পরিবার পরিকল্পনা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১০ নং লাইন: ১০ নং লাইন:
মৃত্যুহার ও জন্মহারের ভারসাম্য দ্বারাই দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি নির্ধারিত হয়। বিগত শতকের গোড়ার দিকে জন্ম ও মৃত্যু দুটির হারই অধিক থাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ধীরে। স্বাস্থ্যসেবার উন্নতির সঙ্গে জন্মহারের তুলনায় মৃত্যুহার হ্রাস পেয়েছে বেশি। ফলে বেড়েছে জনসংখ্যা।
মৃত্যুহার ও জন্মহারের ভারসাম্য দ্বারাই দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি নির্ধারিত হয়। বিগত শতকের গোড়ার দিকে জন্ম ও মৃত্যু দুটির হারই অধিক থাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ধীরে। স্বাস্থ্যসেবার উন্নতির সঙ্গে জন্মহারের তুলনায় মৃত্যুহার হ্রাস পেয়েছে বেশি। ফলে বেড়েছে জনসংখ্যা।


সারণি  বিশ শতকে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির ধারা
''সারণি''  বিশ শতকে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির ধারা।
{| class="table table-bordered"
{| class="table table-bordered"
|-
|-
| বছর  || জনসংখ্যা (কোটি)  || বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির
| বছর  || জনসংখ্যা (কোটি)  || বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির
|-
|-
| শতকরা হার  
| শতকরা হার  
|-
|-
| ১৯০১  || ২.৮৯  || ---
| ১৯০১  || ২.৮৯  || ---
|-
|-
| ১৯১১  || ৩.১৫  || ০.৮৭
| ১৯১১  || ৩.১৫  || ০.৮৭
|-
|-
| ১৯২১  || ৩.৩২  || ০.৫২
| ১৯২১  || ৩.৩২  || ০.৫২
|-
|-
| ১৯৩১  || ৩.৫৬  || ০.৬৮
| ১৯৩১  || ৩.৫৬  || ০.৬৮
|-
|-
| ১৯৪১  || ৪.১৯  || ১.৬৫
| ১৯৪১  || ৪.১৯  || ১.৬৫
|-
|-
| ১৯৫১  || ৪.৪৯  || ০.৫০
| ১৯৫১  || ৪.৪৯  || ০.৫০
|-
|-
| ১৯৬১  || ৫.৫২  || ২.২৬
| ১৯৬১  || ৫.৫২  || ২.২৬
|-
|-
| ১৯৭১  || ৭.৯৪  || ২.৪৮
| ১৯৭১  || ৭.৯৪  || ২.৪৮
|-
|-
| ১৯৮১  || ৮.৯৯  || ২.৩৫
| ১৯৮১  || ৮.৯৯  || ২.৩৫
|-
|-
| ১৯৯১  || ১০.৯৮  || ২.০৩
| ১৯৯১  || ১০.৯৮  || ২.০৩
|-
|-
| ২০০০  || ১৩.০০  || ১.৮০
| ২০০০  || ১৩.০০  || ১.৮০
৫৪ নং লাইন: ৪২ নং লাইন:
|}
|}


উৎস  বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
''উৎস''  বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।


মৃত্যুহার হ্রাস পাওয়ায় ১৯৫০ সালের দিকে জনসংখ্যা অত্যধিক বৃদ্ধি পেতে থাকে। অতঃপর ২৫ বছর এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে এবং সরকার ব্যাপক পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি চালু করে। বর্তমানে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত কর্মীর সংখ্যা প্রায় ৪০,০০০। এর ভিতর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। দেশের এই কর্মকান্ড প্রধানত বৈদেশিক সাহায্যে পরিচালিত এবং সিংহভাগ তহবিল যোগায় বিশ্ব ব্যাংক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ইউনিসেফ, ইউএনডিপি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ১৯৭২-১৯৯৬ সময়কালে বিবাহিত মহিলার মধ্যে জন্মরোধক ব্যবহারের হার শুরুতে মাত্র ৪ থেকে পরে ৪৯ শতাংশে পৌঁছয়। ১৯৮৩ সালে এদের ৪০% সাধারণ পদ্ধতি হিসেবে স্ত্রী ও পুরুষ বন্ধ্যাকরণ গ্রহণ করেছিল। অত্যন্ত দরিদ্র বিধায় জন্মরোধকের প্রাত্যহিক বাড়তি খরচ এড়ানোর জন্য তারা স্থায়ী বন্ধ্যাত্বই বেছে নিয়েছিল। অতঃপর বন্ধ্যাত্ব গ্রহণের পরিবর্তে জন্মরোধক বড়ির ব্যবহার বৃদ্ধি পেতে থাকে। বর্তমানে নিম্নোক্ত ব্যবস্থাগুলি প্রধানত গ্রহণ করে: মহিলাদের জন্মরোধক বড়ি ৪২%, চিরাচরিত ব্যবস্থা ১৬%, নারী বন্ধ্যাকরণ ১৫%, পুরুষের কনডম ৮%, পুরুষ বন্ধ্যাকরণ ২%। নারীদের ইনজেকশন প্রদানের মাধ্যমে জন্মরোধের চেষ্টাও চলছে, তবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার দরুন ব্যবস্থাটি ততটা সফল হয় নি।
মৃত্যুহার হ্রাস পাওয়ায় ১৯৫০ সালের দিকে জনসংখ্যা অত্যধিক বৃদ্ধি পেতে থাকে। অতঃপর ২৫ বছর এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে এবং সরকার ব্যাপক পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি চালু করে। বর্তমানে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত কর্মীর সংখ্যা প্রায় ৪০,০০০। এর ভিতর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। দেশের এই কর্মকান্ড প্রধানত বৈদেশিক সাহায্যে পরিচালিত এবং সিংহভাগ তহবিল যোগায় বিশ্ব ব্যাংক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ইউনিসেফ, ইউএনডিপি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ১৯৭২-১৯৯৬ সময়কালে বিবাহিত মহিলার মধ্যে জন্মরোধক ব্যবহারের হার শুরুতে মাত্র ৪ থেকে পরে ৪৯ শতাংশে পৌঁছয়। ১৯৮৩ সালে এদের ৪০% সাধারণ পদ্ধতি হিসেবে স্ত্রী ও পুরুষ বন্ধ্যাকরণ গ্রহণ করেছিল। অত্যন্ত দরিদ্র বিধায় জন্মরোধকের প্রাত্যহিক বাড়তি খরচ এড়ানোর জন্য তারা স্থায়ী বন্ধ্যাত্বই বেছে নিয়েছিল। অতঃপর বন্ধ্যাত্ব গ্রহণের পরিবর্তে জন্মরোধক বড়ির ব্যবহার বৃদ্ধি পেতে থাকে। বর্তমানে নিম্নোক্ত ব্যবস্থাগুলি প্রধানত গ্রহণ করে: মহিলাদের জন্মরোধক বড়ি ৪২%, চিরাচরিত ব্যবস্থা ১৬%, নারী বন্ধ্যাকরণ ১৫%, পুরুষের কনডম ৮%, পুরুষ বন্ধ্যাকরণ ২%। নারীদের ইনজেকশন প্রদানের মাধ্যমে জন্মরোধের চেষ্টাও চলছে, তবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার দরুন ব্যবস্থাটি ততটা সফল হয় নি।
৬০ নং লাইন: ৪৮ নং লাইন:
বর্তমানে সরকার পরিবার পরিকল্পনা খাতে বছরে যে ১০ কোটি মার্কিন ডলার খরচ করে এর অর্ধেক আসে সরকারি তহবিল থেকে, বাকিটা যোগায় দাতাগোষ্ঠী। অর্থের পরিমাণ অন্তত ২.৫ গুণ বাড়ানো, অর্থাৎ ২০০৫ সালের মধ্যে প্রতিস্থাপিত প্রজননের জন্য বার্ষিক ব্যয় ২৫ কোটি মার্কিন ডলার বাড়ানো প্রয়োজন। সরকারের পক্ষে দীর্ঘকাল এই খরচ বহন অসম্ভব। অনেক দাতাই খরচ কমানোর জন্য ব্যবহারকারীদের কাছে জন্মরোধক সামগ্রী ভর্তুকি দরের বদলে বাজার দরে সরবরাহের সমর্থক, কিন্তু এতে অপেক্ষাকৃত সচ্ছলরা উপকৃত হলেও বিপুল দরিদ্র জনগোষ্ঠী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ১৯৯০-র দশকের গোড়ার দিকে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে প্রবেশের পর সরকার পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিতে প্রজনন স্বাস্থ্যরক্ষার উপাদানগুলি অন্তর্ভুক্তির একটি পূর্ণাঙ্গ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বর্তমানে পরিবার পরিকল্পনা বাজেটে রয়েছে গর্ভকালীন ও প্রসবের পরবর্তী অত্যাবশ্যকীয় সেবা, শিশুমৃত্যু হ্রাসের ব্যবস্থা এবং সংক্রামক যৌনরোগ নিরোধ। ১৯৯০-র দশকের ৪র্থ ও ৫ম স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা প্রকল্পগুলি বিস্তৃত পরিসরে পরিবার পরিকল্পনা কর্মকান্ডে বড় অঙ্কের অর্থ যোগান দিয়েছে। সরকার প্রয়োজনীয় সচেতনতা সৃষ্টি করেছে এবং এসব সেবার সার্বিক উন্নতিবিধানসহ সেগুলির চাহিদাও বাড়তে পারে। তবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে এগুলি সহজলভ্য করার কাজটি খুবই জটিল, অথচ দেশে জনসংখ্যা হ্রাসের জন্য তা অপরিহার্য।  [জিয়া উদ্দিন আহমেদ]
বর্তমানে সরকার পরিবার পরিকল্পনা খাতে বছরে যে ১০ কোটি মার্কিন ডলার খরচ করে এর অর্ধেক আসে সরকারি তহবিল থেকে, বাকিটা যোগায় দাতাগোষ্ঠী। অর্থের পরিমাণ অন্তত ২.৫ গুণ বাড়ানো, অর্থাৎ ২০০৫ সালের মধ্যে প্রতিস্থাপিত প্রজননের জন্য বার্ষিক ব্যয় ২৫ কোটি মার্কিন ডলার বাড়ানো প্রয়োজন। সরকারের পক্ষে দীর্ঘকাল এই খরচ বহন অসম্ভব। অনেক দাতাই খরচ কমানোর জন্য ব্যবহারকারীদের কাছে জন্মরোধক সামগ্রী ভর্তুকি দরের বদলে বাজার দরে সরবরাহের সমর্থক, কিন্তু এতে অপেক্ষাকৃত সচ্ছলরা উপকৃত হলেও বিপুল দরিদ্র জনগোষ্ঠী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ১৯৯০-র দশকের গোড়ার দিকে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে প্রবেশের পর সরকার পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিতে প্রজনন স্বাস্থ্যরক্ষার উপাদানগুলি অন্তর্ভুক্তির একটি পূর্ণাঙ্গ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বর্তমানে পরিবার পরিকল্পনা বাজেটে রয়েছে গর্ভকালীন ও প্রসবের পরবর্তী অত্যাবশ্যকীয় সেবা, শিশুমৃত্যু হ্রাসের ব্যবস্থা এবং সংক্রামক যৌনরোগ নিরোধ। ১৯৯০-র দশকের ৪র্থ ও ৫ম স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা প্রকল্পগুলি বিস্তৃত পরিসরে পরিবার পরিকল্পনা কর্মকান্ডে বড় অঙ্কের অর্থ যোগান দিয়েছে। সরকার প্রয়োজনীয় সচেতনতা সৃষ্টি করেছে এবং এসব সেবার সার্বিক উন্নতিবিধানসহ সেগুলির চাহিদাও বাড়তে পারে। তবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে এগুলি সহজলভ্য করার কাজটি খুবই জটিল, অথচ দেশে জনসংখ্যা হ্রাসের জন্য তা অপরিহার্য।  [জিয়া উদ্দিন আহমেদ]


আরও দেখুন সবুজ ছাতা।
[[en:Family Planning]]
[[en:Family Planning]]


[[en:Family Planning]]
''আরও দেখুন''  [[সবুজ ছাতা|সবুজ ছাতা]]


[[en:Family Planning]]
[[en:Family Planning]]

০৬:০৩, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

পরিবার পরিকল্পনা  জন্মশাসন পদ্ধতির সাহায্যে স্বামী ও স্ত্রী কর্তৃক সন্তানের সংখ্যা ও ব্যবধান নিয়ন্ত্রণ। অধিকাংশ মা-বাবার ক্ষেত্রেই পরিবার পরিকল্পনা হলো গর্ভসঞ্চার এড়ানোর জন্য কোন নিয়মিত পদ্ধতি অনুসরণ। বহুযুগ ধরে মানুষের সংখ্যাবৃদ্ধির একটা স্থির বৈশিষ্ট্য ছিল বার্ষিক ০.০০২% বৃদ্ধি, অর্থাৎ ১০ লক্ষ লোকের মধ্যে বার্ষিক বৃদ্ধি ২০। কিন্তু সতেরো শতকের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, কৃষি ও চিকিৎসার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে। বিগত ২০০ বছরে বিশ্ব জনসংখ্যা পাঁচটি মহাদেশেই পাঁচ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে; ১৬৫০ সালের ৫০ কোটি থেকে ১৯৫০ সালে ২৫০ কোটি। রোগ, মহামারী ও কোন কোন ক্ষেত্রে দুর্ভিক্ষের আগ্রাসন সত্ত্বেও এই জনবৃদ্ধি ঘটে। মধ্য-বিশ শতকের পর বিশ্ব জনসংখ্যা কয়েকটি পর্যায়ে আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পায়; ১৯৭০ সালে ৩০০ কোটি, ১৯৮০ সালে ৪০০ কোটি, ১৯৯০ সালে ৫০০ কোটি ও ১৯৯৯ সালের অক্টোবরে ৬০০ কোটি। আগামী ৪০ বছরের পরিস্থিতি খুবই নৈরাশ্যকর, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপক উদ্যোগ সত্ত্বেও ২০৪০ সালে অঙ্কটি ৯০০ কোটিতে দাঁড়াবে বলে অনুমান করা হয়।

বাংলাদেশের ভূখন্ডে এই উপমহাদেশের জনসংখ্যা বণ্টনের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। ১৯৫৭ সালে যখন পৃথিবীর জনসংখ্যা ছিল প্রায় ২৫০ কোটি তখন প্রকাশিত ফ্রেডরিখ বুর্গডরফার (Friedrich Burgdorfer) লিখিত The World Atlas of Population এ দেখানো হয়েছে যে ভারত উপমহাদেশের সর্বাধিক ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল হলো দুটি তির্যক রেখা চিহ্নিত একটি সংকীর্ণ ফালি, ডানে সুনামগঞ্জ থেকে ভোলা এবং বায়ে শেরপুর থেকে সাতক্ষীরা। জায়গাটি শুধু উপমহাদেশের নয়, হতে পারে গোটা বিশ্বের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এই অমিত বংশবৃদ্ধির অতি উচ্চ হারের কারণ বহুবিধ; অর্থনৈতিক, সামাজিক, জলবায়ুগত ও সাংস্কৃতিক। এখানে বৃষ্টিপাত বেশি, জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ, বন্যাপ্লাবিত কৃষি জমি অত্যধিক উর্বর, চাষাবাদ সহজ এবং তা পশুশ্রম ও আদিম যন্ত্রপাতিতেই চলে। ঘনবসতিপূর্ণ হলেও মাথাপিছু জমির পরিমাণ যথেষ্ট এবং সেজন্য জীবনযাত্রা ছিল অপেক্ষাকৃত নিরাপদ ও আয়েশি।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতার সময় বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৭.৯ কোটি। দেখা যায় ১৯৫১ সালে দেশের জনসংখ্যা ছিল ৪.৪ কোটি, ১৯৬১ সালে ৫.৫ কোটি, ১৯৮১ সালে ৯ কোটি, ১৯৯১ সালে ১১ কোটি এবং ২০০৮ সালের শেষ নাগাদ এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ কোটি ৬৬ লক্ষ। অর্থাৎ স্বাধীনতার পর গত ৩০ বছরে জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় সারে-সাত কোটি। বর্তমানে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ৯৯৩ (২০০৮), পৃথিবীর যে কোন দেশের তুলনায় সর্বোচ্চ।

জনসংখ্যার বার্ষিক বৃদ্ধির হারের হিসাব মোটামুটি নির্ভুল, ১৯৬১ সালে ২.২৬%, ১৯৭১ সালে ২.৪৮%, ১৯৮১ সালে কিছুটা হ্রাস পেয়ে ২.৩৫%, ১৯৯১ সালে ২.০৩%, আর বর্তমানে আরও কম, ১.৮%। জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার হ্রাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নারী প্রজননক্ষম থাকার সময়কালে নারী প্রতি সন্তানের গড় সংখ্যাও হ্রাস পেয়েছে। ১৯৭০ দশকের মাঝামাঝি প্রতি নারীর গড় সন্তান সংখ্যা ছিল ৬.৩, ১৯৯০ দশকে দাঁড়িয়েছে ৩.৩। এটি ২.২ হলে, অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রীর মাত্র দুটি সন্তান থাকলে, দেশ ‘প্রতিস্থাপিত প্রজনন পর্যায়ে’ পৌঁছবে।

মৃত্যুহার ও জন্মহারের ভারসাম্য দ্বারাই দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি নির্ধারিত হয়। বিগত শতকের গোড়ার দিকে জন্ম ও মৃত্যু দুটির হারই অধিক থাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ধীরে। স্বাস্থ্যসেবার উন্নতির সঙ্গে জন্মহারের তুলনায় মৃত্যুহার হ্রাস পেয়েছে বেশি। ফলে বেড়েছে জনসংখ্যা।

সারণি  বিশ শতকে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির ধারা।

বছর জনসংখ্যা (কোটি) বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির
শতকরা হার
১৯০১ ২.৮৯ ---
১৯১১ ৩.১৫ ০.৮৭
১৯২১ ৩.৩২ ০.৫২
১৯৩১ ৩.৫৬ ০.৬৮
১৯৪১ ৪.১৯ ১.৬৫
১৯৫১ ৪.৪৯ ০.৫০
১৯৬১ ৫.৫২ ২.২৬
১৯৭১ ৭.৯৪ ২.৪৮
১৯৮১ ৮.৯৯ ২.৩৫
১৯৯১ ১০.৯৮ ২.০৩
২০০০ ১৩.০০ ১.৮০
২০০৯ ১৪.৬৬ ১.৩৯

উৎস  বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মৃত্যুহার হ্রাস পাওয়ায় ১৯৫০ সালের দিকে জনসংখ্যা অত্যধিক বৃদ্ধি পেতে থাকে। অতঃপর ২৫ বছর এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে এবং সরকার ব্যাপক পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি চালু করে। বর্তমানে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত কর্মীর সংখ্যা প্রায় ৪০,০০০। এর ভিতর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। দেশের এই কর্মকান্ড প্রধানত বৈদেশিক সাহায্যে পরিচালিত এবং সিংহভাগ তহবিল যোগায় বিশ্ব ব্যাংক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ইউনিসেফ, ইউএনডিপি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ১৯৭২-১৯৯৬ সময়কালে বিবাহিত মহিলার মধ্যে জন্মরোধক ব্যবহারের হার শুরুতে মাত্র ৪ থেকে পরে ৪৯ শতাংশে পৌঁছয়। ১৯৮৩ সালে এদের ৪০% সাধারণ পদ্ধতি হিসেবে স্ত্রী ও পুরুষ বন্ধ্যাকরণ গ্রহণ করেছিল। অত্যন্ত দরিদ্র বিধায় জন্মরোধকের প্রাত্যহিক বাড়তি খরচ এড়ানোর জন্য তারা স্থায়ী বন্ধ্যাত্বই বেছে নিয়েছিল। অতঃপর বন্ধ্যাত্ব গ্রহণের পরিবর্তে জন্মরোধক বড়ির ব্যবহার বৃদ্ধি পেতে থাকে। বর্তমানে নিম্নোক্ত ব্যবস্থাগুলি প্রধানত গ্রহণ করে: মহিলাদের জন্মরোধক বড়ি ৪২%, চিরাচরিত ব্যবস্থা ১৬%, নারী বন্ধ্যাকরণ ১৫%, পুরুষের কনডম ৮%, পুরুষ বন্ধ্যাকরণ ২%। নারীদের ইনজেকশন প্রদানের মাধ্যমে জন্মরোধের চেষ্টাও চলছে, তবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার দরুন ব্যবস্থাটি ততটা সফল হয় নি।

বর্তমানে সরকার পরিবার পরিকল্পনা খাতে বছরে যে ১০ কোটি মার্কিন ডলার খরচ করে এর অর্ধেক আসে সরকারি তহবিল থেকে, বাকিটা যোগায় দাতাগোষ্ঠী। অর্থের পরিমাণ অন্তত ২.৫ গুণ বাড়ানো, অর্থাৎ ২০০৫ সালের মধ্যে প্রতিস্থাপিত প্রজননের জন্য বার্ষিক ব্যয় ২৫ কোটি মার্কিন ডলার বাড়ানো প্রয়োজন। সরকারের পক্ষে দীর্ঘকাল এই খরচ বহন অসম্ভব। অনেক দাতাই খরচ কমানোর জন্য ব্যবহারকারীদের কাছে জন্মরোধক সামগ্রী ভর্তুকি দরের বদলে বাজার দরে সরবরাহের সমর্থক, কিন্তু এতে অপেক্ষাকৃত সচ্ছলরা উপকৃত হলেও বিপুল দরিদ্র জনগোষ্ঠী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ১৯৯০-র দশকের গোড়ার দিকে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে প্রবেশের পর সরকার পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিতে প্রজনন স্বাস্থ্যরক্ষার উপাদানগুলি অন্তর্ভুক্তির একটি পূর্ণাঙ্গ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বর্তমানে পরিবার পরিকল্পনা বাজেটে রয়েছে গর্ভকালীন ও প্রসবের পরবর্তী অত্যাবশ্যকীয় সেবা, শিশুমৃত্যু হ্রাসের ব্যবস্থা এবং সংক্রামক যৌনরোগ নিরোধ। ১৯৯০-র দশকের ৪র্থ ও ৫ম স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা প্রকল্পগুলি বিস্তৃত পরিসরে পরিবার পরিকল্পনা কর্মকান্ডে বড় অঙ্কের অর্থ যোগান দিয়েছে। সরকার প্রয়োজনীয় সচেতনতা সৃষ্টি করেছে এবং এসব সেবার সার্বিক উন্নতিবিধানসহ সেগুলির চাহিদাও বাড়তে পারে। তবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে এগুলি সহজলভ্য করার কাজটি খুবই জটিল, অথচ দেশে জনসংখ্যা হ্রাসের জন্য তা অপরিহার্য।  [জিয়া উদ্দিন আহমেদ]


আরও দেখুন সবুজ ছাতা