পানিতে হাঁটা পাখি
পানিতে হাঁটা পাখি (Wader) জলাভূমি বা জলাধারের পাখি হিসেবে পরিচিত। এরা Charadriiformes বর্গের অন্তর্গত Charadrii উপ-বর্গের সদস্য। বাংলাদেশে এই উপ-বর্গের অধীনে যেসব সদস্য পাওয়া যায় সেগুলি হচ্ছে পিপি (Jacana), রঙ্গিলা চ্যাগা (Painted snipe), অয়েস্টারভোজী (Oystercatcher), ঢেঙ্গা (Avocet), স্টিল্ট (Stilt), জোয়ালা (Ruff), জোরালী (Godwit), স্টোন কারলিউ (Stone Curlew), প্রাটিনকোল (Pratincole), কালশির হট্টিটি (Lapwing), জিরিয়া (Plover), চাপাখি (Sandpiper), কাঁদাখোচা/চেগা (Snipes), স্টিন্টস (Stints), বাঁকা ঠোঁট চাপাখি (Dunlins) এবং বিলাতি চাহা (Woodcock)। বেলাভূমির পাখিগুলি মোটামুটিভাবে ছোট থেকে মাঝারি আকৃতির হয়ে থাকে। এদের পা, গলা ও চঞ্চু লম্বা হয়। শুধুমাত্র জিরিয়া, স্টোন কারলিউ এবং কালশির হট্টিটির ঠোঁট অপেক্ষাকৃত ছোট। এদের অধিকাংশের ডানা রেখা (wing bars) স্পষ্ট, প্রজাতি অনুযায়ী ডাক নির্দিষ্ট এবং স্ত্রী-পুরুষ দেখতে প্রায় অভিন্ন। কিন্তু প্রজনন ঋতু অথবা গ্রীষ্মে অনেক প্রজাতির পুরুষের মাথা গ্রীবা এবং মুখে রঙের (nuptial colour) আভা লক্ষ্য করা যায়। সুমেরু, উত্তর ইউরোপ এবং এশিয়ার তুন্দ্রা অঞ্চল, জলাভূমিময় পাইন বন এবং তৃণভূমিতে এদের অধিকাংশ গ্রীষ্ম ঋতুতে প্রজনন সম্পন্ন করে।
এসব পাখির অধিকাংশ শীতের সময় ইউরোপ, এশিয়া এবং আফ্রিকার উষ্ণ অঞ্চলে পরিযানে যায়। পরিযানকৃত শীতের এসব পাখি মোহনা, প্লাবনভূমি, বালিয়াড়ি, বেলাভূমি, বিল, বাঁওড়, হাওর, চর, নদীতীর, বড় পুকুর, হ্রদ, জলাধার, সেচ-খাল, বাঁধ প্রভৃতি পছন্দ করে। কিছু শীতের পাখি সেচকৃত ধানক্ষেত বেছে নেয়।
বাংলাদেশে প্রায় ৬২৮ প্রজাতির পাখির এক দশমাংশ জলাভূমির পাখি। এদের মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ স্থানীয়, বাকিরা অতিথি পাখি। বেলাভূমির অধিকাংশই পাখিই অতিথি পাখি। আবার কিছু প্রজাতির পাখি বাংলাদেশের উপর দিয়ে পরিযানের সময় বেলাভূমিকে পথের মাঝখানে বিশ্রামস্থল হিসেবে ব্যবহার করে। বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিম বাংলা রাজ্য-সংলগ্ন এলাকায় বেশ কিছু পাখি প্রজনন সম্পন্ন করে। এরা হলো রঙ্গিলা চ্যাগা, লাল লতিকা হট্টিটি, হট্টিটি, বালুচরের টি-টি, শিল বাটান, বড় শিলা বাটান, খরমা, ছোট বাবুই বাটান, বড় বাবুই বাটান, লাল পা ঢেঙ্গা, ঢেঙ্গা, জলময়ুর এবং দল পিপি। জলাভূমিতে সচরাচর দেখতে পাওয়া পরিযানকৃত পাখিগুলি হচ্ছে চাপাখি, কাঁদাখোচা/চেগা, বাটান/জিরিয়া, গুলিন্দা, জোরালী, পিউ এবং গ্রীনস্যাংক। [আলী রেজা খান]