প্রজাপতি

প্রজাপতি  Lepidoptera বর্গের দিবাচর, বড় আকারের আকর্ষণীয় রঙের পতঙ্গ। মথের মতো এদেরও আছে প্যাঁচানো শুঁড়ের মতো মুখোপাঙ্গ। শুঙ্গ ক্লাভেট (clavate) ধরনের। সাধারণত প্রজাপতির শরীর লম্বাটে, উজ্জ্বল রঙের, ওড়ে দিনের বেলা। ‘স্কিপার’ নামের প্রজাপতি মোটাসোটা, ফ্যাকাশে রঙের, শুঙ্গের আগায় একটি হুক-এর মতো গঠন থাকে। পূর্ণবয়স্ক একটি প্রজাপতির মাথার সর্বাধিক লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বড় একজোড়া প্রায় গোলাকার পুঞ্জাক্ষি। পেট বেলনাকার ১০ খন্ডে গঠিত, সর্বশেষ ২-৩ খন্ড যৌনাঙ্গে রূপান্তরিত। একমাত্র চোখ ছাড়া প্রজাপতির গোটাশরীর রোম ও চ্যাপ্টা অাঁশে ঢাকা।

প্রজাপতির রং হতে পারে অাঁশের ওপর সঞ্চিত রঞ্জক দ্বারা গঠিত অথবা আলোর ব্যতিচার বা অপবর্তন দ্বারা সৃষ্ট, যাকে ‘গাঠনিক রং’ (structural colour) বলা হয়। অত্যন্ত সুন্দর কিছুসংখ্যক প্রজাপতির গাঠনিক রং থাকলেও, রঞ্জকঘটিত রঙিন প্রজাপতির সংখ্যাই বেশি। এদের উড়ার প্রকৃতি ও বাসস্থনের ধরন বিবিধ। মনার্ক (monarch) জাতীয় কোন কোন প্রজাপতি উড়তে দক্ষ; আর সর্বত্র দেখা গেলেও অধিকাংশ প্রজাপতিকে সুনির্দিষ্ট আবাসস্থলে দেখা যায়। কোন কোন প্রজাপতি একটি এলাকা নিয়মিত পাহারা দেয়, নিজ প্রজাতির অন্যান্য সদস্য বা অন্য প্রজাতির প্রজাপতির অনুপ্রবেশ ঠেকায়।

যৌনমিলনের পর স্ত্রী প্রজাপতি তার লার্ভার খাদ্য-উদ্ভিদের ওপর এককভাবে বা গুচ্ছবদ্ধ ডিম পাড়ে। অধিকাংশ প্রজাপতির লার্ভা নিঃসঙ্গ থাকলেও কয়েক প্রজাতি নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত দলবদ্ধ থাকে। লার্ভা কান্ড ছিদ্রকারী, শিকারি কিংবা স্বজাতিভোজী হতে পারে। পূর্ণবয়স্ক শুঁয়াপোকা পিউপায় পরিণত হবার পর এক সপ্তাহ থেকে কয়েকমাস উপ্তিকাল কাটিয়ে পরে পূর্ণাঙ্গ প্রজাপতি হয়ে বের হয়। গোটা জীবনচক্রের দৈর্ঘ্য প্রজাতিভেদে ভিন্ন ভিন্ন।

বাংলাদেশের প্রজাতির কয়েকটি প্রজাপতি :(ক)Papilio demoleus (খ)Graphium doson (গ) Pachiliota aristolochiae (ঘ) Chilasa clytia (ঙ) Appias labythea (চ) Catopsilia pomona (ছ) Limentis procris (R) Cepora nerissa (ঝ) Cethosia cyane (ঞ) Loxura atymnus (ট) Danus genutia (ঠ) Danaus chrysippus

প্রজাপতিরা অনেক জাতের ফুলের পরাগযোগ ঘটায়। তারা সৌন্দর্যের জন্যও নন্দিত এবং মূল্যবান পণ্য। পৃথিবীর কোথাও কোথাও প্রজাপতি পূর্ণাবস্থায় ও লার্ভা পর্যায়ে খাদ্য হিসেবে ব্যবহূত হয়। কিছু প্রজাপতি ফল ও ফসলের ক্ষতিকর পতঙ্গের দলভুক্ত।

প্রজাপতিরা সাধারণত ১২টি গোত্রে বিভক্ত। বাংলাদেশে এদের প্রায় ১২৪টি প্রজাতির কথা জানা গেছে। গুরুত্বপূর্ণ প্রজাপতির গোত্রগুলির মধ্যে রয়েছে Papilionidae (সোয়ালোটেইলস), এখানে আছে লেমন বাটারফ্লাই (Papilio demoleus এবং P. polytes)। Pieridae গোত্রের প্রজাপতি সারাদেশে বিস্তৃত। এদের মধ্যে মারাত্মক ক্ষতিকর হলো বাঁধাকপির প্রজাপতি (Pieris brassicae)। Nymphalidae এর প্রজাতিগুলিও বহুদৃষ্ট ও বহুব্যাপ্ত। Junonia-এর কতক প্রজাতি বাহারী গাছের জন্য কিছুটা ক্ষতিকর। Lycaenidae গোত্রের কয়েক ডজন প্রজাতি শনাক্ত করা গেছে। এই গোত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হলো ডালিমের প্রজাপতি (Virachola isocrates)। Hesperiidae (স্কিপার) গোত্রে রয়েছে ধানের এক ক্ষতিকর পতঙ্গ, ধানের স্কিপার (Pelopidas mathias)।

বাড়িঘরের বাগান থেকে ঝোপঝাড় ও বনভূমির সর্বত্র বিভিন্ন পরিবেশে প্রজাপতি দেখা যায়। দেশের উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এলাকার চির-সবুজ ও আধা-চিরসবুজ বন এবং মধুপুরের পত্রমোচী বনে এদের প্রচুর পরিমাণে দেখা যায়। এদের জীবন ব্যবস্থা যেহেতু উদ্ভিদের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত তাই পরিবেশের যেকোন প্রতিকূল পরিবর্তনে এরা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়। কতক প্রজাতি যেহেতু একান্তভাবেই বনাঞ্চলে বাস করে, তাদের উপস্থিতি অথবা অনুপস্থিতি বন পরিবেশের বিদ্যমান অবস্থা সম্বন্ধে ইঙ্গিত বহন করে।  [মোনাওয়ার আহমাদ]