ফৌজদারি কার্যবিধি
ফৌজদারি কার্যবিধি অপরাধীদের খুঁজে বের করা, তাদের বিচারের জন্য আদালতে সোপর্দ করা এবং অপরাধ দমনের জন্য নির্দিষ্ট কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। সেসব প্রক্রিয়া ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধি বা কোড অব ক্রিমিন্যাল প্রসিডিয়্যার ১৮৯৮-এ নির্দেশ করা হয়েছে। ফৌজদারি আদালত গঠন এবং সেগুলির এখতিয়ার ও ক্ষমতা ছাড়াও কার্যবিধিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে: অভিযুক্ত ও সাক্ষীদের প্রতি সমন জারি করা, অভিযুক্ত ও সাক্ষীদের গ্রেফতারের জন্য পরোয়ানা জারি করা, পলাতক অভিযুক্তকে ফেরার ঘোষণা করা এবং তার সম্পত্তি ক্রোক করা, তল্লাশি পরোয়ানা, অন্যায়ভাবে আটককৃত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা; তল্লাশির সঙ্গে সম্পৃক্ত সাধারণ বিধিব্যবস্থা, বেআইনি সমাবেশে বাধাদান, জনজীবনে উৎপাত ও শান্তিভঙ্গ, স্থাবর সম্পত্তির দখল নিয়ে বিরোধ, অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে এবং অপরাধীদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশের ক্ষমতা, অপরাধ সংগঠনের ব্যাপারে পুলিশের নিকট অভিযোগ পেশ এবং তদন্ত চালানো ও অপরাধীদের ফৌজদারিতে সোপর্দ করার ক্ষেত্রে পুলিশের ক্ষমতা, পুলিশ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অথবা ব্যক্তি কর্তৃক দায়েরকৃত ফরিয়াদ অথবা তার নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক বিচারার্থ মকদ্দমা গ্রহণ, তদন্তের স্থান, ম্যাজিস্ট্রেট এবং দায়রা জজ কর্তৃক মামলাসমূহের বিচারকার্য, মামলার দ্রুত বা সংক্ষিপ্ত বিচার, তদন্ত ও বিচারকার্যের সাধারণ বিধানবলি, রায় প্রদান, মৃত্যুদন্ড অনুমোদন বা বহাল করণের জন্য হাইকোর্ট বিভাগে পেশ, রায় ও আদেশ কার্যকরকরণ, সাময়িকভাবে দন্ড স্থগিতকরণ, দন্ডাদেশ মওকুফ ও হ্রাসকরণ, আদালতের বিচারে পূর্বে খালাস অথবা পূর্বে দোষী প্রতিপাদনের ফলাফল, রায় আদেশ ও দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীল, বরাত ও পুনর্বিচার, পাগলদের বিচার, বিচার প্রশাসনকে প্রভাবিত করে এমন অপরাধের মকদ্দমা, স্ত্রী ও সন্তানদের ভরনপোষণ, পুলিশী হাজত অথবা ব্যক্তিগত আটক অবস্থা থেকে বিনাবিচারের আটক ব্যক্তিদের মুক্তির জন্য পেশকৃত হেবিয়াস কর্পাসের ভিত্তিতে প্রদত্ত নির্দেশ, ফৌজদারি আদালতের সরকারি উকিলদের নিয়োগ কার্যাবলি, অভিযুক্তদের জামিন, সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণের জন্য কমিশন নিয়োগ করা, সাক্ষ্য সংক্রান্ত বিশেষ বিধান, মুচলেকা, সম্পত্তি বিক্রয়, এক আদালত থেকে অন্য আদালতে মামলা স্থানান্তর, নিয়ম বহির্ভূত মকদ্দমা এবং স্থানীয় পরিদর্শন, বিচার বিষয়ের মীমাংসায় সঠিক সাক্ষ্য হাজিরের (সমনের) নির্দেশ দানে আদালতের ক্ষমতা অথবা আদালতে উপস্থিত যেকোন ব্যক্তির সাক্ষ্য বা জবানবন্দি গ্রহণ, আদালতের অভিমত প্রকাশের পদ্ধতি, হাইকোর্ট বিভাগের সহজাত ক্ষমতা ইত্যাদির ন্যায় বিবিধ বিষয়।
এই কার্যবিধির বিধান সম্পর্ক সম্যক জ্ঞান না থাকলে কোন উকিল কিংবা কোন সাধারণ নাগরিক কোন ফৌজদারি মামলা সাফল্যের সঙ্গে রুজু করতে, মামলা চালাতে বা মক্কেলের পক্ষে যথার্থ ভূমিকা পালন করতে পারেন না, এমন কি একজন ম্যাজিস্ট্রেট মামলার বিচারকার্য যথাযথভাবে পরিচালনা এবং এর নিষ্পত্তি করতে পারেন না। একজন ব্যক্তির জানা আবশ্যক যে, কোন ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট অভিযোগ পেশ করতে হবে বা মামলা দায়ের করতে হবে অথবা কোন থানায় এজাহার করতে হবে। যে ম্যাজিস্ট্রেট অথবা যে থানার অধিক্ষেত্র বা এলাকায় অপরাধ সংগঠিত হয়েছে সব সময়েই সেই ম্যাজিস্ট্রেট অথবা সেই থানায় অভিযোগ করতে হবে। কোন অভিযোগ গ্রহণের পর ম্যাজিস্ট্রেট ফরিয়াদীর এবং তার উপস্থিত সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন অথবা মামলার তদন্ত করেন এবং মামলাটি বিচারার্থ গ্রহণ করেন অথবা অভিযোগটি খারিজ করে দেন। অপর দিকে একটি অপরাধ সম্বন্ধে এজাহার গ্রহণের পর পুলিশ মামলাটির তদন্ত করে এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করে। ম্যাজিস্ট্রেট অভিযুক্তকে অভিযোগ থেকে মুক্তি দিতে পারেন অথবা পুলিশের প্রতিবেদনের প্রকৃতি অনুযায়ী অভিযুক্তের বিচারার্থ অপরাধটি গ্রহণ করতে পারেন। বিচারার্থ মামলা গ্রহণ করার পর ম্যাজিস্ট্রেটকে সমন বা পরোয়ানা জারির মাধ্যমে অভিযুক্তকে আদালতে হাজির করার ব্যবস্থা করতে হয়। যেক্ষেত্রে অভিযুক্ত পলাতক থাকে বা ফেরার হয়ে যায় সেক্ষেত্রে তার সম্পত্তি ক্রোক করার নির্দেশ প্রদান করতে হয়। যদি এ ব্যবস্থায়ও অভিযুক্তকে হাজির করা সম্ভব না হয় তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট অভিযুক্তের নাম সরকারি গেজেট এবং জাতীয় দৈনিকসমূহে প্রকাশ করে থাকেন। যদি মামলাটি ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক বিচারের যোগ্য হয় তাহলে তিনি এর বিচার করতে পারেন অথবা বিচারের জন্য তার অধীনস্থ অন্য কোন ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট প্রেরণ করতে পারেন। যদি মামলাটি দায়রা আদালত কর্তৃক বিচারের যোগ্য হয় তাহলে তিনি মামলাটি বিচারের জন্য দায়রা জজের নিকট প্রেরণ করেন। দায়রা জজ নিজেই মামলার বিচারকার্য পরিচালনা করতে পারেন অথবা মামলাটি বিচারের জন্য তিনি অতিরিক্ত দায়রা জজ অথবা সহকারি দায়রা জজের নিকট প্রেরণ করতে পারেন। ম্যাজিস্ট্রেট অথবা জজ তখন সাক্ষ্য প্রমাণ গ্রহণের মাধ্যমে মামলার বিচারকার্য সম্পন্ন করেন এবং অভিযুক্তকে অপরাধী সাব্যস্ত অথবা খালাস দানের রায় প্রদান করেন। অপরাধী সাব্যস্ত একজন আসামী পরবর্তী উচ্চতর আদালতে আপীল করতে পারেন। আপীল আদালত উক্ত মামলার আপীল শুনানি গ্রহণ করেন। খালাসের আদেশের বিরুদ্ধে আপীল অথবা আদালতে পুনর্বিচারের জন্য আবেদন দাখিল করা যায়। একটি ফৌজদারি মকদ্দমা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ফৌজদারি কার্যবিধিতে বর্ণিত প্রক্রিয়া দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। [কাজী এবাদুল হক]