পাকিস্তান গণপরিষদ

পাকিস্তান গণপরিষদ  পাকিস্তান রাষ্ট্রের সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে ১৯৪৭ সালে গঠিত হয়। ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স অ্যাক্ট ১৯৪৭-এর শর্তানুযায়ী দুটি গণপরিষদের একটি স্থাপিত হয় ভারতে এবং অপরটি পাকিস্তানে। ১৯৪৭ সালের ১১ আগস্ট  মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পাকিস্তান গণপরিষদের সভাপতি নির্বাচিত হন। ভারতের স্বাধীনতা আইন অনুযায়ী গণপরিষদের দুটি সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব ছিল: দেশের সংবিধান প্রণয়ন এবং তা কার্যকর করার পূর্ব পর্যন্ত একটি ফেডারেল আইনসভা (সংসদ) হিসেবে কাজ করা। ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন অনুযায়ী ভারতের প্রাক্তন কেন্দ্রীয় আইনসভার সকল ক্ষমতা এবং দায়িত্ব পাকিস্তান গণপরিষদের উপর ন্যস্ত ছিল। পাকিস্তান (অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধান) আদেশ ১৯৪৭ অনুযায়ী ৬৯ সদস্য বিশিষ্ট প্রথম গণপরিষদ গঠিত হয়। গণপরিষদে দুটি দলের উপস্থিতি ছিল, মুসলিম লীগভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। গণপরিষদের ৬৯ জন সদস্যের মধ্যে ৫৯ জনই ছিল মুসলিম লীগের। সংবিধান প্রণয়নের দায়িত্ব সম্পাদনের লক্ষ্যে গণপরিষদ কয়েকটি কমিটি ও উপ-কমিটি গঠন করে। এর মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল মূলনীতি কমিটি। অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটি ছিল পাকিস্তানের নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত।

গণপরিষদ দেশের সংবিধান প্রণয়নে ব্যর্থ হয়। ক্ষমতার রাজনীতি এবং দলীয় সদস্যদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিভেদের কারণে সংবিধান প্রণয়ন বিলম্বিত হয়। ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর গণপরিষদের প্রতিনিধিত্বশীল চরিত্রও লোপ পায়। ১৯৫৪ সালের অক্টোবরে প্রেসিডেন্ট গোলাম মোহাম্মদ জরুরী অবস্থা জারি করে গণপরিষদ বাতিল ঘোষণা করেন। এরপর তাঁর জরুরী ক্ষমতাবলে একটি শাসনতান্ত্রিক কনভেনশন আহবান করা হয়। পরবর্তী সময়ে এই কনভেনশনই দ্বিতীয় গণপরিষদে রূপান্তরিত হয়। এতে ৬০ জন সদস্য ছিলেন, যার মধ্যে ৩০ জন ছিলেন পূর্ববঙ্গের। দ্বিতীয় গণপরিষদ ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান রচনা করে। দ্বিতীয় সংবিধান প্রণীত হয় ১৯৬২ সালে। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর তৃতীয় সংবিধান প্রণয়নের কথা থাকলেও তার পূর্বেই পাকিস্তান ভেঙ্গে যায়।  [সিরাজুল ইসলাম]