bengal Basin]]
[[en:Bengal Basin]]


[[en:Bengal Basin]]
[[en:Bengal Basin]]

০৬:৩১, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

বঙ্গীয় অববাহিকা (Bengal Basin)  পশ্চিমে পশ্চিমবঙ্গ থেকে পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য এবং উত্তরে শিলং মালভূমির পাদদেশ থেকে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর বরাবর বিস্তৃত অববাহিকা। এটি মূলত টারশিয়ারি যুগের শিলাস্তর দিয়ে পরিপূর্ণ, যদিও উত্তরবঙ্গে ভূগর্ভে অতি প্রাচীন পারমিয়ান যুগের শিলাস্তর বিদ্যমান। ভূত্বকীয় ভারতীয় প্লেট (Indian Plate) এবং এশিয়ান প্লেটের (Asian Plate) সংঘর্ষের ফলে বঙ্গীয় অববাহিকার উৎপত্তি হয়েছে। ইয়োসিন উপযুগের শেষাংশে এই সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকে একদিকে টেথিস সাগরের বিলুপ্তি এবং অপরদিকে হিমালয় পর্বতের সৃষ্টি-এই দুটি ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে বঙ্গীয় অববাহিকার জন্ম হয় এবং ক্রমাগতভাবে তা হিমালয় পর্বত থেকে আগত নদীধারা কর্তৃক বাহিত পলিমাটি দ্বারা ভরাট হয়ে বঙ্গীয় বদ্বীপের সৃষ্টি করে।

গাঙ্গেয় উপত্যকা থেকে বঙ্গীয় অববাহিকাকে পৃথক করার একটি কারণ হচ্ছে, এই অববাহিকা আসাম উপসাগর ভরাট হয়ে যাওয়ার দীর্ঘ সময় পর সেখান থেকে উৎপন্ন হয়েছে। অন্যদিকে আরেকটি কারণ হচ্ছে, এই অববাহিকায় গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদের মিলিত প্রবাহ দ্বারা পর্যায়ক্রমিক সৃষ্ট বদ্বীপসমূহ গড়ে উঠেছে। সবচেয়ে পুরাতন বদ্বীপটি উত্তরে বরেন্দ্রভূমি ও মধুপুর গড় - এই দুই সোপানভূমির পশ্চাতে পরিত্যক্ত হয়েছে। অন্যান্য পুরাতন বদ্বীপসমূহ অপেক্ষাকৃত নতুন নতুন পলি সঞ্চয়নের নিচে চাপা পড়েছে অথবা প্রধান প্রধান নদীসমূহের বার বার গতিপথ পরিবর্তনের ফলে ক্ষয়প্রাপ্ত/ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। বর্তমানে বঙ্গীয় অববাহিকা দুটি প্রধান প্লাইসটোসিন চত্বর-মধুপুর গড় ও বরেন্দ্রভূমি, গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীপ্রণালীর সক্রিয় প্লাবনভূমি এবং গঙ্গানদী গঠিত মৃতপ্রায় বদ্বীপ ও সুন্দরবনাঞ্চলের অপরিণত বদ্বীপ ধারণ করছে। সমুদ্রমুখী এবং মেঘনা মোহনায় গড়ে ওঠা অনেক উপকূলীয় দ্বীপও এই অববাহিকার অন্তর্ভুক্ত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অববাহিকার গড় উচ্চতা সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় ২ মিটার থেকে হিমালয় পাদদেশের নিকটবর্তী এলাকায় ১০০ মিটারেরও অধিক উচ্চতায় পৌঁছেছে। অববাহিকার অধিকাংশ স্থান গড় সমুদ্রসীমার ৫ মিটার থেকে ১০ মিটার উচ্চতার মধ্যে অবস্থিত, যা পৃথিবীর নিম্ন উচ্চতাবিশিষ্ট সমভূমিসমূহের মধ্যে একটি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে স্বল্প উচ্চতায় অবস্থিতি এই সমভূমিকে সমুদ্রপৃষ্ঠের যেকোন উচ্চতাবৃদ্ধির ঝুঁকির সম্মুখীন করেছে।

এক সময় এই ভূমি ছিল বিশ্বের অন্যতম বন্যপ্রাণিসমৃদ্ধ বৃষ্টিবহুল বনভূমিসমূহের একটি, যেখানে হাতি, বাঘ, বুনোমোষ, তিন প্রজাতির গন্ডার এবং সাত প্রজাতির হরিণ বিচরণ করতো। পরবর্তীতে এই বৃষ্টিবহুল বনরাজির সামান্য কিছু অবশেষ ব্যতীত বাকিটা বিলুপ্তির শিকার হয়েছে। বিদ্যমান বনভূমিসমূহও তাদের মূল বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলেছে, একমাত্র সুন্দরবন তার অকৃত্রিম বৈশিষ্ট্য বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। সুন্দরবন বিশ্বের একমাত্র বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনভূমি। বঙ্গীয় অববাহিকায় আরও রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম ক্রান্তীয় জলাভূমি। মানব বসতি বিস্তারের মাধ্যমে ভূদৃশ্যগত পুরোপুরি পরিবর্তনের পূর্বে জলাভূমিগুলো ছিল সর্বাধিক জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ ক্ষেত্র। এই অববাহিকা বর্তমানে দুই কোটি জনসংখ্যাপূর্ণ দুটি মেগাসিটি ঢাকা ও কলকাতাকে ধারণ করছে।  [ডি.কে গুহ এবং হারুন-অর-রশিদ]