পরশুরাম উপজেলা

পরশুরাম উপজেলা (ফেনী জেলা)  আয়তন: ৯৫.৭৬ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°১০´ থেকে ২৩°১৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°২৩´ থেকে ৯১°৩১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিমে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য এবং দক্ষিণে ফুলগাজী  উপজেলা।

জনসংখ্যা ১০১০৬২; পুরুষ ৪৭৯৮১, মহিলা ৫৩০৮১। মুসলিম ৯৬৮৭২, হিন্দু ৪১৭৫, বৌদ্ধ ৫, খ্রিস্টান ২ এবং অন্যান্য ৮।

জলাশয় প্রধান নদী: সিলোনিয়া, কহুয়া ও মুহুরী।

প্রশাসন পরশুরাম থানা গঠিত হয় ৭ মে ১৮৭৯ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ৬৭ ৭১ ২৯৬৯১ ৭১৩৭১ ১০৫৫ ৫৯.১ ৫৮.৬
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিার হার (%)
২২.৩৮ ১৫ ২৯৬৯১ ১৩২৭ ৫৯.১
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
চিথোলিয়া ২৩ ৬১১৭ ১১৯৩৬ ১৩৩৫১ ৫৮.৭
বখ্শ মোহাম্মদ ৪০ ৫৯১৩ ১১০০০ ১২৪৫৯ ৫৪.৩
মির্জানগর ৪৭ ৬১০১ ১০৫৮৯ ১২০৩৬ ৬২.৯

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ শমসের গাজীর খননকৃত দীঘি (সাতকুচিয়া)।

ঐতিহাসিক ঘটনা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এ উপজেলায় মিত্রবাহিনীর বিমান অবতরণের জন্য একটি রানওয়ে তৈরি হয়েছিল।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ৭ নভেম্বর বিলোনিয়া বিওপিতে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে অনেক পাকসেনা নিহত হয় এবং ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। একই দিনে চিথোলিয়ার পাকসেনা ঘাঁটি পুনর্দখল করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন পাকসেনা প্রাণ হারায় এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদ মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে।

বিস্তারিত দেখুন পরশুরাম উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৫।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২২৪, মাযার ৫, মন্দির ৫।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৮.৮%; পুরুষ ৬০.১%, মহিলা ৫৭.৫%। কলেজ ৫, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩২, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১২৫, মাদ্রাসা ২০। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: পরশুরাম সরকারি কলেজ (১৯৭২), খন্ডল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ (১৯৩৪), সুবার বাজার মাদ্রাসা (১৯৩৪)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী মাসিক: সম্প্রীতি, ঝরাপাতা (অনিয়মিত); ত্রৈমাসিক: ধানসিঁড়ি।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান  লাইব্রেরি ৫,  ক্লাব ১৫, সিনেমা হল ১।

গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বিলোনিয়া রেলস্টেশন, কাস্টমস হাউজ, বিলোনিয়া সীমান্ত পর্যবেক্ষণ টাওয়ার।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪৮.৩২%, অকৃষি শ্রমিক ২.৬৪%, শিল্প ০.৬৫%, ব্যবসা ১১.৮১%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.২৫%, চাকরি ১৪.৫৬%, নির্মাণ ১.১৬%, ধর্মীয় সেবা ০.২৯%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৭.৯২% এবং অন্যান্য ৯.৪০%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬৪.৭৯%, ভূমিহীন ৩৫.২১%। শহরে ৫৩% এবং গ্রামে ৬৫.৬৯% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, আখ, রবিশস্য।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, নারিকেল, জাম, আনারস।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১০, হাঁস-মুরগি ৮, হ্যাচারি ২।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৬৭ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৪ কিমি, কাঁচারাস্তা ২২৪ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, মৃৎশিল্প, দারুশিল্প, বাঁশের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১১, মেলা ২। পরশুরাম হাট, সুবার বাজার, বটতলী বাজার, শালধর বাজার উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  ধান।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৬৩.০% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৫.৯%, ট্যাপ ০.০৮% এবং অন্যান্য ৩.৩%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৬৯.২% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৯.৯% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ০.৯% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৩, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৫, কমিউনিটি ক্লিনিক ১৪।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের বন্যায় এ উপজেলার কাঁচা ঘরবাড়ি, গবাদিপশু, ফসল ও অন্যান্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও ব্র্যাক, আশা।  [মোহাম্মদ ইয়াকুব]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; পরশুরাম উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।