প্রামাণ্যচিত্র: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
২০ নং লাইন: ২০ নং লাইন:
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্যচিত্র নির্মিত হয়, যার মধ্যে ছিল জহির রায়হানের পরিচালনায় স্টপ জেনোসাইড, এস সুকদেবের নাইন মান্থস টু ফ্রিডম, আলমগীর কবিরের লিবারেশন ফাইটার্স, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে, বাবুল চৌধুরীর ইনোসেন্ট মিলিয়নস, বিনয় রায়ের রিফুইজি ৭১, রবার্ট রজার্সের দ্য কান্ট্রি মেড ফর ডিজাস্টার, ভানিয়া কেউলে-এর মেজর খালেদ’স ওয়ার, নাগিসা ওশিমার জয় বাংলা ও রহমান: দ্য ফাদার অব নেশন, এইচ এস আদভানী, সি এস কাউল, ডি এস সাইনি, রঘুনাথ শেঠ, পান্ডুরাং রেভাঙ্কর, পি এন ভি রাও, এস টি বার্কলে হিল, মুশির আহমেদ ও জি আর ঠাকুরের পরিচালনায় লুট এন্ড লাস্ট এবং ব্রেইন টাগের সংকলন ও সম্পাদনায় ডেটলাইন বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের শিল্পীদের অংশগ্রহণ বিষয়ে মার্কিন সাংবাদিক লিয়ার লেভিনের তোলা প্রামাণ্যচিত্রের বাছাই করা অংশ দিয়ে তারেক মাসুদ ও ক্যাথেরিন মাসুদ নির্মাণ করেছেন মুক্তির গান। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণে বিশেষ অগ্রগতি হয়। সরকারি উদ্যোগে চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু’র মতো প্রামাণ্যচিত্র যেমন নির্মিত হয়েছে তেমনি বেসরকারি উদ্যোগে বিপুল সংখ্যক প্রামাণ্যচিত্র তৈরি হয়েছে। বিষয় বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ এসব প্রামাণ্যচিত্রের মধ্যে রয়েছে নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু অধিকার, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধ, মানবাধিকার, পরিবেশ সংরক্ষণসহ অন্যান্য বিষয়। স্বাধীন বাংলাদেশের কিছু প্রামাণ্যচিত্র: ম. হামিদের ল্যাথারিজম (১৯৮২/১৯৮৬), মানজারে হাসীন, তানভীর মোকাম্মেল ও তারেক মাসুদের কৃষ্ণগরে একদিন (১৯৯৩), মানজারে হাসীন, মুহাম্মদ জাহাঙ্গীরের রাস্তার শিশু (১৯৯৮), ফরিদুর রহমানের উত্তরের আদিবাসী (১৯৯৯), তারেক ও ক্যাথরিন মাসুদের মুক্তির কথা, (১৯৯৯), নারীর কথা (২০০০) রাজিয়া কাদিরের সুন্দরবনের লোকালয়ে দিনরাত্রি (২০০০), আমিনুল ইসলামের সামটা বৃত্তান্ত (২০০০), মঈনুল হুদার লোকমান ও তার স্বপ্ন বাস্তবতা (২০০১), ইয়াসমিন কবীরের স্বাধীনতা (২০০২), বাবুল বিশ্বাসের মুক্তি-সংগ্রামে বাংলাদেশ (২০০৪, ধারাবাহিক পর্ব) এবং ডাকটিকিট: বাংলাদেশ (২০০৬, ডাকটিকিট বিষয়ক বাংলাদেশের প্রথম প্রামাণ্যচিত্র), রিবণ খন্দকারের বেগম (২০০৫), মানজারে হাসীনের স্মৃতির ঠিকানা (২০০৬), ফৌজিয়া খানের গঠিত হই শূন্যে মিলাই (২০০৭), শাহীন দিল রিয়াজের লোহাখোর (২০০৭), তানভীর মোকাম্মেলের স্বপ্নভূমি (২০০৭)। সরকারিভাবে নির্মিত অধিকাংশ প্রামাণ্যচিত্রে অতিরিক্ত সরকারি হস্তক্ষেপ এবং নান্দনিকতার চেয়েও রাজনৈতিক প্রচারণা বেশি গুরুত্ব পায়।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্যচিত্র নির্মিত হয়, যার মধ্যে ছিল জহির রায়হানের পরিচালনায় স্টপ জেনোসাইড, এস সুকদেবের নাইন মান্থস টু ফ্রিডম, আলমগীর কবিরের লিবারেশন ফাইটার্স, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে, বাবুল চৌধুরীর ইনোসেন্ট মিলিয়নস, বিনয় রায়ের রিফুইজি ৭১, রবার্ট রজার্সের দ্য কান্ট্রি মেড ফর ডিজাস্টার, ভানিয়া কেউলে-এর মেজর খালেদ’স ওয়ার, নাগিসা ওশিমার জয় বাংলা ও রহমান: দ্য ফাদার অব নেশন, এইচ এস আদভানী, সি এস কাউল, ডি এস সাইনি, রঘুনাথ শেঠ, পান্ডুরাং রেভাঙ্কর, পি এন ভি রাও, এস টি বার্কলে হিল, মুশির আহমেদ ও জি আর ঠাকুরের পরিচালনায় লুট এন্ড লাস্ট এবং ব্রেইন টাগের সংকলন ও সম্পাদনায় ডেটলাইন বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের শিল্পীদের অংশগ্রহণ বিষয়ে মার্কিন সাংবাদিক লিয়ার লেভিনের তোলা প্রামাণ্যচিত্রের বাছাই করা অংশ দিয়ে তারেক মাসুদ ও ক্যাথেরিন মাসুদ নির্মাণ করেছেন মুক্তির গান। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণে বিশেষ অগ্রগতি হয়। সরকারি উদ্যোগে চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু’র মতো প্রামাণ্যচিত্র যেমন নির্মিত হয়েছে তেমনি বেসরকারি উদ্যোগে বিপুল সংখ্যক প্রামাণ্যচিত্র তৈরি হয়েছে। বিষয় বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ এসব প্রামাণ্যচিত্রের মধ্যে রয়েছে নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু অধিকার, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধ, মানবাধিকার, পরিবেশ সংরক্ষণসহ অন্যান্য বিষয়। স্বাধীন বাংলাদেশের কিছু প্রামাণ্যচিত্র: ম. হামিদের ল্যাথারিজম (১৯৮২/১৯৮৬), মানজারে হাসীন, তানভীর মোকাম্মেল ও তারেক মাসুদের কৃষ্ণগরে একদিন (১৯৯৩), মানজারে হাসীন, মুহাম্মদ জাহাঙ্গীরের রাস্তার শিশু (১৯৯৮), ফরিদুর রহমানের উত্তরের আদিবাসী (১৯৯৯), তারেক ও ক্যাথরিন মাসুদের মুক্তির কথা, (১৯৯৯), নারীর কথা (২০০০) রাজিয়া কাদিরের সুন্দরবনের লোকালয়ে দিনরাত্রি (২০০০), আমিনুল ইসলামের সামটা বৃত্তান্ত (২০০০), মঈনুল হুদার লোকমান ও তার স্বপ্ন বাস্তবতা (২০০১), ইয়াসমিন কবীরের স্বাধীনতা (২০০২), বাবুল বিশ্বাসের মুক্তি-সংগ্রামে বাংলাদেশ (২০০৪, ধারাবাহিক পর্ব) এবং ডাকটিকিট: বাংলাদেশ (২০০৬, ডাকটিকিট বিষয়ক বাংলাদেশের প্রথম প্রামাণ্যচিত্র), রিবণ খন্দকারের বেগম (২০০৫), মানজারে হাসীনের স্মৃতির ঠিকানা (২০০৬), ফৌজিয়া খানের গঠিত হই শূন্যে মিলাই (২০০৭), শাহীন দিল রিয়াজের লোহাখোর (২০০৭), তানভীর মোকাম্মেলের স্বপ্নভূমি (২০০৭)। সরকারিভাবে নির্মিত অধিকাংশ প্রামাণ্যচিত্রে অতিরিক্ত সরকারি হস্তক্ষেপ এবং নান্দনিকতার চেয়েও রাজনৈতিক প্রচারণা বেশি গুরুত্ব পায়।


চলচ্চিত্রের একটি ধারা হিসেবে প্রামাণ্যচিত্র আমাদের বাস্তবজীবনের গুরুত্ব বহন করে বিধায় এ শিল্পমাধ্যমটি সুপরিকল্পিতভাবে এগিয়ে নেওয়া দরকার। এক্ষেত্রে সরকারি নিয়ন্ত্রণমুক্ত প্রামাণ্যচিত্রের ভূমিকা অপরিসীম।
চলচ্চিত্রের একটি ধারা হিসেবে প্রামাণ্যচিত্র আমাদের বাস্তবজীবনের গুরুত্ব বহন করে বিধায় এ শিল্পমাধ্যমটি সুপরিকল্পিতভাবে এগিয়ে নেওয়া দরকার। এক্ষেত্রে সরকারি নিয়ন্ত্রণমুক্ত প্রামাণ্যচিত্রের ভূমিকা অপরিসীম। [খন্দকার মাহমুদুল হাসান]


[খন্দকার মাহমুদুল হাসান]
[[en:Pramanyachitra]]
[[en:Pramanyachitra]]
[[en:Pramanyachitra]]


[[en:Pramanyachitra]]
[[en:Pramanyachitra]]

০৯:০৩, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

প্রামাণ্যচিত্র  চলচ্চিত্র শিল্পের একটি ধারা। প্রামাণ্যচিত্রে বাস্তব ঘটনাকে চলচ্চিত্রের মাধ্যমে রূপদান করা হয়। বিশ্ব-চলচ্চিত্রের প্রথম দিকে নির্মিত চলচ্চিত্রসমূহ ছিল বাস্তব ঘটনানির্ভর। এগুলি প্রামাণ্যচিত্রের আদি নিদর্শন ছিল। ১৮৯৫ সালের ১২ ডিসেম্বর ফ্রান্সে প্রথম বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর ৬ মাসের মধ্যে ভারতের মুম্বাইয়ে ১৮৯৬ সালের ৭ জুলাই সিনোমাটোগ্রাফি শিরোনামে ৬টি চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী হয়। সেগুলির প্রতিটিই ইউরোপে চিত্রায়িত এবং বিশ্বচলচ্চিত্রের আদি নিদর্শন। ছবিগুলির নাম Entry of cinematography, Arrival of a Train, The Sea Bath, A Demolition, Workers Leaving the Factory, Ladies and Soldiers on Wheels।

এ উপমহাদেশে প্রথম প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেন হীরালাল সেন (১৮৬৬-১৯১৭)। তাঁর জন্ম বাংলাদেশের মানিকগঞ্জের বগজুড়ি গ্রামে। তিনি প্রথম যেসব প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেন, সেগুলির মধ্যে একাধিক চলচ্চিত্রের চিত্রায়ন হয়েছিল তৎকালীন পূর্ববঙ্গে তথা আজকের বাংলাদেশে। তাঁর দু&&ট প্রামাণ্যচিত্রের নাম ‘বগজুড়ী গ্রামের বিবাহোৎসব’ (১৯০২-১৯০৩) ও ‘বগজুড়ী গ্রামের স্নানার্থী’ (১৯০২-১৯০৩)।

প্রামাণ্যচিত্র কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন জন গিয়ারসন। তিনি ১৯২৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্ক সান পত্রিকায় দি মুভিগোয়ার ছদ্মনামে রবার্ট ফ্ল্যাহার্টির চলচ্চিত্র মোয়ানা (১৯২৬) সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে ‘ডকুমেন্টারি’ শব্দটি ব্যবহার করেন। ১৯৩০ সালে লেখা ফার্স্ট প্রিন্সিপলস্ অব ডকুমেন্টারি ফিল্ম শীর্ষক রচনাতে গিয়ারসন ডকুমেন্টারি সম্পর্কে আলোচনাও করেন। সাধারণভাবে প্রামাণ্যচিত্র কথাটি দিয়ে কোনো বাস্তব ঘটনার চলচ্চিত্রায়িত অবস্থাকে বোঝায়। অধুনা ভিডিও ও ডিজিটাল পদ্ধতিতেও প্রামাণ্যচিত্র নির্মিত হচ্ছে। প্রামাণ্যচিত্রে ঘটনা বর্ণনার সময় একটি কাল্পনিক চরিত্র বাস্তব চরিত্রের ভূমিকায় অভিনয় করেন। কিন্তু ঘটনাকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যা বাস্তব চরিত্রের কর্মকান্ডকে প্রতিফলিত করে। ফলে প্রামাণ্যচিত্রে বাস্তবকে অনুভব করা যায়। এদিক বিবেচনায় প্রামাণ্যচিত্রকে ‘বাস্তবতার সৃজনশীল রূপায়ণ’ বলা যায়। একটি নির্দিষ্ট বন্দর বা শহরের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্রকে এপর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। তাই প্রামাণ্যচিত্র কেবল ঘটনার চলচ্চিত্রায়নই নয়। প্রামাণ্যচিত্র নানা ধরণের হতে পারে। বাস্তবতার সৃজনশীল রূপায়ণ ঘটেছে বিশ্বখ্যাত এমন প্রামাণ্যচিত্রের মধ্যে মার্কিন নির্মাতা রবার্ট ফ্ল্যাহার্টির টাবু (১৯২৮-১৯৩১), লুসিয়ানা স্টোরি (১৯৪৮) অন্যতম।

দ্বিতীয় ধরনের প্রামাণ্যচিত্রের মধ্যে রয়েছে সংবাদচিত্র, ভ্রমণচিত্র প্রভৃতি। এগুলি যথার্থই বাস্তব ঘটনার দলিল। হীরালাল সেন এরকম কিছু ঘটনার চলচ্চিত্রায়ন করেন যার মধ্যে ‘দিল্লির করোনেশন দরবার’ (১৯০৩), ‘কোলকাতার করোনেশন দরবার’ (১৯০৩), ‘সুরেন্দ্রনাথের শোভাযাত্রা’ (১৯০৫) উল্লেখযোগ্য। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমলে সরকারের চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা বিভাগ থেকে বিপুলসংখ্যক সংবাদচিত্র নির্মিত হয়েছে। এসব চলচ্চিত্রের প্রধান ঝোঁক সরকারি কর্মকান্ড সম্পর্কে মানুষকে অবহিত রাখা।

তৃতীয় ধরনের প্রামাণ্যচিত্র বিশেষ উদ্দেশ্যে নির্মিত। এতে নির্মাতার পূর্ব নির্ধারিত ধারণা ও প্রবণতার চিত্র ধারণা করা হয়। এটা কখনো কখনো মতাদর্শগত প্রচারণা না হয়ে ঘটনার গুরুত্বের ওপর দৃষ্টি আকর্ষণকারী প্রচারণাও হতে পারে। ১৯১৭ সালে সংঘটিত বলশেভিক বিপ্লবের ওপর আইনসেনস্টাইন নির্মিত অক্টোবর (১৯২৮) সেরকম একটি প্রামাণ্যচিত্র।

বিজ্ঞাপনচিত্রসমূহ বিশেষ উদ্দেশে নির্মিত হয়। অধুনা অল্প সময়ের জন্য প্রচারণাধর্মী কাহিনী নির্ভর বিজ্ঞাপনচিত্র বিপুল সংখ্যায় নির্মিত হচ্ছে। হীরালাল সেন এদেশে বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণ করে এ ধারার সূত্রপাত করেন। ১৯০৩ সালে তিনি প্রথমবারের মতো জবাকুসুম তেল, ম্যালেরিয়ার ওষুধ ও সালসা পিলার বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণ করেন। তবে বিজ্ঞাপনচিত্র ও মতাদর্শগত প্রচারণাধর্মী চিত্রের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান।

১৯২৯ এর দশক থেকে সুনির্দিষ্ট ধারণা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সুচিন্তিত গবেষণা পটভূমি সমৃদ্ধ প্রামাণ্যচিত্র নির্মিত হতে দেখা যায় এবং তাতে বাণিজ্যিক লক্ষ্যও বিবেচনায় থাকে। সম্প্রতি এরকম প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের প্রবণতা বেড়েছে। ইতালির গুয়ালতিয়েরো জ্যাকোপেট্টির প্রামাণ্যচিত্র ওমেন অব দ্য ওয়ার্ল্ড এ শ্রেণির প্রামাণ্যচিত্র।

বিশ শতকের প্রথম দশকেই অবিভক্ত বাংলাদেশের প্রথম প্রামাণ্যচিত্রগুলি নির্মিত হতে শুরু করে। সেগুলির প্রধান নির্মাতা ছিলেন হীরালাল সেন। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর পাকিস্তানে প্রথম প্রামাণ্যচিত্র নির্মিত হয় ১৯৪৮ সালে। সেটির নাম ছিল বার্থ অব পাকিস্তান। একই বছরে নির্মিত হয় এইচ সি হাস্সাম-এর দ্বিতীয় প্রামাণ্যচিত্র। পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ঢাকা সফরের ওপর ইন আওয়ার মিডস্ট নামের একটি প্রামাণ্যচিত্র নাজীর আহমেদের প্রয়াসে সরকারি উদ্যোগে ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে নির্মিত হয়। বলা যায় এটি ১৯৪৭-এর বাংলাদেশে নির্মিত প্রথম প্রামাণ্যচিত্র। কোনোরকম চলচ্চিত্র স্টুডিও ছাড়াই এই প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মিত হয়। লন্ডন থেকে সংগৃহীত নাজীর আহমদের একটি ক্যামেরা দিয়ে ১৯৫৪ সালে নির্মিত হয় প্রথম পর্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জীবনধর্মী প্রামাণ্যচিত্র সালামত। সরকারি উদ্যোগে এটি নির্মিত হয়। এর পরিচালক, চিত্রনাট্য নির্মাতা, সংলাপ ও কাহিনিকার ছিলেন নাজীর আহমেদ। ছবিটি নির্মাণে এ ছবির সুরকার আবদুল আহাদের বিশেষ ভূমিকা ছিল। এতে হাবিব বারকীর সহায়তায় চিত্রগ্রহণ করেন ইকবাল মির্জা। নাজীর আহমদের বাড়ির রাজমিস্ত্রী সালামত-এর দুঃখভরা জীবনের পটভূমিতে তখনকার প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকার সম্প্রসারণের দলিল এ ছবিটি। এক ও চার হাজার ফুটের দুটি ভার্সন ছিল এ ছবির। এ দশকেই বন্যার ওপর আবদুল জববার খান একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেন বলে জানা যায়। ১৯৫৫ সালে সরকারি উদ্যোগে ঢাকার তেজগাঁও শিল্প এলাকার ওপরে হুইল নামের একটি তথ্যচিত্র ছাড়াও কাপ্তাইয়ের প্রাকৃতিক দৃশ্যের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মিত হয়। ভুল কোথায় নামে ঘানি মার্কা সরষের তেলের একটি বিজ্ঞাপনচিত্র রামগুপ্তের পরিচালনায় ১৯৫৬ সালে নির্মিত হয়। পাকিস্তানি আমলে নির্মিত কিছু প্রামাণ্যচিত্রে বাংলাদেশের মানুষ ও প্রকৃতির চিত্র পাওয়া যায়। সেগুলির মধ্যে ছিল সিটি অব ঢাকা, পাকিস্তান প্যানোরমা, সারমনস ইন ব্রিক প্রভৃতি।

রোকেয়া রহমান কবিরের চিত্রনাট্য ও সৈয়দ বজলে হোসেনের পরিচালনায় বাংলাদেশের মন্দির স্থাপত্যে টেরাকোটার ব্যবহারকে উপজীব্য করে নির্মিত সারমনস ইন ব্রিক একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্যচিত্র। উল্লেখ্য, এটি ১৯৬৯ সালে কম্বোডিয়ার নমপেন চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার পায়। ১৯৫৮ সালে তাঁর নির্মিত ওয়ান একার অব ল্যান্ড কান চলচ্চিত্র উৎসবে সার্টিফিকেট অব মেরিট পুরস্কার পায়। তাছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে তাঁর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র নিউ হরাইজন, সিম্ফনি অব সিজনস, লেট ওয়াক টুগেদার ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। উল্লেখ্য, পাকিস্তানি আমলে প্রধানত সরকারি উদ্যোগেই প্রামাণ্যচিত্র নির্মিত হতো।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্যচিত্র নির্মিত হয়, যার মধ্যে ছিল জহির রায়হানের পরিচালনায় স্টপ জেনোসাইড, এস সুকদেবের নাইন মান্থস টু ফ্রিডম, আলমগীর কবিরের লিবারেশন ফাইটার্স, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে, বাবুল চৌধুরীর ইনোসেন্ট মিলিয়নস, বিনয় রায়ের রিফুইজি ৭১, রবার্ট রজার্সের দ্য কান্ট্রি মেড ফর ডিজাস্টার, ভানিয়া কেউলে-এর মেজর খালেদ’স ওয়ার, নাগিসা ওশিমার জয় বাংলা ও রহমান: দ্য ফাদার অব নেশন, এইচ এস আদভানী, সি এস কাউল, ডি এস সাইনি, রঘুনাথ শেঠ, পান্ডুরাং রেভাঙ্কর, পি এন ভি রাও, এস টি বার্কলে হিল, মুশির আহমেদ ও জি আর ঠাকুরের পরিচালনায় লুট এন্ড লাস্ট এবং ব্রেইন টাগের সংকলন ও সম্পাদনায় ডেটলাইন বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের শিল্পীদের অংশগ্রহণ বিষয়ে মার্কিন সাংবাদিক লিয়ার লেভিনের তোলা প্রামাণ্যচিত্রের বাছাই করা অংশ দিয়ে তারেক মাসুদ ও ক্যাথেরিন মাসুদ নির্মাণ করেছেন মুক্তির গান। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণে বিশেষ অগ্রগতি হয়। সরকারি উদ্যোগে চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু’র মতো প্রামাণ্যচিত্র যেমন নির্মিত হয়েছে তেমনি বেসরকারি উদ্যোগে বিপুল সংখ্যক প্রামাণ্যচিত্র তৈরি হয়েছে। বিষয় বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ এসব প্রামাণ্যচিত্রের মধ্যে রয়েছে নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু অধিকার, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধ, মানবাধিকার, পরিবেশ সংরক্ষণসহ অন্যান্য বিষয়। স্বাধীন বাংলাদেশের কিছু প্রামাণ্যচিত্র: ম. হামিদের ল্যাথারিজম (১৯৮২/১৯৮৬), মানজারে হাসীন, তানভীর মোকাম্মেল ও তারেক মাসুদের কৃষ্ণগরে একদিন (১৯৯৩), মানজারে হাসীন, মুহাম্মদ জাহাঙ্গীরের রাস্তার শিশু (১৯৯৮), ফরিদুর রহমানের উত্তরের আদিবাসী (১৯৯৯), তারেক ও ক্যাথরিন মাসুদের মুক্তির কথা, (১৯৯৯), নারীর কথা (২০০০) রাজিয়া কাদিরের সুন্দরবনের লোকালয়ে দিনরাত্রি (২০০০), আমিনুল ইসলামের সামটা বৃত্তান্ত (২০০০), মঈনুল হুদার লোকমান ও তার স্বপ্ন বাস্তবতা (২০০১), ইয়াসমিন কবীরের স্বাধীনতা (২০০২), বাবুল বিশ্বাসের মুক্তি-সংগ্রামে বাংলাদেশ (২০০৪, ধারাবাহিক পর্ব) এবং ডাকটিকিট: বাংলাদেশ (২০০৬, ডাকটিকিট বিষয়ক বাংলাদেশের প্রথম প্রামাণ্যচিত্র), রিবণ খন্দকারের বেগম (২০০৫), মানজারে হাসীনের স্মৃতির ঠিকানা (২০০৬), ফৌজিয়া খানের গঠিত হই শূন্যে মিলাই (২০০৭), শাহীন দিল রিয়াজের লোহাখোর (২০০৭), তানভীর মোকাম্মেলের স্বপ্নভূমি (২০০৭)। সরকারিভাবে নির্মিত অধিকাংশ প্রামাণ্যচিত্রে অতিরিক্ত সরকারি হস্তক্ষেপ এবং নান্দনিকতার চেয়েও রাজনৈতিক প্রচারণা বেশি গুরুত্ব পায়।

চলচ্চিত্রের একটি ধারা হিসেবে প্রামাণ্যচিত্র আমাদের বাস্তবজীবনের গুরুত্ব বহন করে বিধায় এ শিল্পমাধ্যমটি সুপরিকল্পিতভাবে এগিয়ে নেওয়া দরকার। এক্ষেত্রে সরকারি নিয়ন্ত্রণমুক্ত প্রামাণ্যচিত্রের ভূমিকা অপরিসীম। [খন্দকার মাহমুদুল হাসান]