ফুলবাড়ী উপজেলা (কুড়িগ্রাম)

ফুলবাড়ী উপজেলা (কুড়িগ্রাম জেলা)  আয়তন: ১৫৬.৬১ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°৩২´ থেকে ২৬°০৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°২৮´ থেকে ৮৯°৪০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য, দক্ষিণে কুড়িগ্রাম সদর, রাজারহাট ও লালমনিরহাট সদর উপজেলা, পূর্বে নাগেশ্বরী উপজেলা, পশ্চিমে লালমনিরহাট সদর উপজেলা। ছিটমহল ৩।

জনসংখ্যা ১৬০২৫০; পুরুষ ৭৮৫৬৮, মহিলা ৮১৬৮২। মুসলিম ১৪৩৪৪৭, হিন্দু ১৬৭৬৩, খ্রিস্টান ৬ এবং অন্যান্য ৩৪।

জলাশয় প্রধান নদী: ধরলা, নীলকমল।

প্রশাসন ফুলবাড়ী থানা গঠিত হয় ১৯১৪ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ৪৮ ১৬৬ ১২৮৯৫ ১৪৭৩৫৫ ১০২৩ ৪৭.৯ ৪৪.৫
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৮.৭৪ ১২৮৯৫ ১৪৭৫ ৪৭.৯
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কাশীপুর ৫৪ ৬৮১৯ ১৫৪৪৫ ১৫৬৯০ ৪৩.৯
নাওডাঙ্গা ৬৭ ৬৪১৩ ১০৯৪০ ১১৬০৭ ৩৯.১
ফুলবাড়ী ৪০ ৫৮৮২ ১৫৬০৩ ১৬৩৫৩ ৪৬.৭
বড়ভিটা ১৩ ৮১৩৭ ১৩৭৮৮ ১৪৬২১ ৪৭.০
ভাঙ্গামোড় ২৭ ৬৬৫২ ১৪৪৮৭ ১৪৬৪২ ৪৭.৬
শিমুলবাড়ী ৮১ ৪৭৯৮ ৮৩০৫ ৮৭৬৯ ৪১.৪

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ বিষ্ণু মন্দির, নাওডাঙ্গায় পরিত্যক্ত জমিদার বাড়ি ও মন্দির।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাক সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান (ইপিআর) শহীদ হন। ২০শে এপ্রিল ধরলা নদীর কলাখাওয়া ঘাট দিয়ে পাকবাহিনী ফুলবাড়ী ঢোকার চেষ্টা করলে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে তারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে উপজেলার কুলাঘাটে মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি সেনাদের ২০-২৫ জনের একটি দলকে এম্বুশের মাধ্যমে প্রতিহত করে এবং ১২ জন পাকসেনাকে পাকড়াও করে। মুক্তিযুদ্ধের অন্যান্য ঘটনার মধ্যে কাউয়াহাগা ঘাট যুদ্ধ এবং কলাখাওয়া যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য।

বিস্তারিত দেখুন ফুলবাড়ী উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৫।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২৬১, মন্দির ১১।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৪.৮%; পুরুষ ৫০.০%, মহিলা ৩৯.৮%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ফুলবাড়ী ডিগ্রি কলেজ (১৯৭৩), নাওডাঙ্গা স্কুল এন্ড কলেজ (১৯১৯), ফুলবাড়ী জসিমিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৮), কুরসা ফুরসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৪০), শাহবাজার এ এইচ ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৫৬), নাওডাঙ্গা ডিএস দাখিল মাদ্রাসা (১৯৬৯)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান  লাইব্রেরি ৩, ক্লাব ১১, সিনেমা হল ১।

বিনোদন কেন্দ্র ফুলসাগর, নাওডাঙ্গা জমিদার বাড়ি, ধরলা বাঁধ।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৪.২৮%, অকৃষি শ্রমিক ৫.১৮%, শিল্প ০.২৫%, ব্যবসা ৯.৩১%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৭০%, চাকরি ৩.৮১%, নির্মাণ ০.৬৫%, ধর্মীয় সেবা ০.১৮%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.১৭% এবং অন্যান্য ৪.৪৭%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৭.৯৫%, ভূমিহীন ৪২.০৫%। শহরে ৪৯.৫৭% এবং গ্রামে ৫৮.৬৬% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, পাট, আলু, পান, সরিষা, পিঁয়াজ, রসুন, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি নীল, ডেমশি, চীনা ও আউশ ধান।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, লিচু, পেঁপে, জাম, কামরাঙ্গা, সুপারি, লটকন।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার হ্যাচারি ২।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১০০.৩৪ কিমি; কাঁচারাস্তা ৪১২.৭৪ কিমি; নৌপথ ২ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়ার গাড়ি, গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা বিসুকট ফ্যাক্টরি, আইস ফ্যাক্টরি।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, মৃৎশিল্প, পাটশিল্প, সূচিশিল্প, সৌখিন হাতপাখা, বাঁশের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৬। বালার হাট, ফুলবাড়ী হাট, খড়িবাড়ি হাট ও গঙ্গার হাট উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  ধান, পাট, পান, পিঁয়াজ, সুপারি, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১৪.৭% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৮.৫%, ট্যাপ ০.১% এবং অন্যান্য ১.৪%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৭২.৩% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২১.০% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৬.৭% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৩, ক্লিনিক ১।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে এ উপজেলায় বহু লোক খাদ্যাভাবে প্রাণ হারায়। ১৯৮৮ সালের বন্যায় এ অঞ্চলের ফসল ও গবাদিপশুর ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়।

এনজিও আরডিআরএস, ব্র্যাক, সলিডারিটি। [মীর্জা মো. নাসির উদ্দিন]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ফুলবাড়ী উপজেলার সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।