প্রতিষেধক

প্রতিষেধক (Antidote) শব্দটি গ্রিক শব্দ ‘অ্যান্টিডোটন’ থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ ‘প্রতিকার হিসেবে প্রয়োগকৃত’ (একটি ওষুধ বা একটি রাসায়নিক পদার্থ)। প্রতিষেধক মূলত কোনো জৈবিক (ক্ষতিকর গৌণ বিপাকিয় পদার্থ) বা প্রক্রিয়াজাত ক্ষতিকর উপাদানের বিষাক্ত প্রভাব থেকে মুক্তি দেয়। এটি এক ধরনের বিশেষ ফার্মাকোলজিক্যাল বা টক্সিলোকজিক্যাল এজেন্ট যা বিষ বা বিষের প্রভাবকে বিভিন্ন উপায়ে প্রশমিত করে, যেমন- বিষের শোষণ রোধ করে, বিষাক্ত উপাদানের সাথে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে সেই উপাদানটিকে আবদ্ধ ও অকার্যকর করে তোলে, গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি রোধ করে, অথবা বিষাক্ত উপাদানকে অধিকতর বিষাক্ত উপাদানে পরিণত হতে বাধা দেয়। বিস্তৃত পরিসরে, প্রতিষেধক প্রধানত বিষাক্ত পদার্থের গতি-প্রকৃতি পরিবর্তন করে অথবা রিসেপ্টর সাইটগুলিতে তাদের প্রভাব বিস্তারে হস্তক্ষেপ করে। যার ফলে বিষের বিষাক্ততার পরিমাণ ও বিষক্রিয়ার সময়কাল পরিবর্তিত হয়। শরীর থেকে নিষ্ক্রিয় বিষাক্ত উপাদান হ্রাস করার জন্য সাধারণত রাসায়নিকভাবে নিষ্ক্রিয় প্রতিষেধক ব্যবহার করা হয় যা নিষ্ক্রিয় বিষাক্ত উপাদানের সাথে আবদ্ধ হয়ে ‘টক্সিন-অ্যান্টিডোট কমপ্লেক্স’ গঠন করে; যেমন- ভারী ধাতুর বিষক্রিয়ার জন্য একটি চিলেটিং এজেন্ট ব্যবহার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, সায়ানাইড বিষক্রিয়ার জন্য হাইড্রোক্সিকোবালামাইন। অ্যান্টিভেটেডচারকোল হলো একটি অনির্দিষ্ট প্রতিষেধকের উদাহরণ যা এর উচ্চ শোষণ ক্ষমতার মাধ্যমে শরীরে প্রবেশকৃত বিষাক্ত উপাদানের ঘনত্ব কমাতে সক্ষম। এটি এন্টারো-হেপাটিক সঞ্চালন ব্যাহত করে ও মলদ্বারের মাধ্যমে বিষাক্ত উপাদান দেহ থেকে বের করে দেয়।

প্রতিষেধক সাধারণত ব্যবহার কর হয় বিষাক্ত বিপাকসমূহ দেহ থেকে নিষ্কাশনে, বা অতি বিষাক্ত বিপাককে কম বিষাক্ত উপাদানে রূপান্তরিত করার জন্য। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিষেধক বিষের ক্ষতিকারক প্রভাবের বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতিরোধ গড়ে তোলার মাধ্যমে বিষের প্রভাব নিষ্ক্রিয় করে।

বেশিরভাগ প্রতিষেধক শতভাগ কার্যকর নয় কারণ প্রতিষেধক দেওয়া হলেও মৃত্যু ঘটতে পারে। কিছু প্রতিষেধক নিজেই বিষাক্ত এবং সেগুলো সতর্কতার সাথে ব্যবহার করা উচিত। প্রতিষেধক থেকে প্রাপ্ত সুবিধা সাধারণত সময়-নির্ভর এবং কিছু ক্ষেতে প্রভাব অনিশ্চিত। বিষাক্ত উপাদানের মাত্রা কমিয়ে দেয় এমন প্রতিষেধকগুলি অবশ্যই আগে থেকেই দেওয়া উচিত; অন্যদিকে, যেসব প্রতিষেধক বিষাক্ত বিপাকের বিক্রিয়া ঘটায় ও বিষের প্রভাব পরিবর্তন করে, সেগুলো বিভিন্ন সময়ে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করা উচিত।

প্রতিষেধকজনিত চিকিৎসার সময়কাল নির্ভর করে বিষাক্ত উপাদানের ধরণ, পরিমাণ, দেহে প্রবেশপথ, বৈশিষ্ট্য এবং প্রতিষেধক ব্যবহারের সুবিধা বনাম ঝুঁকি ইত্যাদির উপর। [মামুন রশিদ চৌধুরী]