ফুলছড়ি উপজেলা

ফুলছড়ি উপজেলা (গাইবান্ধা জেলা)  আয়তন: ৩১৪.০৩ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°০৬´ থেকে ২৫°২৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৩৪´ থেকে ৮৯°৪৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে গাইবান্ধা সদর উপজেলা, দক্ষিণে সাঘাটা ও ইসলামপুর উপজেলা, পূর্বে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা, পশ্চিমে গাইবান্ধা সদর ও সাঘাটা উপজেলা। উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা চরাঞ্চল।

জনসংখ্যা ১৬৫৩৩৪; পুরুষ ৮২৫২৩, মহিলা ৮২৮১১। মুসলিম ১৫৯০৬০, হিন্দু ৫৭৭৩, বৌদ্ধ ১, খ্রিস্টান ১ এবং অন্যান্য ৪৯৯।

জলাশয় প্রধান নদ-নদী: ব্রহ্মপুত্র, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, যমুনা।

প্রশাসন ফুলছড়ি থানা গঠিত হয় ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৮৫৫ এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ৭৮ ৮৫ ৬৪০১ ১৫৮৯৩৩ ৫২৬ ৪২.৮ ৩০.৮
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১১.০৮ ৬৪০১ ৫৭৮ ৪২.৮
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
উড়িয়া ৮৩ ৫৮৩৬ ৮৪৫৮ ৮৫৯৯ ৩৩.৫
উদাখালী ৭১ ৫১৭১ ১২৩২৮ ১২৯৭৬ ৪১.৭
এরেণ্ডাবাড়ী ১১ ২১৫২৫ ১৪৫৩০ ১৪৫৪৬ ২৭.০
কাঞ্চিপাড়া ৫৯ ৬৬০৮ ১৩২৪২ ১৩৮২৫ ৪২.১
গজারিয়া ৪৭ ৭১১৮ ৯৭৫০ ৯৫৭২ ৩২.৪
ফজলুপুর ২৩ ১৮১০৪ ১১৪২৭ ১১১৫১ ২২.৯
ফুলছড়ি ৩৫ ১৩২৩৮ ১২৭৮৮ ১২১৪২ ১৭.৭

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

ঐতিহাসিক ঘটনা ১৮৫৬ সালে উপজেলার সর্দারের চরে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর আহ্বানে তিন দিনব্যাপী কৃষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৪৬ সালে উপজেলায় তেভাগা আন্দোলন সংঘটিত হয়।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে এ উপজেলায় ব্যাপক গণহত্যা, নারী নির্যাতন, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। উড়িয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে রাজাকার ও পাকবাহিনীর এক লড়াইয়ে বেশ কয়েকজন রাজাকার ও পাকসেনা নিহত হয় এবং বিপুল অস্ত্রশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। ফজলুপরে ১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৩ ডিসেম্বর ফুলছড়ি থানা আক্রমণ করে মুক্তিযোদ্ধারা বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদ হস্তগত করে। ৪ ডিসেম্বর ফুলছড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে এক লড়াইয়ে ২৭ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৯ ডিসেম্বর ফুলছড়ি উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়। উপজেলায় ২টি বধ্যভূমি (ফুলছড়ি বধ্যভূমি, কাইয়ারহাট বধ্যভূমি) ও ১টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে; এবং ১টি শহীদ মিনার স্থাপিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন ফুলছড়ি উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৬।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২৪৫, মন্দির ৬।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩১.২%; পুরুষ ৩৪.৬%, মহিলা ২৭.৯%। কলেজ ১, উচ্চ বিদ্যালয় ৮, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬৯, মাদ্রাসা ১৫। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ফুলছড়ি পাইলট হাইস্কুল (১৯৪০), কাঞ্চিপাড়া একাডেমী (১৯৬০)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ৯, খেলার মাঠ ৮, মহিলা সমিতি ৫।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৫.১৫%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৩৫%, শিল্প ০.৫২%, ব্যবসা ৮.১১%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৪৯%, চাকরি ৩.৪৬%, নির্মাণ ১.২৩%, ধর্মীয় সেবা ০.২২%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৪৪% এবং অন্যান্য ৫.০৩%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬০.০৩%, ভূমিহীন ৩৯.৯৭%। শহরে ২৪.৫৩% এবং গ্রামে ৬১.৭১% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আখ, ভুট্টা, পাট, শাকসবজি, মাষকলাই, পিঁয়াজ, মরিচ, সরিষা, চীনাবাদাম।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি যব, কাউন, মিষ্টিআলু।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ২১২, গবাদিপশু ২৮, হাঁস-মুরগি ৪৪, হ্যাচারি ১৫।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৩৩.৪৩ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ২.৯৩ কিমি, কাঁচারাস্তা ২২০.৬৫ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়ার গাড়ি, গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা ধানকল, স’মিল, ছাপাখানা।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, বিড়িশিল্প, দারুশিল্প, বেতের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১২, মেলা ২। কাঞ্চিপাড়া হাট, উদাখালী হাট, ফুলছড়ি হাট এবং ফুলছড়ি বাজারের অষ্টমী মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   সরিষা, চীনাবাদাম, মাষকলাই, পিঁয়াজ, মরিচ, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসুচির আওতাধীন। তবে ২৩.৬% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৪.৩%, ট্যাপ ০.১% এবং অন্যান্য ৫.৬%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৩৯.৭% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪১.৬% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১৮.৭% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ১, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৩, স্যাটেলাইট ক্লিনিক ৪২।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র এনজিও ব্র্যাক, কেয়ার, প্রশিকা।  [জহুরুল কাইয়ুম]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ফুলছড়ি উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।