প্রগতি লেখক সংঘ
প্রগতি লেখক সংঘ একটি সাহিত্য সংগঠন। এর প্রতিষ্ঠার পেছনে একটি ধারাবাহিক ইতিহাস আছে। সৈয়দ সাজ্জাদ জহির এবং মুলক রাজ আনন্দ ১৯৩৫ সালের গোড়ার দিকে লন্ডনে ‘ভারতীয় প্রগতি লেখক সংঘ’ নামে একটি সাহিত্য সভা গঠন করেন। পরের বছর ১০ এপ্রিল সাজ্জাদ জহিরের নেতৃত্বে লক্ষ্ণৌতে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘নিখিল ভারত প্রগতি লেখক সংঘ’ এবং জুলাই মাসে পৃথকভাবে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বঙ্গীয় প্রগতি লেখক সংঘ’। এই ধারাবাহিকতায় ১৯৩৯ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় প্রগতি লেখক সংঘ।
সংঘ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যাঁরা পূর্বাপর অবদান রাখেন তাঁরা ছিলেন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী বামপন্থী রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী। তাঁরা সাম্যবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, সামাজিক পশ্চাৎপদতা ও রাজনৈতিক পরাধীনতাকে সাহিত্যের উপাদান করে সমাজের মানুষকে জাগ্রত ও প্রগতিশীল ভাবধারায় উজ্জীবিত করতে চেয়েছিলেন। ঢাকার প্রগতি লেখক সংঘ উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত এরূপ চেতনা ও আদর্শ নিয়েই যাত্রা শুরু করে। এর কর্মীরা সাম্যবাদ ও মানবতাবাদকে মূলমন্ত্র হিসেবে গ্রহণ করেন।
প্রগতি লেখক সংঘের সঙ্গে প্রথম থেকে জড়িত ছিলেন সোমেন চন্দ, সতীশ পাকড়াশী, কিরণশঙ্কর সেনগুপ্ত, রণেশ দাশগুপ্ত, অমৃতকুমার দত্ত, জ্যোতির্ময় সেন প্রমুখ। দক্ষিণ মৈশুন্ডির ‘প্রগতি পাঠাগার’ ছিল তাঁদের মিলনকেন্দ্র। সেখানে সংঘের নিয়মিত সাহিত্যের বৈঠক বসত। বৈঠকে পঠিত প্রবন্ধের একটি সংকলন ক্রান্তি (১৯৪০) প্রকাশিত হয়। সংঘ পাক্ষিক মুখপত্র হিসেবে প্রতিরোধ (জৈষ্ঠ, ১৩৪৯) প্রকাশ করে। বহিরাঙ্গনেও সংঘের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড প্রসারিত ছিল।
১৯৪০ সালে গেন্ডারিয়া হাইস্কুল মাঠে প্রগতি লেখক সংঘ প্রথম সম্মেলন করে। তাতে কাজী আবদুল ওদুদ সভাপতিত্ব করেন। সম্মেলনে রণেশ দাশগুপ্ত সম্পাদক এবং সোমেন চন্দ সহসম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৪১ সালে জার্মান কর্তৃক সোভিয়েট রাশিয়া আক্রান্ত হলে লেখক সংঘ তার প্রতিবাদে ব্যাপ্টিস্ট মিশন হলে ‘সোভিয়েট মেলা’ নামে সপ্তাহব্যাপী এক প্রদর্শনীর আয়োজন করে। ১৯৪২ সালের ৮ মার্চ ফ্যাসিবাদবিরোধী রেল শ্রমিক মিছিলে সংঘের প্রাণপুরুষ সোমেন চন্দ দুষ্কৃতিকারীদের হাতে নিহত হন। সারাদেশে এর তীব্র প্রতিবাদ হয়। যুদ্ধের পর দেশের ও বিশ্বের রাজনীতিতে পরিবর্তন এলে লেখক সংঘের কর্মকান্ড প্রতিরোধের সম্মুখীন হয় এবং ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর কর্মীদের স্থানত্যাগ ও সরকারের নির্যাতনের ফলে প্রগতি লেখক সংঘ বিলুপ্ত হয়ে যায়। [ওয়াকিল আহমদ]