পরাগল খান
পরাগল খান আলাউদ্দীন হোসেন শাহের (১৪৯৩-১৫১৯) সেনাপতি ও চট্টগ্রামের শাসনকর্তা। চট্টগ্রামের জোবরা গাঁয়ে রাস্তিখান মসজিদে প্রাপ্ত শিলালিপি (১৪৭৪ খ্রি.) থেকে জানা যায় তাঁর পিতা রাস্তিখান ছিলেন রুকনুদ্দীন বারবক শাহ এর অধীনে চট্টগ্রামের শাসনকর্তা। আলাউদ্দীন হোসেন শাহ্ ১৫১২ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম দখল করে পরাগল খানকে লস্কর পদে (সেনাপতি) নিয়োগ করেন। এজন্য তিনি ‘লস্কর পরাগল খান’ নামেও পরিচিত।
তাঁর পূর্বপুরুষগণ বংশপরম্পরায় চট্টগ্রামের অধিবাসী হলেও এবং তাঁর পিতা চট্টগ্রামের শাসনকর্তা থাকলেও পরাগল খান বরাবর চট্টগ্রামে ছিলেন না। তিনি সম্ভবত গৌড়ে ছিলেন এবং গৌড়াধিপতির অর্পিত দায়িত্ব নিয়ে তিনি চট্টগ্রাম আসেন। হোসেন শাহ চট্টগ্রামে তাঁকে অনেক ভূ-সম্পত্তি ও মূল্যবান উপঢৌকন দান করেছিলেন।
ফেনী নদীর তীরে চট্টগ্রামের অধীনস্থ জোরওয়ারগঞ্জ এলাকায় পরাগল খান বসবাস করতেন। সম্ভবত ‘পরাগলপুর’ গ্রামটি তাঁর নামে পরিচিত। তাঁর বংশধররা এখনও সেখানে বসবাস করছেন। পরাগল দিঘির জল আশে-পাশের লোকেরা এখনও ব্যবহার করে।
পরাগল খান ছিলেন একজন বিশ্বস্ত ও সফল সেনাপতি। তিনি মগদের সঙ্গে যুদ্ধ করে চট্টগ্রাম উদ্ধার করেন এবং সম্ভবত এতেই খুশি হয়ে হোসেন শাহ তাঁকে চট্টগ্রামের শাসনকর্তা নিয়োগ করেন।
পরাগল খান ছিলেন উদার ও অসাম্প্রদায়িক। তাঁর ন্যায়নিষ্ঠ শাসনে চট্টগ্রামে শান্তি-শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি ছিলেন সাহিত্য-সংস্কৃতির উদার পৃষ্ঠপোষক। কবি কবীন্দ্র পরমেশ্বর ও শ্রীকরনন্দী তাঁদের কাব্যে উদাত্ত ভাষায় তাঁর প্রশংসা করেছেন। তাঁর নির্দেশে তাঁর সভাকবি কবীন্দ্র পরমেশ্বর সংস্কৃত মহাভারত অবলম্বনে বাংলায় মহাভারত রচনা করেন। কবির নামানুসারে কাব্যটি কবীন্দ্র মহাভারত (আনু. ১৫১৫-১৫১৯) এবং পরাগলের নামানুসারে পরাগলী মহাভারত নামেও পরিচিত। [দুলাল ভৌমিক]