পাটগ্রাম উপজেলা

পাটগ্রাম উপজেলা (লালমনিরহাট জেলা)  আয়তন: ২৪৬.৮৫ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৬°১৭´ থেকে ২৬°৩৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°০৩´ থেকে ৮৯°২১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, দক্ষিণে হাতীবান্ধা উপজেলা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অংশ। এ উপজেলার দহগ্রাম বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ছিটমহল।

জনসংখ্যা ২১৮৬১৫; পুরুষ ১১০৭১২, মহিলা ১০৭৯০৩। মুসলিম ২০৮১৩০, হিন্দু ১০৪৮০, বৌদ্ধ ১, খ্রিস্টান ২ এবং অন্যান্য ২।

জলাশয় তিস্তা ও সিংগিমারী নদী।

প্রশাসন পাটগ্রাম থানা গঠিত হয় ১৮০১ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৮ মার্চ ১৯৮৪ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
৪৫ ৪৬ ৩০৫৬৫ ১৮৮০৫০ ৮৮৬ ৪৯.৭ ৪৫.৫
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১২.৪৯ ২৩ ৩০৫৬৫ ২৪৪৭ ৪৯.৭
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কুচলিবাড়ী ৫৪ ৫৫১৯ ৮৮৬১ ৮৭২৮ ৩৯.২
জগতবেড় ২৭ ৯০৯৬ ১৪২২৮ ১৪০৭৩ ৪৪.১
জোংড়া ৪০ ৮১২২ ১৩২৮৫ ১২৯৯৮ ৪৯.২
দহগ্রাম ১৯ ৪৬১৭ ৫০৭৫ ৪৯৬৫ ৩৫.৫
পাটগ্রাম ৬৭ ৯০০৭ ১৪৩৭৭ ১৩৮৮৯ ৪৮.১
বাউড়া ১৩ ৭১২৩ ১৪২০৮ ১৪২৩১ ৪৬.৮
বুড়িমারী ১৫ ৬৩৭৬ ১২৭২৮ ১১৯৯১ ৪৪.৬
শ্রীরামপুর ৮১ ৮০৫৩ ১২৪৫৯ ১১৯৫৪ ৪৮.১

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ ধবলসতী মসজিদ, জমগ্রাম জামে মসজিদ। পাটেশ্বরী মন্দির (পাটগ্রাম), মোটা সন্ন্যাসীর মূর্তি।

ঐতিহাসিক ঘটনা ১৯৭১ সালে এ উপজেলার বুড়িমারী ছিল ৬ নং সেক্টরের সদর দপ্তর। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাটগ্রাম মোটামুটি মুক্তাঞ্চল ছিল এবং এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা পাটগ্রাম সংলগ্ন টংডাঙ্গা, ভবানীপুর, সিংগীমারী ও অন্যান্য এলাকায় পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেয়। তারা লালমনিরহাট থানার বড়বাড়ি হাটেও অপারেশন পরিচালনা করে।

বিস্তারিত দেখুন পাটগ্রাম উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৫।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩৫২, মন্দির ২৫, গির্জা ২। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: জমগ্রাম জামে মসজিদ, রসুল পীরের মাযার ও পাটেশ্বরী মন্দির।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৬.১%; পুরুষ ৪৮.৪%, মহিলা ৪৩.৮%। কলেজ ৩, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৭, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮৮, মাদ্রাসা ৪২। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: পাটগ্রাম সরকারি জসমুদ্দিন কাজী আব্দুল গণি ডিগ্রি কলেজ (১৯৬৮), পাটগ্রাম মহিলা ডিগ্রি কলেজ (১৯৯৭), পাটগ্রাম আদর্শ ডিগ্রি কলেজ (১৯৯৮), পাটগ্রাম তারকনাথ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৫), বাউড়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৫), বুড়িমারী হাসর উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৫), জোংড়া ন্যাশনাল উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৭), পাটগ্রাম হুজুর উদ্দিন সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৮), মির্জার কোট এইচ এম উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭২), পাটগ্রাম এন পি সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯৬২)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান  লাইব্রেরি ৩৭, অডিটোরিয়াম ১, ক্লাব ১২৬, সিনেমা হল ২, স্টেডিয়াম ১, খেলার মাঠ ৬।

দর্শনীয় স্থান তিন বিঘা করিডোর ও বুড়িমারী স্থল বন্দর।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৪.২২%, অকৃষি শ্রমিক ৪.৪৫%, শিল্প ০.২৯%, ব্যবসা ৯.১২%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৩৪%, চাকরি ২.৬২%, নির্মাণ ০.৫৫%, ধর্মীয় সেবা ০.২৬%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.১৫% এবং অন্যান্য ৬%।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, তামাক, গম, আলু, পাট, চীনাবাদাম।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি কাউন, মিষ্টি আলু, সরিষা।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, জাম, সুপারি।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৯৯ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৯ কিমি, কাঁচারাস্তা ৫৬২ কিমি; রেলপথ ৩৮ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা আটাকল, বরফকল, চকলেট কারখানা, ওয়েল্ডিং কারখানা।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, কাঠের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৬, মেলা ৮। বাউড়া হাট, পাটগ্রাম হাট, বেলতলীর হাট, রসুলগঞ্জ হাট, মুন্সির হাট এবং পাটেশ্বরী মেলা, বারুণীর মেলা ও দুর্গাপূজার মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান, পাট, তামাক, আলু, সুপারি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১৯.২% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদ এ উপজেলায় উন্নতমানের বালু ও নুড়ি পাথরের সন্ধান পাওয়া গেছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ০.২%, ট্যাপ ৯৪.৬% এবং অন্যান্য ৫.২%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৩৮.২% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪৪.৫% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১৭.৩% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৩, ক্লিনিক ১।

এনজিও ব্র্যাক, আর ডি আর এস, প্রশিকা, স্বনির্ভর বাংলা, জাগরণী।  [বেনু বেগম বিজলী]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; পাটগ্রাম উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।