পাশা, আনোয়ার

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:১০, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

পাশা, আনোয়ার (১৯২৮-১৯৭১)  বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক। জন্ম ১৯২৮ সালের ১৫ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরের ডাবকাই গ্রামে। পিতা হাজী মকরম আলী ছিলেন ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট। আনোয়ার পাশা ভাবতা আজিজিয়া উচ্চ মাদ্রাসায় শিক্ষালাভ করে ১৯৪৬ সালে হাই মাদ্রাসা পরীক্ষা পাস করেন। পরে বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে আইএ (১৯৪৮),  রাজশাহী কলেজ থেকে বিএ (১৯৫১) এবং  কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ (১৯৫৩) পাস করেন। মানিকচক হাই মাদ্রাসার সুপারিনটেন্ডেন্ট হিসেবে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। পরে বিভিন্ন স্কুল এবং পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে (১৯৫৮-১৯৬৫) শিক্ষকতা করার পর ১৯৬৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন এবং আমৃত্যু এখানেই কর্মরত ছিলেন।

আনোয়ার পাশা ছিলেন একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক। তাঁর সাহিত্যকর্মে গভীর দেশাত্মবোধ, মননশীলতা এবং প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক চিন্তাচেতনার পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁর সাহিত্যজীবনের সূচনা ছাত্রাবস্থায়। রাজশাহী কলেজে বিএ শ্রেণীতে অধ্যয়নকালে তিনি রচনা করেন ‘হাস্নাহেনা’ শিরোনামে একটি রম্যরচনা। তাঁর দু দশকের সাহিত্যজীবনে প্রকাশিত হয় মোট দশটি গ্রন্থ ও পনেরোটি প্রবন্ধ। তার মধ্যে আছে দুটি কাব্যসংকলন, একটি গল্পসংকলন, তিনটি  উপন্যাস ও দুটি সমালোচনা গ্রন্থ। এ ছাড়া মুহম্মদ আবদুল হাইয়ের সহযোগিতায় তিনি প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের চারটি কাব্য সম্পাদনা করেন। বহু পত্রপত্রিকায় তাঁর রচনা প্রকাশিত হয়েছে।তাঁর রচনাবলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: নদী নিঃশেষিত হলে (১৯৬৩), রবীন্দ্র ছোটগল্প সমীক্ষা (২ খন্ড ১৯৬৩, ১৯৭৩), নীড় সন্ধানী (১৯৬৮), নিশুতি রাতের গাথা (১৯৬৮), সাহিত্যশিল্পী আবুল ফজল (১৯৬৮), নিরুপায় হরিণী (১৯৭০), রাইফেল-রোটি-আওরাত (১৯৭৩), সমুদ্র শঙ্খলতা উজ্জয়িনী ও অন্যান্য কবিতা (১৯৭৪) ইত্যাদি।

আনোয়ার পাশা

তাঁর রাইফেল-রোটি-আওরাত উপন্যাসটি রচিত হয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন এবং মুক্তিযুদ্ধের একজন একনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন। কিন্তু তাঁর স্বপ্নের বাস্তব রূপায়ণ তিনি দেখে যেতে পারেননি। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর দখলদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী আল বদরদের একটি দল তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসা থেকে চোখ বেঁধে নিয়ে যায় এবং মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের কাছে হত্যা করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জামে মসজিদের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়।  [ওয়াকিল আহমদ]