পলাশবাড়ী উপজেলা

পলাশবাড়ী উপজেলা (গাইবান্ধা জেলা)  আয়তন: ১৮৫.২৪ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°১১´ থেকে ২৫°১৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°১৬´ থেকে ৮৯°৩২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে পীরগঞ্জ (রংপুর) ও সাদুল্লাপুর উপজেলা, দক্ষিণে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে গাইবান্ধা সদর ও সাঘাটা উপজেলা, পশ্চিমে ঘোড়াঘাট উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৪৪৭৯২; পুরুষ ১২০০০৭, মহিলা ১২৪৭৮৫। মুসলিম ২২৯০৩০, হিন্দু ১৫৬৪০, বৌদ্ধ ৪, খ্রিস্টান ৫৩ এবং অন্যান্য ৬৫।

জলাশয় প্রধান নদী: করতোয়া, মরিচা, নলুয়া।

প্রশাসন পলাশবাড়ী থানা গঠিত হয় ১৫ মার্চ ১৯৩৭ এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১৬০ ১৬০ ২২৬৫৯ ২২২১৩৩ ১৩২১ ৫৪.৯ (২০০১) ৩৭.৪ (২০০১)
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৬.৬৩ ২২৬৫৯ ৩৪১৮ ৫৪.৯০ (২০০১)
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%) (২০০১)
পুরুষ মহিলা
কিশোরগাড়ী ৪৭ ৮৪৪৫ ১৭৪২৪ ১৭৩৯০ ৩৩.৯৫
পাবনাপুর ৭৬ ৪১৪৫ ৯৯১৪ ১০৭৫১ ৩৬.৪০
পলাশবাড়ী ৮৫ ৩৭৩৪ ১৭৯১৮ ১৮১১৩ ৪৮.৯৮
বরিশাল ১৩ ৫২০৬ ১৩৫৩৯ ১৩৯৮৩ ৩৩.১৬
বেতকাপা ১৯ ৫০২৯ ১৩৫৯৯ ১৪৫৮৯ ৪৩.৩২
মনোহরপুর ৬৬ ৫০৪৫ ১১৭৭১ ১২৮৬৭ ৩৮.৮৬
মোহাদিপুর ৫৭ ৫০৩৪ ১৫৯১৯ ১৬৭৩৩ ৪২.৫৭
হরিনাথপুর ২৮ ৩২২৫ ৮৩৭০ ৮৭৩৩ ৩২.৩৫
হোসেনপুর ৩৮ ৫৯১১ ১১৫৫৩ ১১৬২৬ ৩৪.৫৩

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের রমনা রেসকোর্স ময়দানে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের পর স্থানীয় জনগণ উপজেলার রংপুর-বগুড়া মহাসড়ক অবরোধ করে। এর শাস্তি হিসেবে পাকবাহিনী পলাশবাড়ী হাটে এসে গুলিবর্ষণ করে এবং তাতে ১ জন নিহত হয়। পরবর্তী সময়ে পাকবাহিনী স্থানীয় বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ পলাশবাড়ীতে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে ২১ জন পাকসেনা নিহত হয়, ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীন হন। ১৭ এপ্রিল তারিখেও এরকম অপর একটি যুদ্ধে ১১ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। পাকবাহিনী উপজেলার সড়ক ও জনপথ বিভাগের অফিসে ক্যাম্প স্থাপন করে এবং বহুসংখ্যক নিরীহ লোককে ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন ও হত্যা করে। ১০ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা পলাশবাড়ী নিয়ন্ত্রণে নেয়। উপজেলায় ২টি গণকবর (কাশিয়াবাড়ি গণকবর, বৈরী হরিণমারী গণকবর) ও ১টি বধ্যভূমির (সড়ক ও জনপথ বিভাগ অফিস সংলগ্ন বধ্যভূমি) সন্ধান পাওয়া গেছে। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে ১টি শহীদ মিনার ‘পলাশবাড়ি শহীদ মিনার’ এবং ১টি স্মৃতিফলক (জাফর-মুংলিশপুরের স্মৃতিফলক) স্থাপন করা হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন পলাশবাড়ী উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৫।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২৯৮, মন্দির ১৩। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: পলাশবাড়ী জামে মসজিদ, কালীবাড়ি মন্দির।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৭.৬%; পুরুষ ৫১.৪%, মহিলা ৪৪.০%। কলেজ ৯, কারিগরি কলেজ ২, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪০, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৭৮, কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩৩, মাদ্রাসা ৬৯। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: পলাশবাড়ী সরকারি কলেজ (১৯৬৪), পলাশবাড়ী এস.এম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১১), বাসুদেবপুর চন্দ্রকিশোর স্কুল এন্ড কলেজ (১৯১৭), রওশনবাগ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৬)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক পলাশ, সাপ্তাহিক অনড় এবং মাসিক অনির্বাণ (অবলুপ্ত)।

বিনোদন কেন্দ্র ড্রিমল্যান্ড পিকনিক স্পট।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৪.৩০%, অকৃষি শ্রমিক ১.৯৫%, শিল্প ১.১৫%, ব্যবসা ১২.৮৭%, পরিবহন ও যোগাযোগ ৬.২৪%,  চাকরি ৫.৯৬%, নির্মাণ ১.৩৮%, ধর্মীয় সেবা ০.১৭%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিট্যান্স ০.১৫% এবং অন্যান্য ৫.৮৩%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৭.৮২%, ভূমিহীন ৪২.১৮%।  শহরে ৫২.৩৩% এবং গ্রামে ৫৮.৩০% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল কলা, আলু, ভুট্টা, আখ, তরমুজ, শাকসবজি।

বিলুপ্ত অথবা বিলুপ্তপ্রায় ফসল  আউশ ধান, কাউন, মিষ্টিআলু, অড়হর।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১০৫.০৭ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৩.০১ কিমি, কাঁচারাস্তা ৫৩১.৬৩ কিমি; নৌপথ ১০কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা বরফকল, ইটের ভাটা, ওয়েল্ডিং কারখানা।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, বিড়িশিল্প, কাঠের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৪, মেলা ৯। মাঠের হাট, কালীবাড়ি হাট, আমলাগাছী হাট এবং কালীবাড়ি পূজা মেলা, ঋষিঘাট স্নানের মেলা, বাসুদেবপুর মেলা, পলাশবাড়ী চৈত্র সংক্রান্তির মেলা ও সাঁকোয়ার বারুনী মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  কলা, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার সবক’টি ইউনিয়নই পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসুচির আওতাধীন। তবে ৩০.৭% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৬.২%, ট্যাপ ০.৬% এবং অন্যান্য ৩.২%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা ২৮.০% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪৩.২% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২৮.৮% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য-কেন্দ্র ৫, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৯, পশু প্রজনন উপকেন্দ্র ২।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা, হিড বাংলাদেশ, টিএমএসএস, নিজেরা করি।  [আসমা পারভীন]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; পলাশবাড়ী উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।