পীরগঞ্জ উপজেলা (রংপুর)

পীরগঞ্জ উপজেলা (রংপুর জেলা)  আয়তন: ৪১১.৩৪ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°১৮´ থেকে ২৫°৩১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°০৮´ থেকে ৮৯°২৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে মিঠাপুকুর উপজেলা, দক্ষিণে পলাশবাড়ী, ঘোড়াঘাট ও নবাবগঞ্জ সদর (দিনাজপুর) উপজেলা, পূর্বে সাদুল্লাপুর উপজেলা, পশ্চিমে মিঠাপুকুর, নবাবগঞ্জ সদর (দিনাজপুর) ও ঘোড়াঘাট উপজেলা।

জনসংখ্যা ৩৮৫৪৯৯; পুরুষ ১৯২০২৫, মহিলা ১৯৩৪৭৪। মুসলিম ৩৫৪৮৬৯, হিন্দু ২৪৯৮০, বৌদ্ধ ১৯৪, খ্রিস্টান ২২৫২ এবং অন্যান্য ৩২০৪।

জলাশয় প্রধান নদী: করতোয়া, আখিরা, যমুনেশ্বরী। পীরগঞ্জকে বিল উপজেলা বলা হয়।

প্রশাসন পীরগঞ্জ থানা গঠিত হয় ১৯১০ সালে। বর্তমানে এটি উপজেলা।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১৫ ৩০৮ ৩৩২ ১৪৯৯৩ ৩৭০৫০৬ ৯৩৭ ৬৫.১ ৪৪.৫
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৬.২৫ ১৪৯৯৩ ২৩৯৯ ৬৫.১
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কাবিলপুর ৪৭ ৭৫০৮ ১৫৫৩৫ ১৫৫৫২ ৪৪.০
কুমেদপুর ৫৪ ৫৭৯৭ ১০৭৭২ ১১১৮২ ৪৮.১
চতরা ৪১ ৮৫৪৩ ১৩৬৮৪ ১৩৭৪৮ ৪৮.১
চৈত্রকুল ৩৫ ৭৪৭০ ১১১৩০ ১১২১২ ৫৫.৭
টুকুরিয়া ৯৫ ৬৬৬৫ ৯৯৩৯ ৯৯৮৬ ৫৩.৫
পাঁচগাছা ৬৩ ৬২২০ ১১৭৯৫ ১২৫৮২ ৪০.৭
পীরগঞ্জ ৬৯ ৫৮৯৪ ১৭৬৮৪ ১৭৫০৮ ৫১.২
বড় আলমপুর ১৬ ৭৯৬১ ১০৪১৯ ১০২৮৩ ৩৮.৯
বড় দরগাহ ২২ ৫৬৭৬ ১৩৪৮৩ ১৩৪৬৭ ৪৯.৯
ভেন্দাবাড়ী ২৮ ৫৯৯৫ ৯৯০৭ ১০৩৩৫ ৪৭.৭
মদনখালী ৫৬ ৬৫৯৬ ১১৭৮৩ ১১৫১৪ ৪১.৪
মিঠাপুর ৫৮ ৬৭৮৫ ১৪৬৭৩ ১৪৭৪৩ ৩৯.৪
রামনাথপুর ৮২ ৮৩৪৬ ১৭৭৭৮ ১৭৮২৩ ৪০.৯
রায়পুর ৭৫ ৫৭৩০ ১১৪৪৯ ১১২১২ ৪২.৯
শনিরহাট ৮৮ ৬৪৬০ ১১৯৯৪ ১২৩২৭ ৩৯.৭

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ  পাটগ্রামের রাজা নীলাম্বরের রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ, শাহ ইসমাইল গাজীর মাযার ও সাতগড়ার সাতটি দুর্গ (বিরাট রাজার গড়, বিরাট রাজার গোগৃহ, কুরু পান্ডবের গড়, নোরা রাজার বাড়ী প্রভৃতি), ঝাড় বিশলা গ্রামে কবি হায়াত মাহমুদের (মধ্যযুগের কবি) বাড়ী ও মাযার, খালাশপীর হাট জামে মসজিদ, দরিয়াপুর তিনগম্বুজ মসজিদ, হাতিবান্দা মসজিদ, রায়পুর জমিদার বাড়ি ও মন্দির, খালিশা গির্জা।

ঐতিহাসিক ঘটনা ১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পীরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় এবং বাজারে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে পূর্ণ হরতাল পালিত হয়। ঐ দিন ছাত্র ও জনসাধারণের মিলিত একটি সভায় বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা না করা পর্যন্ত অবিরাম সংগ্রাম চালিয়ে যাবার আহ্বান জানানো হয় (সৈনিক, ২ মার্চ ১৯৫২)।

মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিকে উপজেলার জনগণ ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে আংরার ব্রিজ ভেঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ায় পাকবাহিনী জেলেপাড়া, উজিরপুর গ্রাম এবং মাদারগঞ্জ হাটে অগ্নি সংযোগ, লুটতরাজ এবং নির্যাতন করে। নভেম্বর মাস থেকে মুক্তিযোদ্ধারা চোরাগুপ্তা হামলা চালায়। এছাড়াও লালদিঘি হতে বড়দরগাহ পর্যন্ত এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা ও পাকসেনাদের কয়েকটি সম্মুখ লড়াই সংঘটিত হয়। উপজেলার আংরার ব্রিজ ও মাদারগঞ্জ হাটে ২টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে।

বিস্তারিত দেখুন পীরগঞ্জ উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৬।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ৫২০, মন্দির ১৩০, মাযার ৮, গির্জা ৬। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: খালাশপীর হাট জামে মসজিদ, হাতীবান্ধা মসজিদ, রায়পুর জমিদার বাড়ি মন্দির।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৫.৪%; পুরুষ ৪৭.৭%, মহিলা ৪৩.১%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: কাদিরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৬), রায়পুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩১), মদনখালী প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯১০), চক করিম প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯২৬)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাপ্তাহিক: বজ্রকণ্ঠ।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান  লাইব্রেরি ১, ক্লাব ৭০, নাট্যদল ২, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের শাখা অফিস ১, সিনেমা হল ৩।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৪.৮৭%, অকৃষি শ্রমিক ২.৭%, শিল্প ০.৫৭%, ব্যবসা ৯.১৭%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৬২%, চাকরি ৩.৬৫%, নির্মাণ ০.৭৬%, ধর্মীয় সেবা ০.১৬%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৮% এবং অন্যান্য ৩.৭%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৭.৯৪%, ভূমিহীন ৪২.০৬%। শহরে ৫৫.৮৫% এবং গ্রামে ৫৮.০১% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, ভূট্টা, আখ, সরিষা, আলু, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি পাট, অড়হর, আউশ ধান।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, জাম, লিচু, পেঁপে, কলা।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার হাঁস-মুরগি ৩০, গবাদিপশু ৩৫, মৎস্য ৩৫।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৮১ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৪১ কিমি, কাঁচারাস্তা ৫৯৭ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি ও গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা ধানকল, করাতকল, তেলকল, ওয়েল্ডিং কারখানা।

কুটিরশিল্প লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, রেশমশিল্প, পাটের কাজ, কাঠের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৭, মেলা ১০। খালাশপীর হাট, ভেন্দাবাড়ী হাট, মাদারগঞ্জ হাট, চতরা হাট, শনিরহাট, টুকুরিয়া হাট, কলোনীর বাজার হাট, কাদিরাবাদ বাজার, বালুয়া বাজার, পীরগঞ্জ বাজার এবং রামনাথপুর বৈশাখী মেলা, জাফরপুরের বউরাণী মেলা, বড়বিল বারুণী মেলা, হরিণ সিংগার দিঘি বারুনী মেলা, ভেন্দাবাড়ী মেলা, ফুলবাড়ি মেলা ও বড় দরগাহ মহররম মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান, গম, আলু, কলা, আখের গুড়, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩০.৮% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদ মাগুরা (খালাশপীর) কয়লাখনি।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৭.৯%, ট্যাপ ০.৪% এবং অন্যান্য ১.৭%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৩৯.৫% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩৩.৪% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২৭.১% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১২, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১৫, দাতব্য চিকিৎসালয় ৭।

এনজিও  ব্র্যাক, আশা,  হীডস বাংলাদেশ। [আবু মো. ইকবাল. রুমী শাহ্]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; পীরগঞ্জ উপজেলার সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।