নোটারি পাবলিক
নোটারি পাবলিক কোন বিনিময়ে দাবিকৃত অর্থের প্রতিবাদ জানানো এবং প্রাতিষ্ঠানিক চরিত্রের অন্যান্য বিষয় ও আইনি দায়িত্ব পালনের জন্য চুক্তিপত্র, কবুলিয়তনামা ইত্যাদির খসড়া প্রণয়ন অথবা সনদ প্রদান করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন সরকারি কর্মকর্তা অথবা সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তি। দেশের নিজস্ব আইন অনুযায়ী নির্বাহী বিভাগ অথবা অন্য কোন নিয়োগ-কর্তৃপক্ষ নোটারি পাবলিক নিযুক্তি প্রদান করেন।
নোটারি পাবলিককে সংক্ষেপে নোটারি বলা হয়ে থাকে। ‘নোটারি’ শব্দটি মূল নামপদ ‘note’ এবং ‘ary’ অনুসর্গ যোগে গঠিত। শব্দটির উৎপত্তি লাতিন ভাষায় nota+arius থেকে, যার অর্থ শর্টহ্যান্ড লেখক, কেরানি ইত্যাদি।
নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট অ্যাক্ট ১৮৮১ এ ঋণখত, দাবিনামা এবং চেক সংক্রান্ত বিধি প্রণয়ন করা হয়। এটি আইনে পরিণত হয় এবং কার্যকর হয় ১৮৮২ সালের ১ মে নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট অ্যাক্টের সেকশন ১৩৮ এ সরকারকে ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে অ্যাক্টের অধীনে কোন ব্যক্তি অথবা তার অফিসের বলে নোটারি পাবলিক হিসেবে নিযুক্তি দেয়ার জন্য। পাকিস্তান সরকার প্রণীত নোটারিয়াল অর্ডিন্যান্স ১৯৬১ এবং নোটারিয়াল রুলস ১৯৬৪ অনুসরণ করেই মূলত নোটারি পাবলিক নিযোগ দেওয়া হয়। তাতে তাদের ক্ষমতা, কার্যাবলী, বেতন ভাতাদি ইত্যাদি সুনির্দিষ্ট করা থাকে। নোটারিয়াল অধ্যাদেশ প্রবর্তনের পূর্বে নোটারি পাবলিক নিয়োগ দেওয়া হতো ইংল্যান্ডে মাস্টার অব ফ্যাকাল্টিজ কর্তৃক।
যোগ্যতা পূরণসাপেক্ষে সরকার যে কোন আইনজীবি অথবা আইনজীবিগণ এমন ব্যক্তিকেও সারা দেশের জন্য অথবা বাংলাদেশের কোন অংশের জন্য নোটারি হিসেবে নিয়োগ দিতে পারে। তার ন্যুনতম পাঁচ বছরের পেশাগত অভিজ্ঞতা থাকা উচিত। বাংলাদেশে নোটারি নিয়োগে পরীক্ষার কোন ব্যবস্থা নেই এবং যেকোন যোগ্যতা সম্পন্ন মানুষ নির্ধারিত ফরম পূরণ করে আবেদন করতে পারেন। উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বরাবর এমন আবেদন ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিনিধি, ব্যাংকার, বণিক ও সংশ্লিষ্ট এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অন্তত ১০ জনের প্রতিস্বাক্ষর সম্বলিত হওয়া উচিত।
তবে ইউরোপ ও আমেরিকায় নোটারি পাবলিকের নিয়োগ পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হয়। আইনজীবি, ফার্মাসিস্ট, চিকিৎসক ইত্যাদি পেশার মানুষেরা নোটারি হিসেবে নিয়োগ পেতে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার যোগ্য। সাধারণত তিন বছরের জন্য নোটারি নিয়োগ দেওয়া হয় এবং নিযুক্ত ব্যক্তিকে নির্ধারিত ফি পরিশোধ এবং কোন নির্দিষ্ট এলাকায় কাজ করার অনুমতি দিয়ে একটি সনদ প্রদান করা হয়। ইতোমধ্যে নির্দিষ্ট জায়গায় কাজী করতে সনদ পাওয়া কোন নোটারি যথাযথ কারণ দেখিয়ে সরকার বরাবর আবেদন করতে পারেন তার কর্মক্ষেত্র বিস্তৃত করার জন্য। সরকারি গেজেটে প্রতিবছর সরকার নোটারি পাবলিকের একটি তালিকা প্রকাশ করে থকে। প্রতিটি নোটারির উচিত সরকার নির্ধারিত ও নকশার সম্বলিত ফরম এবং একটি সিল থাকা এবং তা ব্যবহার করা।
নোটারির কাজ একজন নোটারি তার পদাধিকার বলে নিম্নলিখিত সব অথবা যে কোনো কাজ সম্পাদন করতে পারেন:
১) কোন দলিল প্রতিপাদন, প্রামাণীকরণ, সনদ প্রদান কিংবা সত্যায়ন
২) ঋণখত, হুন্ডি অথবা গ্রহণ অথবা পরিশোধের জন্য দাবিনামা অথবা অধিকতর নিরাপত্তা বিধান দাবিনামা তৈরি।
৩) কোন ঋণখত, হুন্ডি বা দাবিনামা গ্রহনীয় বা পরিশোধিত না হয়ে প্রত্যাখ্যাত হলে অথবা অধিকতর নিরাপত্তার বিধানের জন্য প্রতিবাদ লিপিবদ্ধ করা অথবা প্রতিবাদ জানানো নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট অ্যাক্ট ১৮৮১ এর আওতায় Acts of Honour প্রস্ত্তত করা অথবা এসব নোট বা প্রতিবাদের নোটিশ প্রেরণ।
৪) জাহাজের প্রতিবাদ, নৌকার প্রতিবাদ অথবা ক্ষয়ক্ষতি অন্যান্য বাণিজ্যিক বিষয় সংশ্লিষ্ট বিষয় নোট করা এবং খসড়া প্রণয়ন।
৫) কাউকে শপথবাক্য পাঠ করানো অথবা এফিডেভিট নেওয়া।
৬) বিমাচুক্তি ও পণ্যের ওপর ঋণ নেওয়ার বন্ড প্রস্ত্তত করা, চুক্তির বিভিন্ন পক্ষ ও অন্যান্য আর্থিক লেনদেনের চুক্তি তৈরি।
৭) বাংলাদেশের বাইরে যে কোন জায়গায় কার্যকর হবে এমন উদ্দেশ্যে কোন দলিল তৈরি, সত্যায়ন ও প্রমাণীকৃত করা-এমনভাবে ও ভাষায় যেন তা সেখানকার আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয়।
৮) এক ভাষায় থেকে অন্য ভাষায় অনুবাদ করা এবং অনুবাদের যথার্থতা যাচাই করা।
৯) নির্দেশনাসাপেক্ষে অন্য কোন কাজ সম্পাদন।
[আবু মুহাম্মদ শাফি-উজ-জামান]