পাহাড়ি মাটি
পাহাড়ি মাটি (Hill Soil) পার্বত্য অঞ্চলে গঠিত মাটি। পার্বত্য অঞ্চলে সমতল শৃঙ্গদেশ, ঢাল ও উপত্যকা রয়েছে। শৃঙ্গদেশসমূহ বিভিন্ন মাপের এবং ভিন্ন ভিন্ন উচ্চতার হতে পারে। উচ্চতার উপর নির্ভর করে জলবায়ুর প্রকারভেদও হয়। পার্বত্য ভূ-সংস্থানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একক হচ্ছে ঢাল। এতদঞ্চলের মাটি ও উদ্ভিদের গঠনে ঢালের দৈর্ঘ্য, মাত্রা ও গতিপথ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ঢালু পাহাড়ের ক্ষেত্রে ভূমিধ্বস একটি সাধারণ সমস্যা। পার্বত্য এলাকার অন্তর্গত উপত্যকার মাটিসমূহকেও পাহাড়ি মাটি হিসেবে অভিহিত করা হয়। উপত্যকাগুলো চওড়াও হতে পারে; আবার সংকীর্ণও হতে পারে। উপত্যকার মাটির নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো না হলেও এই সব মাটি খুবই উৎপাদনক্ষম হতে পারে, বিশেষ করে ধান, গম ও অন্যান্য শস্যের জন্য। সিলেট ও চট্টগ্রাম উপ-অঞ্চলের পাহাড় ও পর্বতমালায় পাহাড়ি মাটি (dystric cambisols) পাওয়া যায়। এই মাটি কম নিষ্কাশনের কারণে প্রায় বাদামি বর্ণের এবং অত্যধিক অম্লতার কারণে বাদামি বন্যাপ্লাবিত সমভূমির মাটির চেয়ে আলাদা। আবার লালাভ-বাদামি সোপান মাটির চেয়ে এই মাটির নিম্নস্তরে ভগ্ন শিলা বা ঈষৎ বর্ণিক বালুর পরিমাণ বেশি। পৃষ্ঠমৃত্তিকার গুণাগুণ এখানকার গাছপালার ওপর নির্ভর করে ভিন্ন ভিন্ন হয়। এই সব মাটিতে ব্যাপক বিস্তারী বৃক্ষমূল এবং কেঁচো, পোকামাকড় ও উইপোকার কারণে প্রচন্ড জৈব রাসায়নিক ক্রিয়াকর্ম চলছে। অধিকাংশ পাহাড়ি মাটি কড়া বাদামি অথবা হলদে বাদামি ও দো-অাঁশ। তবে কিছু অদৃঢ় বেলেপাথর উদ্ভূত মাটি অধিকতর লাল এবং কর্দম-শিলা উদ্ভূত মাটি ধূসরতর। বাদামি পাহাড়ি মাটি খাড়া ঢাল অঞ্চলে পাওয়া যায়। কিছু পাহাড়ি মাটির অন্তর্মৃত্তিকা ও নিম্নস্তরে চামড়ার মতো কাদার হাল্কা আস্তর পরিদৃশ্যমান হওয়ার পিছনে কারণ হলো পৃষ্ঠমৃত্তিকা থেকে নিম্নস্তরে কাদা চুঁইয়ে পড়া। বাংলাদেশে সাধারণত পাহাড়ি মাটি বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহূত হচ্ছে। খাড়া ঢাল অঞ্চলে সংরক্ষিত বনাঞ্চল গড়ে তোলা হয়েছে। পাহাড়ি মাটিতে কমলা, চা, কলা, কফি, আনারস, কাঁঠাল ও রবার বাগানের চাষ হচ্ছে। উপজাতীয় লোকজন পাহাড়ি এলাকায় তাদের ঐতিহ্যবাহী চাষাবাদ ও ভূমি ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলেছে। চট্টগ্রাম পার্বত্য জেলায় এ পদ্ধতির চাষাবাদকে জুম চাষ বলা হয়। [মোহাম্মদ সুলতান হোসেন]