পাগলা সেতু
পাগলা সেতু একটি মুগল স্থাপত্যের ধ্বংসাবশেষ যা ঢাকার ৪.৫ কিমি পূর্বে পাগলার ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়কে অবস্থিত। সেতুটি সম্ভবত ১৬৬০ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট আরঙ্গজেবের সময় বাংলার সুবাদার মির্জা মওলার (মীর জুমলা) আমলে শীতালক্ষ্যা-বুড়িগঙ্গা নদীর সংযোগ স্থল দুলাই নদীর উপর নির্মিত হয়। মীর জুমলা তাঁর আসাম অভিযানের সময় সেতুটি নির্মাণ করেন।
ঢাকা ও এর উপকণ্ঠে মীর জুমলা কর্তৃক নির্মিত অবকাঠামোগুলি হলো দুটি রাস্তা, দুটি সেতু ও দুর্গের সাথে যোগাযোগের একটি সংযোগ পথ। এর মধ্যে একটি রাস্তা পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ঢাকা ও নারায়নণগঞ্জকে সংযুক্ত করছে। এ রাস্তা ধরেই পাগলা সেতুটির অবস্থান। একটি মন্দিরের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে সেতুটির ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায় যেখানে দেবতা শিব এর মূর্তি ছিল। মন্দিরটির সেবায়েত (পুরোহিত) বলেন, প্রাচীন ধ্বংসাবশেষটি পাগল-নাথ মন্দিরের অংশ ছিল। ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দে ফরাসী পর্যটক টেভারনিয়ার উত্তর-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত নদীর উপর ‘মীর জুমলা কর্তৃক নির্মাণের নির্দেশ-প্রাপ্ত ইটের একটি সুন্দর সেতু’ লক্ষ্য করেন। ১৮২৪ সালে ঢাকা সফরকালে, বিশপ হেবার পাগলা সেতুকে বেশ ভাল অবস্থায় দেখতে পান এবং একে উন্নত গথিক স্থাপত্যের একটি চমৎকার নিদর্শন হিসেবে চিহ্নিত করেন।
তিনি অবশ্য স্থানীয় মাঝি-মাল্লাদের কাছ থেকে জানতে পারেন যে সেতুটি জনৈক ফরাসি নির্মাণ করেন। ঐতিহাসিকদের বিশ্বাস হচ্ছে যে এটি কোন ফরাসি কর্তৃক নির্মিত নয়। কারণ মীর জুমলা বহু পূর্বেই এটা নির্মাণ করেছিলেন এবং এর সূচ্যগ্র খিলানকে টিউডর গথিক শৈলীরও অংশ বলা যায় না।
স্থানীয় লোকদের বর্ণনা অনুযায়ী, ১৯৬০ সালের দিকেও সেতুটির আকর্ষণ অক্ষুণ্ণ ছিল। মুগলদের রুচির পরিচয়-চিহ্নিত সেতুটি তিনটি খোলা খিলানের সমন্বয়ে তৈরি, প্রতিটি খিলান চারটি কেন্দ্র ও শক্ত পা-বিশিষ্ট এবং উভয় পাশে অতিরিক্ত খিলানযুক্ত।
খিলানের মধ্যবর্তী অংশসমূহ বেশ বড় ফুলের নক্সাঙ্কিত এবং খিলানের ভিত্তিস্থান অর্ধবৃত্তাকৃতি জাহাজের সম্মুখস্থ অংশের অগ্রভাগের মতো। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রতিটি কোণায় চারটি অষ্টভুজ ফাঁপা মিনার ছিল। এই মিনারগুলি সূচ্যগ্র কয়েকটি খিলান সম্বলিত উন্মুক্ত প্লাটফর্মের উপর দন্ডায়মান এবং সেতুর দুই পাশের রেলিং বরাবর জায়গায় স্থানে স্থানে কিছু পিলার আছে যেগুলির মাথায় বসানো রয়েছে একেকটি গোলাকার ক্ষুদ্র গম্বুজ। [এস.এম মাহফুজুর রহমান]