পরিবহণ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
২ নং লাইন: ২ নং লাইন:
'''পরিবহণ'''  বলতে বোঝায় স্থল, জল ও আকাশ পথে মানুষ ও মালামাল স্থানান্তর। বাংলাদেশ মূলত নদীমাতৃক দেশ বলে বাংলার পরিবহণের ইতিহাস মূলত নৌপরিবহণেরই ইতিহাস। সড়ক ব্যবস্থার অভাবে এক সময় যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে নৌপথের গুরুত্ব ছিল অনেক বেশি এবং নৌপথে সহজে এক জায়গা থেকে অন্যত্র মালামাল আনা-নেওয়া হতো। সমগ্র পৃথিবী থেকে, বিশেষ করে আরব দেশসমূহ, তুরস্ক, পর্তুগাল, ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ডের নাবিকরা অতীতে নৌপথে ভারতবর্ষে আসতেন। উপমহাদেশে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ব্রিটিশদের অবদান অনেক এবং তারাই ১৮৬২ সালে সর্বপ্রথম বাংলাদেশে রেলপথ স্থাপন ও রেলগাড়ি চালু করে। তবে ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলার পূর্বাঞ্চলের প্রতি খুব একটা মনোযোগ দেওয়া হয় নি। পাকিস্তান সরকারও পূর্ব পাকিস্তানের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের দিকে তেমন একটা দৃষ্টিপাত করে নি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যোগাযোগ অবকাঠামো বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। স্বাধীনতার তিন দশকের মধ্যে মূলত বৈদেশিক সাহায্যে তথা বিদেশের অর্থ ও কারিগরি সহযোগিতায় বাংলাদেশের পরিবহণ খাত দ্রুত বিকশিত হয়।
'''পরিবহণ'''  বলতে বোঝায় স্থল, জল ও আকাশ পথে মানুষ ও মালামাল স্থানান্তর। বাংলাদেশ মূলত নদীমাতৃক দেশ বলে বাংলার পরিবহণের ইতিহাস মূলত নৌপরিবহণেরই ইতিহাস। সড়ক ব্যবস্থার অভাবে এক সময় যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে নৌপথের গুরুত্ব ছিল অনেক বেশি এবং নৌপথে সহজে এক জায়গা থেকে অন্যত্র মালামাল আনা-নেওয়া হতো। সমগ্র পৃথিবী থেকে, বিশেষ করে আরব দেশসমূহ, তুরস্ক, পর্তুগাল, ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ডের নাবিকরা অতীতে নৌপথে ভারতবর্ষে আসতেন। উপমহাদেশে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ব্রিটিশদের অবদান অনেক এবং তারাই ১৮৬২ সালে সর্বপ্রথম বাংলাদেশে রেলপথ স্থাপন ও রেলগাড়ি চালু করে। তবে ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলার পূর্বাঞ্চলের প্রতি খুব একটা মনোযোগ দেওয়া হয় নি। পাকিস্তান সরকারও পূর্ব পাকিস্তানের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের দিকে তেমন একটা দৃষ্টিপাত করে নি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যোগাযোগ অবকাঠামো বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। স্বাধীনতার তিন দশকের মধ্যে মূলত বৈদেশিক সাহায্যে তথা বিদেশের অর্থ ও কারিগরি সহযোগিতায় বাংলাদেশের পরিবহণ খাত দ্রুত বিকশিত হয়।


[[Image:TransportNetwork.jpg|thumb|400px|right|পরিবহণ]]
[[Image:TransportNetwork.jpg|thumb|400px|right]]
বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত বাংলাদেশ অনেক নদ-নদী দ্বারা বেষ্টিত। দেশের প্রায় সমগ্র ভূখন্ড সমতল ও নিন্মভূমি দ্বারা গঠিত। এর জলপথের দৈর্ঘ্য ২৪,০০০ কিমি। তিনটি প্রধান প্রধান নদী এবং এদের মিলিত প্রবাহ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বদ্বীপ সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশে স্থল সীমানার ভিতরে জলভাগ প্রায় ৯,০০০ বর্গ কিমি আর সামুদ্রিক উপকূলের দৈর্ঘ্য ৭২০ নটিক্যাল মাইল। সমুদ্রে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক জোনের আয়তন প্রায় ২০,০০০ বর্গ কিমি। দেশের ভূখন্ডের দুই-তৃতীয়াংশ বন্যায় প্লাবিত হয় এবং অধিকাংশ এলাকাই বছরে দুই থেকে পাঁচ মাস জলমগ্ন থাকে। ফলে সড়ক ও রেলপথের উন্নয়ন এবং রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়ায়। অন্যদিকে বাংলাদেশের জন্য প্রায় প্রাকৃতিক নৌপরিবহণই তুলনামূলকভাবে স্বল্পমূল্যের যোগাযোগ ব্যবস্থা। কোনো কোনো এলাকায় নৌপরিবহণ একমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা। বাংলাদেশের অভ্যন্তর ভাগের মোট জলপথের ৮,৪৩৩ কিমি পথ বর্ষাকলে নাব্য থাকে আর শুকনা মৌসুমে তা হ্রাস পেয়ে দাঁড়ায় প্রায় ৪,৮০০ কিমি। ১৯৭০ সালে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের অধীনে নিবন্ধনকৃত সকল লঞ্চ এবং স্টিমারের সংখ্যা ছিল ২,৭১২। অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্পোরেশনের অধীনে সরকারের একটি নৌপরিবহণ পুল আছে যেটি বছরে গড়ে ১.৩ মিলিয়ন যাত্রী এবং ৪৫,০০০ টন মালামাল বহন করে। অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের অধীনে রেজিস্ট্রিকৃত লঞ্চ, স্টিমার এবং জাহাজ বছরে প্রায় ৮০ মিলিয়ন যাত্রী এবং ৬ মিলিয়ন টন মালামাল পরিবহণ করে। ১৯৯০-এর পূর্বপর্যন্ত এই কর্পোরেশনের ফেরি সার্ভিস বছরে প্রায় ৩.৫ মিলিয়ন যাত্রী পারাপার করত। তবে দাউদকান্দি সেতু, মেঘনা-গোমতি সেতু, বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী সেতু নির্মাণের পরে যাত্রী পারাপারের এই সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পায়। বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনই সমুদ্রগামী নৌযান পরিচালনাকারী প্রধান প্রতিষ্ঠান। বাংলার দূত নামক জাহাজ দিয়ে এই প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন মোট ২১টি জাহাজ সংগ্রহ করে। সেগুলির মোট বহন ক্ষমতা ৩,০৬,৮০৬ টন। এই কর্পোরেশন পরে জাহাজ সংখ্যা আর বাড়ায় নি। তবে এই বাণিজ্যে ব্যক্তিখাত অনুমোদন লাভের পর বাংলাদেশের সমুদ্রগামী জাহাজের সংখ্যা এবং পরিবহণ ক্ষমতা বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে (২০১১) এর ৪,০৫,৮৪৫ মেট্রিকটন বহন ক্ষমতার ৩৬টি জাহাজ রয়েছে। চট্টগ্রাম ও মংলা এই দুটিই বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দর এবং এগুলির মাধ্যমে দেশের মোট রপ্তানির ৮০% এবং আমদানির ৯৫% পরিচালিত হয়ে থাকে।
বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত বাংলাদেশ অনেক নদ-নদী দ্বারা বেষ্টিত। দেশের প্রায় সমগ্র ভূখন্ড সমতল ও নিন্মভূমি দ্বারা গঠিত। এর জলপথের দৈর্ঘ্য ২৪,০০০ কিমি। তিনটি প্রধান প্রধান নদী এবং এদের মিলিত প্রবাহ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বদ্বীপ সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশে স্থল সীমানার ভিতরে জলভাগ প্রায় ৯,০০০ বর্গ কিমি আর সামুদ্রিক উপকূলের দৈর্ঘ্য ৭২০ নটিক্যাল মাইল। সমুদ্রে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক জোনের আয়তন প্রায় ২০,০০০ বর্গ কিমি। দেশের ভূখন্ডের দুই-তৃতীয়াংশ বন্যায় প্লাবিত হয় এবং অধিকাংশ এলাকাই বছরে দুই থেকে পাঁচ মাস জলমগ্ন থাকে। ফলে সড়ক ও রেলপথের উন্নয়ন এবং রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়ায়। অন্যদিকে বাংলাদেশের জন্য প্রায় প্রাকৃতিক নৌপরিবহণই তুলনামূলকভাবে স্বল্পমূল্যের যোগাযোগ ব্যবস্থা। কোনো কোনো এলাকায় নৌপরিবহণ একমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা। বাংলাদেশের অভ্যন্তর ভাগের মোট জলপথের ৮,৪৩৩ কিমি পথ বর্ষাকলে নাব্য থাকে আর শুকনা মৌসুমে তা হ্রাস পেয়ে দাঁড়ায় প্রায় ৪,৮০০ কিমি। ১৯৭০ সালে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের অধীনে নিবন্ধনকৃত সকল লঞ্চ এবং স্টিমারের সংখ্যা ছিল ২,৭১২। অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্পোরেশনের অধীনে সরকারের একটি নৌপরিবহণ পুল আছে যেটি বছরে গড়ে ১.৩ মিলিয়ন যাত্রী এবং ৪৫,০০০ টন মালামাল বহন করে। অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের অধীনে রেজিস্ট্রিকৃত লঞ্চ, স্টিমার এবং জাহাজ বছরে প্রায় ৮০ মিলিয়ন যাত্রী এবং ৬ মিলিয়ন টন মালামাল পরিবহণ করে। ১৯৯০-এর পূর্বপর্যন্ত এই কর্পোরেশনের ফেরি সার্ভিস বছরে প্রায় ৩.৫ মিলিয়ন যাত্রী পারাপার করত। তবে দাউদকান্দি সেতু, মেঘনা-গোমতি সেতু, বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী সেতু নির্মাণের পরে যাত্রী পারাপারের এই সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পায়। বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনই সমুদ্রগামী নৌযান পরিচালনাকারী প্রধান প্রতিষ্ঠান। বাংলার দূত নামক জাহাজ দিয়ে এই প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন মোট ২১টি জাহাজ সংগ্রহ করে। সেগুলির মোট বহন ক্ষমতা ৩,০৬,৮০৬ টন। এই কর্পোরেশন পরে জাহাজ সংখ্যা আর বাড়ায় নি। তবে এই বাণিজ্যে ব্যক্তিখাত অনুমোদন লাভের পর বাংলাদেশের সমুদ্রগামী জাহাজের সংখ্যা এবং পরিবহণ ক্ষমতা বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে (২০১১) এর ৪,০৫,৮৪৫ মেট্রিকটন বহন ক্ষমতার ৩৬টি জাহাজ রয়েছে। চট্টগ্রাম ও মংলা এই দুটিই বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দর এবং এগুলির মাধ্যমে দেশের মোট রপ্তানির ৮০% এবং আমদানির ৯৫% পরিচালিত হয়ে থাকে।


২০ নং লাইন: ২০ নং লাইন:
ব্রিটিশ আমলে পূর্ববঙ্গে সামরিক প্রয়োজনে বিভিন্ন স্থানে আকাশ পথ চালু করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ঢাকা, কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, চকোরিয়া, সিলেট, যশোর, রাজশাহী এবং লালমনিরহাটে বিমান অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ভারতের এই অংশে কোন বেসামরিক বিমান চলাচল ছিল না। ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্বে বেসামরিক বিমান চলাচলের কিছুটা উন্নয়ন ঘটে এবং ঢাকায় আন্তর্জাতিক বিমানসহ অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল শুরু হয়। ২০১১ সালে বাংলাদেশে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (ঢাকা), শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (চট্টগ্রাম) এবং ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ (সিলেট) ১০টি বিমানবন্দর ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহূত পুরাতন একটি ডাকোটা ও বিমানবাহিনী থেকে একটি ডিসি-৩ বিমান নিয়ে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ বিমান গঠন করা হয়। বাংলাদেশ বিমান দুটি পুরাতন এফ-২৭ এয়ারক্রাফট ক্রয় করে এবং ঢাকা-সিলেট পথে চলাচল শুরু করে। ১৯৭২ সালের ৪ মার্চ বাংলাদেশ বিমান আন্তর্জাতিক পথে যাত্রা শুরু করে একটি ব্রিটিশ কোম্পানি থেকে ভাড়া করা বিমান নিয়ে। ২০১০ সালে বাংলাদেশ বিমান দেশের ভিতর সাতটি পথে এবং বহির্বিশ্বে ছাবিবশটি গন্তব্যে যাতায়াত করে। বিমান বহরে আছে ৪টি ডিসি-১০, ৩টি এয়ার বাস এ-৩০০, দুটি বোয়িং-৭৩৭ ও একটি ফকার-২৮ মডেলের উড়োজাহাজ। বিমান অবশ্য ইতোমধ্যে দুটি নতুন বোয়িং-৭৩৭ ও চারটি বোয়িং-৭৭৭ উড়োজাহাজ কেনার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে, ২০১৫ সাল নাগাদ এ উড়োজাহাজগুলি সরবরাহ করা হলে সেগুলি বর্তমান বহরের পুরনো ডিসি-১০ ও ভাড়া করা বোয়িং-৭৩৭ এর স্থলাভিষিক্ত হবে। ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে বাংলাদেশ বিমান ১,২৮,৫৬৮ যাত্রী এবং ৩৬,২৭২ টন মালামাল বহন করেছে। বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচলের মাধ্যমে বিমান ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত একাই ব্যবসা করত এবং এরপর থেকে কিছু বেসামরিক কোম্পানি নিজস্ব এয়ারক্রাফট নিয়ে এই ব্যবসায়ে আবির্ভূত হয়। বেসরকারি বিমান কোম্পানিগুলোর এয়ারবাস আভ্যন্তরীণ, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রুটে চলাচল করে। ২০১০ সাল পর্যন্ত বেসরকারি বিমান চলাচল ব্যবসায়ের জন্য লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোম্পানিসমূহ হলো অ্যারো বেঙ্গল এয়ারলাইন্স, এয়ার পারাবত, জিএমজি এয়ারলাইন্স, বিসমিল্লাহ এয়ারলাইন্স, বেস্ট এভিয়েশন, এয়ার ম্যাক্সিমাস, রিজেন্ট এয়ারওয়েজ, ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স, স্কাই ক্যাপিট্যাল এয়ারলাইন্স ও জুম এয়ারওয়েজ। এগুলির মধ্যে বর্তমানে জিএমজি এয়ারলাইন্স, বেস্ট এভিয়েশন, রিজেন্ট এয়ারওয়েজ ও ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনা করছে। কিন্তু জিএমজি এয়ারলাইন্স ও ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স ২০১২ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল।  [সাদাত উল্লাহ খান]
ব্রিটিশ আমলে পূর্ববঙ্গে সামরিক প্রয়োজনে বিভিন্ন স্থানে আকাশ পথ চালু করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ঢাকা, কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, চকোরিয়া, সিলেট, যশোর, রাজশাহী এবং লালমনিরহাটে বিমান অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ভারতের এই অংশে কোন বেসামরিক বিমান চলাচল ছিল না। ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্বে বেসামরিক বিমান চলাচলের কিছুটা উন্নয়ন ঘটে এবং ঢাকায় আন্তর্জাতিক বিমানসহ অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল শুরু হয়। ২০১১ সালে বাংলাদেশে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (ঢাকা), শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (চট্টগ্রাম) এবং ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ (সিলেট) ১০টি বিমানবন্দর ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহূত পুরাতন একটি ডাকোটা ও বিমানবাহিনী থেকে একটি ডিসি-৩ বিমান নিয়ে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ বিমান গঠন করা হয়। বাংলাদেশ বিমান দুটি পুরাতন এফ-২৭ এয়ারক্রাফট ক্রয় করে এবং ঢাকা-সিলেট পথে চলাচল শুরু করে। ১৯৭২ সালের ৪ মার্চ বাংলাদেশ বিমান আন্তর্জাতিক পথে যাত্রা শুরু করে একটি ব্রিটিশ কোম্পানি থেকে ভাড়া করা বিমান নিয়ে। ২০১০ সালে বাংলাদেশ বিমান দেশের ভিতর সাতটি পথে এবং বহির্বিশ্বে ছাবিবশটি গন্তব্যে যাতায়াত করে। বিমান বহরে আছে ৪টি ডিসি-১০, ৩টি এয়ার বাস এ-৩০০, দুটি বোয়িং-৭৩৭ ও একটি ফকার-২৮ মডেলের উড়োজাহাজ। বিমান অবশ্য ইতোমধ্যে দুটি নতুন বোয়িং-৭৩৭ ও চারটি বোয়িং-৭৭৭ উড়োজাহাজ কেনার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে, ২০১৫ সাল নাগাদ এ উড়োজাহাজগুলি সরবরাহ করা হলে সেগুলি বর্তমান বহরের পুরনো ডিসি-১০ ও ভাড়া করা বোয়িং-৭৩৭ এর স্থলাভিষিক্ত হবে। ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে বাংলাদেশ বিমান ১,২৮,৫৬৮ যাত্রী এবং ৩৬,২৭২ টন মালামাল বহন করেছে। বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচলের মাধ্যমে বিমান ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত একাই ব্যবসা করত এবং এরপর থেকে কিছু বেসামরিক কোম্পানি নিজস্ব এয়ারক্রাফট নিয়ে এই ব্যবসায়ে আবির্ভূত হয়। বেসরকারি বিমান কোম্পানিগুলোর এয়ারবাস আভ্যন্তরীণ, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রুটে চলাচল করে। ২০১০ সাল পর্যন্ত বেসরকারি বিমান চলাচল ব্যবসায়ের জন্য লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোম্পানিসমূহ হলো অ্যারো বেঙ্গল এয়ারলাইন্স, এয়ার পারাবত, জিএমজি এয়ারলাইন্স, বিসমিল্লাহ এয়ারলাইন্স, বেস্ট এভিয়েশন, এয়ার ম্যাক্সিমাস, রিজেন্ট এয়ারওয়েজ, ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স, স্কাই ক্যাপিট্যাল এয়ারলাইন্স ও জুম এয়ারওয়েজ। এগুলির মধ্যে বর্তমানে জিএমজি এয়ারলাইন্স, বেস্ট এভিয়েশন, রিজেন্ট এয়ারওয়েজ ও ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনা করছে। কিন্তু জিএমজি এয়ারলাইন্স ও ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স ২০১২ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল।  [সাদাত উল্লাহ খান]


''আরও দেখুন''  [[বিমান পরিবহণ|বিমান পরিবহণ]]; [[নৌ পরিবহণ|নৌ পরিবহণ]]; [[সড়ক পরিবহণ|সড়ক পরিবহণ]]; [[রেলওয়ে|রেলওয়ে]]।
''আরও দেখুন''  [[বিমান পরিবহণ|বিমান পরিবহণ]]; [[নৌপরিবহণ|নৌপরিবহণ]]; [[সড়ক পরিবহণ|সড়ক পরিবহণ]]; [[রেলওয়ে|রেলওয়ে]]।




[[en:Transport]]
[[en:Transport]]

০৫:৫৯, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

পরিবহণ  বলতে বোঝায় স্থল, জল ও আকাশ পথে মানুষ ও মালামাল স্থানান্তর। বাংলাদেশ মূলত নদীমাতৃক দেশ বলে বাংলার পরিবহণের ইতিহাস মূলত নৌপরিবহণেরই ইতিহাস। সড়ক ব্যবস্থার অভাবে এক সময় যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে নৌপথের গুরুত্ব ছিল অনেক বেশি এবং নৌপথে সহজে এক জায়গা থেকে অন্যত্র মালামাল আনা-নেওয়া হতো। সমগ্র পৃথিবী থেকে, বিশেষ করে আরব দেশসমূহ, তুরস্ক, পর্তুগাল, ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ডের নাবিকরা অতীতে নৌপথে ভারতবর্ষে আসতেন। উপমহাদেশে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ব্রিটিশদের অবদান অনেক এবং তারাই ১৮৬২ সালে সর্বপ্রথম বাংলাদেশে রেলপথ স্থাপন ও রেলগাড়ি চালু করে। তবে ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলার পূর্বাঞ্চলের প্রতি খুব একটা মনোযোগ দেওয়া হয় নি। পাকিস্তান সরকারও পূর্ব পাকিস্তানের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের দিকে তেমন একটা দৃষ্টিপাত করে নি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যোগাযোগ অবকাঠামো বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। স্বাধীনতার তিন দশকের মধ্যে মূলত বৈদেশিক সাহায্যে তথা বিদেশের অর্থ ও কারিগরি সহযোগিতায় বাংলাদেশের পরিবহণ খাত দ্রুত বিকশিত হয়।

বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত বাংলাদেশ অনেক নদ-নদী দ্বারা বেষ্টিত। দেশের প্রায় সমগ্র ভূখন্ড সমতল ও নিন্মভূমি দ্বারা গঠিত। এর জলপথের দৈর্ঘ্য ২৪,০০০ কিমি। তিনটি প্রধান প্রধান নদী এবং এদের মিলিত প্রবাহ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বদ্বীপ সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশে স্থল সীমানার ভিতরে জলভাগ প্রায় ৯,০০০ বর্গ কিমি আর সামুদ্রিক উপকূলের দৈর্ঘ্য ৭২০ নটিক্যাল মাইল। সমুদ্রে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক জোনের আয়তন প্রায় ২০,০০০ বর্গ কিমি। দেশের ভূখন্ডের দুই-তৃতীয়াংশ বন্যায় প্লাবিত হয় এবং অধিকাংশ এলাকাই বছরে দুই থেকে পাঁচ মাস জলমগ্ন থাকে। ফলে সড়ক ও রেলপথের উন্নয়ন এবং রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়ায়। অন্যদিকে বাংলাদেশের জন্য প্রায় প্রাকৃতিক নৌপরিবহণই তুলনামূলকভাবে স্বল্পমূল্যের যোগাযোগ ব্যবস্থা। কোনো কোনো এলাকায় নৌপরিবহণ একমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা। বাংলাদেশের অভ্যন্তর ভাগের মোট জলপথের ৮,৪৩৩ কিমি পথ বর্ষাকলে নাব্য থাকে আর শুকনা মৌসুমে তা হ্রাস পেয়ে দাঁড়ায় প্রায় ৪,৮০০ কিমি। ১৯৭০ সালে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের অধীনে নিবন্ধনকৃত সকল লঞ্চ এবং স্টিমারের সংখ্যা ছিল ২,৭১২। অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্পোরেশনের অধীনে সরকারের একটি নৌপরিবহণ পুল আছে যেটি বছরে গড়ে ১.৩ মিলিয়ন যাত্রী এবং ৪৫,০০০ টন মালামাল বহন করে। অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের অধীনে রেজিস্ট্রিকৃত লঞ্চ, স্টিমার এবং জাহাজ বছরে প্রায় ৮০ মিলিয়ন যাত্রী এবং ৬ মিলিয়ন টন মালামাল পরিবহণ করে। ১৯৯০-এর পূর্বপর্যন্ত এই কর্পোরেশনের ফেরি সার্ভিস বছরে প্রায় ৩.৫ মিলিয়ন যাত্রী পারাপার করত। তবে দাউদকান্দি সেতু, মেঘনা-গোমতি সেতু, বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী সেতু নির্মাণের পরে যাত্রী পারাপারের এই সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পায়। বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনই সমুদ্রগামী নৌযান পরিচালনাকারী প্রধান প্রতিষ্ঠান। বাংলার দূত নামক জাহাজ দিয়ে এই প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন মোট ২১টি জাহাজ সংগ্রহ করে। সেগুলির মোট বহন ক্ষমতা ৩,০৬,৮০৬ টন। এই কর্পোরেশন পরে জাহাজ সংখ্যা আর বাড়ায় নি। তবে এই বাণিজ্যে ব্যক্তিখাত অনুমোদন লাভের পর বাংলাদেশের সমুদ্রগামী জাহাজের সংখ্যা এবং পরিবহণ ক্ষমতা বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে (২০১১) এর ৪,০৫,৮৪৫ মেট্রিকটন বহন ক্ষমতার ৩৬টি জাহাজ রয়েছে। চট্টগ্রাম ও মংলা এই দুটিই বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দর এবং এগুলির মাধ্যমে দেশের মোট রপ্তানির ৮০% এবং আমদানির ৯৫% পরিচালিত হয়ে থাকে।

মুগল সম্রাটগণ সামরিক ও বাণিজ্যিক প্রয়োজনে সড়ক ও জনপথের যে উন্নয়ন সাধন করেছিল আঠারো শতকের শেষ নাগাদ সেগুলি অনেকাংশেই ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। উল্লেখযোগ্য একটি পুরানো সড়ক হলো সোনারগাঁও সড়ক বা গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড। এছাড়া ঢাকার সঙ্গে পার্শ্ববর্তী জেলাসমূহের উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল। ১৬৬১ সালে মীর জুমলার তৈরি টঙ্গী ও  পাগলা সেতুর ধ্বংসাবশেষ থেকে তা কিছুটা অনুমান করা যায়। ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলাদেশ ভূখন্ডে সড়ক ও জনপথের যে সামান্য উন্নতি হয়েছিল তার ফলে ১৯৪৭ সালে পূর্ব পাকিস্তানে আনুমানিক ৪৮০ কিমি-এর কম পাকা রাস্তা এবং প্রায় ৩,৬০০ কিমি কাঁচা রাস্তা ছিল। ১৯৪৭ সালের পর থেকে পূর্ব পাকিস্তানে সড়ক পরিবহণ ব্যবস্থায় কিছুটা অগ্রগতি সাধিত হতে থাকে এবং ১৯৭০-এ পাকা রাস্তার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩,৮৬০ কিমি। বাংলাদেশে স্বাধীনতার পরের কয়েক দশকে উল্লেখযোগ্য হারে পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। ২০১০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে ৩,৪৭৮ কিমি জাতীয় মহাসড়ক, ৪২২২ কিমি আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং ১৩,২৪৮ কিমি জেলা সড়কসহ মোট (প্রায়) ২০,৯৪৮ কিমি পাকা সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। ১৯৪৭ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে মোট ৪,৩৮০টি মোটরযান ছিল, ২০১০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৭,৩৭,০০।

বাংলাদেশের পল্লী অঞ্চলে রাস্তাঘাট উন্নয়নে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের বিপুল কর্মতৎপরতা প্রশংসাযোগ্য। ১৯৯০-এর দশকে সড়ক পরিবহণ ব্যবসায়ে বেসরকারি খাতের ব্যাপক অংশগ্রহণের কারণে পরিবহণ খাতে দ্রুত পরিবর্তন ঘটেছে। আন্তঃজেলা বাস সার্ভিসের পাশাপাশি নগর বাস সার্ভিসেও আধুনিক অনেক বাস ও বেসরকারি ট্যাক্সিক্যাব চালু হয়েছে। সড়ক ও জনপথের যথেষ্ট সংস্কার ও উন্নয়ন করা হয়েছে। ২০১১ সালে বাংলাদেশের সড়ক ও জনপথে চলাচলকারী রেজিস্ট্রিকৃত যানবাহনের মধ্যে বাস ও মিনিবাসের সংখ্যা ১,৫৯,৬০০০, মাইক্রোবাস ৯৪,২৯৮, ট্রাক ৮৭,১৮২, প্রাইভেট কার ২,১৫,৭৮৬, ট্যাক্সি ১২,৩০৭, অটোরিক্সা ১,৯১,১৫৩ এবং মটরসাইকেল ৮,৪৮,৩৭২টি।

বাংলাদেশে প্রথম রেলপথের সূচনা হয় ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর, দর্শনা থেকে জগতি পর্যন্ত ৫৩.১২ কিমি রেলপথ চালুর মাধ্যমে। ১৮৮৫ সালে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের মধ্যে রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয় এবং দশ বছর পরে চট্টগ্রাম-কুমিল্লা এবং লাকসাম-চাঁদপুর এই দুটি রেলপথ স্থাপিত হয়। ১৮৯১ সালে স্থাপিত  আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ে ১৯৪২ সালে বেঙ্গল এবং আসাম রেলওয়ে নামে দুটি পৃথক সংস্থায় বিভক্ত হয়। ১৯৪৭ সালে বেঙ্গল এবং আসাম রেলওয়ে থেকে কিছু অংশ নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে  ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে গঠন করা হয় এবং ১৯৭১ সাল পর্যন্ত এই নাম বহাল থাকে। ১৯৫১ সালে বাংলাদেশ অঞ্চলে রেলপথের দৈর্ঘ্য ছিল মোট ২,৬১০ কিমি, তন্মধ্যে ৮০৫ কিমি ব্রডগেজ, ১,৭৭৩ কিমি মিটারগেজ এবং ৩২ কিমি ন্যারোগেজ। ১৯৬০-এর দশকে ন্যারোগেজ রেলপথকে মিটারগেজে পরিণত করা হয়। ১৯৭১-এ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়েকে বাংলাদেশ রেলওয়ে নামে রূপান্তর করা হয়। ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশে মোট রেলপথের দৈর্ঘ্য ছিল ২,৮৯২ কিমি, তন্মধ্যে ৯৭৯ কিমি ব্রডগেজ এবং ১৯১৩ কিমি মিটারগেজ। ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশে রেলপথের স্টেশন ছিল মোট ৫১৭টি। ১৯৯০-এর দশকে কোন কোন অংশ বন্ধ করে দেওয়ার ফলে বাংলাদেশ রেলপথের দৈর্ঘ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। তবে  বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী সেতু নির্মাণের ফলে রেলপথ বিস্তৃত করার ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে ঢাকার সঙ্গে ভূয়াপুর-টাঙ্গাইল হয়ে যমুনা সেতুর পূর্ব অংশের রেলপথের নির্মাণ কাজ ২০০১ সালে সমাপ্ত হয়েছে। ২০০৫ সালে বাংলাদেশে রেলপথের দৈর্ঘ্য ছিল মোট ২,৮৫৫ কিমি, এর মধ্যে ব্রডগেজ ৬৬০ কিমি, ১৮৩০ কিমি মিটার গেজ এবং ৩৬৫ কিমি ডুয়াল গেজ রেলপথ। এ সময় বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্ব ও পশ্চিম জোন মিলিয়ে মোট ৪৫৪টি স্টেশন ছিল। বাংলাদেশ রেলওয়ে ১৯৭১ সালে ২.৯৩৬ মিলিয়ন টন মালামাল এবং ৩৭.৪৯৪ মিলিয়ন যাত্রী বহন করেছে। ২০০৪-০৫ অর্থবছরে যাত্রীসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ মিলিয়ন এবং এ সময় বাংলাদেশ রেলওয়ে পণ্য পরিবহণ করেছে মোট ৩.২০৬ মিলিয়ন টন। ২০০৬-০৭ সালে রেলওয়েস্টেশনের সংখ্যা হ্রাস পেয়ে দাঁড়ায় ৪৪০ এ। ফলে রেলের আয়ও কমে যায়। ২০০৮-০৯ সালে রেল থেকে আয় হয় ১৩১১.২৩৬ মিলিয়ন টাকা যা ২০০৯-১০ সালে হ্রাস পেয়ে দাঁড়ায় ১১৬৩.৬১২ মিলিয়ন টাকায়। বাংলাদেশ রেলওয়ে ২০০৬-০৭ সালে যেখানে ৭৭৮.৫৪ মিলিয়ন মেট্রিকটন পণ্য পরিবহণ করে সেখানে ২০০৯-১০ সালে তা হ্রাস পেয়ে দাঁড়ায় ৭১২.৭৮ মিলিয়ন মেট্রিকটন। সম্প্রতি যাত্রীদের আকৃষ্ট করার জন্য বাংলাদেশ সরকার রেলপথের কিছু সেক্টর লিজ ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপনার খাতে ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং তা আংশিক বাস্তবায়নও করেছে। ফলে বাংলাদেশে রেলপথের দীর্ঘদিনের ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। অধিকন্তু মালামাল পরিবহণ ও যাত্রীসেবার মান কিছুটা উন্নত হয়েছে।

ব্রিটিশ আমলে পূর্ববঙ্গে সামরিক প্রয়োজনে বিভিন্ন স্থানে আকাশ পথ চালু করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ঢাকা, কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, চকোরিয়া, সিলেট, যশোর, রাজশাহী এবং লালমনিরহাটে বিমান অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ভারতের এই অংশে কোন বেসামরিক বিমান চলাচল ছিল না। ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্বে বেসামরিক বিমান চলাচলের কিছুটা উন্নয়ন ঘটে এবং ঢাকায় আন্তর্জাতিক বিমানসহ অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল শুরু হয়। ২০১১ সালে বাংলাদেশে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (ঢাকা), শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (চট্টগ্রাম) এবং ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ (সিলেট) ১০টি বিমানবন্দর ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহূত পুরাতন একটি ডাকোটা ও বিমানবাহিনী থেকে একটি ডিসি-৩ বিমান নিয়ে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ বিমান গঠন করা হয়। বাংলাদেশ বিমান দুটি পুরাতন এফ-২৭ এয়ারক্রাফট ক্রয় করে এবং ঢাকা-সিলেট পথে চলাচল শুরু করে। ১৯৭২ সালের ৪ মার্চ বাংলাদেশ বিমান আন্তর্জাতিক পথে যাত্রা শুরু করে একটি ব্রিটিশ কোম্পানি থেকে ভাড়া করা বিমান নিয়ে। ২০১০ সালে বাংলাদেশ বিমান দেশের ভিতর সাতটি পথে এবং বহির্বিশ্বে ছাবিবশটি গন্তব্যে যাতায়াত করে। বিমান বহরে আছে ৪টি ডিসি-১০, ৩টি এয়ার বাস এ-৩০০, দুটি বোয়িং-৭৩৭ ও একটি ফকার-২৮ মডেলের উড়োজাহাজ। বিমান অবশ্য ইতোমধ্যে দুটি নতুন বোয়িং-৭৩৭ ও চারটি বোয়িং-৭৭৭ উড়োজাহাজ কেনার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে, ২০১৫ সাল নাগাদ এ উড়োজাহাজগুলি সরবরাহ করা হলে সেগুলি বর্তমান বহরের পুরনো ডিসি-১০ ও ভাড়া করা বোয়িং-৭৩৭ এর স্থলাভিষিক্ত হবে। ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে বাংলাদেশ বিমান ১,২৮,৫৬৮ যাত্রী এবং ৩৬,২৭২ টন মালামাল বহন করেছে। বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচলের মাধ্যমে বিমান ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত একাই ব্যবসা করত এবং এরপর থেকে কিছু বেসামরিক কোম্পানি নিজস্ব এয়ারক্রাফট নিয়ে এই ব্যবসায়ে আবির্ভূত হয়। বেসরকারি বিমান কোম্পানিগুলোর এয়ারবাস আভ্যন্তরীণ, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রুটে চলাচল করে। ২০১০ সাল পর্যন্ত বেসরকারি বিমান চলাচল ব্যবসায়ের জন্য লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোম্পানিসমূহ হলো অ্যারো বেঙ্গল এয়ারলাইন্স, এয়ার পারাবত, জিএমজি এয়ারলাইন্স, বিসমিল্লাহ এয়ারলাইন্স, বেস্ট এভিয়েশন, এয়ার ম্যাক্সিমাস, রিজেন্ট এয়ারওয়েজ, ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স, স্কাই ক্যাপিট্যাল এয়ারলাইন্স ও জুম এয়ারওয়েজ। এগুলির মধ্যে বর্তমানে জিএমজি এয়ারলাইন্স, বেস্ট এভিয়েশন, রিজেন্ট এয়ারওয়েজ ও ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনা করছে। কিন্তু জিএমজি এয়ারলাইন্স ও ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স ২০১২ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল।  [সাদাত উল্লাহ খান]

আরও দেখুন বিমান পরিবহণ; নৌপরিবহণ; সড়ক পরিবহণ; রেলওয়ে