নুসরত শাহ মসজিদ ও দিঘি: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(fix: </u>]])
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:Banglapedia]]
[[Category:Banglapedia]]
'''নুসরত শাহ মসজিদ ও দিঘি''''''  '''চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারি উপজেলার চিকনদন্ডি মৌজায় নসরত বাদশার দিঘি বা বড় দিঘি নামে পরিচিত একটি বড় জলাধারের দক্ষিণপূর্ব কোণে মধ্যযুগীয় একটি মসজিদের স্থলে ১৯৮৮ সালে একটি আধুনিক মসজিদ নির্মাণ করা হয়। নুতন মসজিদের ভিত্তি তৈরির সময় সেখানে বেলে পাথরের কিছু স্থাপত্যিক উপকরণ যেমন, স্তম্ভ, নিমগ্ন স্তম্ভ, ভিতপাথর, লিনটেল, স্তম্ভশীর্ষ, টারেট এবং [[105644|শিলালিপি]] ও পোড়া মাটির ফলক বিক্ষিপ্ত অবস্থায় আবিষ্কৃত হয়। এখানে প্রাপ্ত একটি শিলালিপি ব্যতীত ইমারতের এসব উপকরণ বাংলার সুলতানিরীতি মসজিদেরই পরিচয় বহন করে। নরম শিলায় তৈরি বিবর্ণ শিলালিপিটি সম্ভবত পরবর্তী সময়ের সংযোজন।  
'''নুসরত শাহ মসজিদ ও দিঘি''' চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারি উপজেলার চিকনদন্ডি মৌজায় নসরত বাদশার দিঘি বা বড় দিঘি নামে পরিচিত একটি বড় জলাধারের দক্ষিণপূর্ব কোণে মধ্যযুগীয় একটি মসজিদের স্থলে ১৯৮৮ সালে একটি আধুনিক মসজিদ নির্মাণ করা হয়। নুতন মসজিদের ভিত্তি তৈরির সময় সেখানে বেলে পাথরের কিছু স্থাপত্যিক উপকরণ যেমন, স্তম্ভ, নিমগ্ন স্তম্ভ, ভিতপাথর, লিনটেল, স্তম্ভশীর্ষ, টারেট এবং [[শিলালিপি|শিলালিপি]] ও পোড়া মাটির ফলক বিক্ষিপ্ত অবস্থায় আবিষ্কৃত হয়। এখানে প্রাপ্ত একটি শিলালিপি ব্যতীত ইমারতের এসব উপকরণ বাংলার সুলতানিরীতি মসজিদেরই পরিচয় বহন করে। নরম শিলায় তৈরি বিবর্ণ শিলালিপিটি সম্ভবত পরবর্তী সময়ের সংযোজন।  


মধ্যযুগীয় মসজিদটি ১৮৯৬ সালের পূর্ব পর্যন্ত ব্যবহূত হয়েছে এবং তখন স্থানীয় জনগণ এর দেখাশোনা করত। এ মসজিদের স্তম্ভশীর্ষগুলি এবং স্তম্ভগাত্র [[101908|ছুটি খান মসজিদ]] ও [[101507|গুণমন্ত মসজিদ]] এর সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। জানালার জালির যেসব পোড়ামাটির ফলকখন্ড পড়ে থাকা অবস্থায় পাওয়া যায় সেগুলি নুসরত শাহের অন্য কীর্তি [[103867|বাঘা মসজিদ]] এর ফলকসমূহের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। এছাড়াও মসজিদটি ব্যাপকভাবে পোড়ামাটির ফলকে অলংকৃত ছিল। এ স্থানের ধ্বংসাবশেষে হোসেন শাহী রীতিতে তৈরি ছয়গম্বুজ বিশিষ্ট একটি মসজিদের নকশা পুনর্গঠন করা যায়। এর ফাসাদে তিনটি প্রবেশপথ এবং এগুলির বরাবর পশ্চিমে কিবলা দেয়ালে তিনটি মিহরাব ছিল। মসজিদের অভ্যন্তরভাগ দুটি ‘আইল’ ও তিনটি ‘বে’-তে বিভক্ত ছিল।  
মধ্যযুগীয় মসজিদটি ১৮৯৬ সালের পূর্ব পর্যন্ত ব্যবহূত হয়েছে এবং তখন স্থানীয় জনগণ এর দেখাশোনা করত। এ মসজিদের স্তম্ভশীর্ষগুলি এবং স্তম্ভগাত্র [[ছুটি খান মসজিদ|ছুটি খান মসজিদ]] ও [[গুণমন্ত মসজিদ|গুণমন্ত মসজিদ]] এর সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। জানালার জালির যেসব পোড়ামাটির ফলকখন্ড পড়ে থাকা অবস্থায় পাওয়া যায় সেগুলি নুসরত শাহের অন্য কীর্তি [[বাঘা মসজিদ|বাঘা মসজিদ]] এর ফলকসমূহের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। এছাড়াও মসজিদটি ব্যাপকভাবে পোড়ামাটির ফলকে অলংকৃত ছিল। এ স্থানের ধ্বংসাবশেষে হোসেন শাহী রীতিতে তৈরি ছয়গম্বুজ বিশিষ্ট একটি মসজিদের নকশা পুনর্গঠন করা যায়। এর ফাসাদে তিনটি প্রবেশপথ এবং এগুলির বরাবর পশ্চিমে কিবলা দেয়ালে তিনটি মিহরাব ছিল। মসজিদের অভ্যন্তরভাগ দুটি ‘আইল’ ও তিনটি ‘বে’-তে বিভক্ত ছিল।  


মসজিদের পাশে অবস্থিত দিঘিটি সুলতানি আমলে খননকৃত চট্টগ্রামের বৃহৎ দিঘিগুলির একটি। এটির দৈর্ঘ্য ৫২৩.০৪ মি এবং প্রস্থ ৩৫২.০৪ মি। মোট ৪৫.৮৮ একর জমির উপর এটি খনন করা হয়েছে।
মসজিদের পাশে অবস্থিত দিঘিটি সুলতানি আমলে খননকৃত চট্টগ্রামের বৃহৎ দিঘিগুলির একটি। এটির দৈর্ঘ্য ৫২৩.০৪ মি এবং প্রস্থ ৩৫২.০৪ মি। মোট ৪৫.৮৮ একর জমির উপর এটি খনন করা হয়েছে।


স্থানীয় জনশ্রুতি অনুযায়ী আলাউদ্দীন [[106481|হোসেন শাহ ]]এর পুত্র যুবরাজ নুসরত শাহ এ দিঘি খনন করেন এবং মসজিদটি নির্মাণ করেন। চট্টগ্রাম থেকে আরাকান দস্যুদের বিতাড়িত করার অভিযানে যুবরাজ নুসরত শাহকে গৌড় থেকে এখানে প্রেরণ করা হয়েছিল। তাঁর বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখার জন্য যুবরাজ চট্টগ্রামের নাম দিয়েছিলেন ‘ফতেহাবাদ’। চিকনদন্ডি মৌজার মসজিদ সংলগ্ন গ্রাম ফতেহাবাদ এখনও ঐ নামের ঐতিহ্য বহন করছে।  [শামসুল হোসেন]
স্থানীয় জনশ্রুতি অনুযায়ী আলাউদ্দীন [[হোসেন শাহ|হোসেন শাহ]]-এর পুত্র যুবরাজ নুসরত শাহ এ দিঘি খনন করেন এবং মসজিদটি নির্মাণ করেন। চট্টগ্রাম থেকে আরাকান দস্যুদের বিতাড়িত করার অভিযানে যুবরাজ নুসরত শাহকে গৌড় থেকে এখানে প্রেরণ করা হয়েছিল। তাঁর বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখার জন্য যুবরাজ চট্টগ্রামের নাম দিয়েছিলেন ‘ফতেহাবাদ’। চিকনদন্ডি মৌজার মসজিদ সংলগ্ন গ্রাম ফতেহাবাদ এখনও ঐ নামের ঐতিহ্য বহন করছে।  [শামসুল হোসেন]
__NOTOC__
<!-- imported from file: 102954.html-->
 


[[en:Nusrat Shah’s Mosque and Dighi]]
[[en:Nusrat Shah’s Mosque and Dighi]]

১০:২০, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

নুসরত শাহ মসজিদ ও দিঘি চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারি উপজেলার চিকনদন্ডি মৌজায় নসরত বাদশার দিঘি বা বড় দিঘি নামে পরিচিত একটি বড় জলাধারের দক্ষিণপূর্ব কোণে মধ্যযুগীয় একটি মসজিদের স্থলে ১৯৮৮ সালে একটি আধুনিক মসজিদ নির্মাণ করা হয়। নুতন মসজিদের ভিত্তি তৈরির সময় সেখানে বেলে পাথরের কিছু স্থাপত্যিক উপকরণ যেমন, স্তম্ভ, নিমগ্ন স্তম্ভ, ভিতপাথর, লিনটেল, স্তম্ভশীর্ষ, টারেট এবং শিলালিপি ও পোড়া মাটির ফলক বিক্ষিপ্ত অবস্থায় আবিষ্কৃত হয়। এখানে প্রাপ্ত একটি শিলালিপি ব্যতীত ইমারতের এসব উপকরণ বাংলার সুলতানিরীতি মসজিদেরই পরিচয় বহন করে। নরম শিলায় তৈরি বিবর্ণ শিলালিপিটি সম্ভবত পরবর্তী সময়ের সংযোজন।

মধ্যযুগীয় মসজিদটি ১৮৯৬ সালের পূর্ব পর্যন্ত ব্যবহূত হয়েছে এবং তখন স্থানীয় জনগণ এর দেখাশোনা করত। এ মসজিদের স্তম্ভশীর্ষগুলি এবং স্তম্ভগাত্র ছুটি খান মসজিদগুণমন্ত মসজিদ এর সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। জানালার জালির যেসব পোড়ামাটির ফলকখন্ড পড়ে থাকা অবস্থায় পাওয়া যায় সেগুলি নুসরত শাহের অন্য কীর্তি বাঘা মসজিদ এর ফলকসমূহের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। এছাড়াও মসজিদটি ব্যাপকভাবে পোড়ামাটির ফলকে অলংকৃত ছিল। এ স্থানের ধ্বংসাবশেষে হোসেন শাহী রীতিতে তৈরি ছয়গম্বুজ বিশিষ্ট একটি মসজিদের নকশা পুনর্গঠন করা যায়। এর ফাসাদে তিনটি প্রবেশপথ এবং এগুলির বরাবর পশ্চিমে কিবলা দেয়ালে তিনটি মিহরাব ছিল। মসজিদের অভ্যন্তরভাগ দুটি ‘আইল’ ও তিনটি ‘বে’-তে বিভক্ত ছিল।

মসজিদের পাশে অবস্থিত দিঘিটি সুলতানি আমলে খননকৃত চট্টগ্রামের বৃহৎ দিঘিগুলির একটি। এটির দৈর্ঘ্য ৫২৩.০৪ মি এবং প্রস্থ ৩৫২.০৪ মি। মোট ৪৫.৮৮ একর জমির উপর এটি খনন করা হয়েছে।

স্থানীয় জনশ্রুতি অনুযায়ী আলাউদ্দীন হোসেন শাহ-এর পুত্র যুবরাজ নুসরত শাহ এ দিঘি খনন করেন এবং মসজিদটি নির্মাণ করেন। চট্টগ্রাম থেকে আরাকান দস্যুদের বিতাড়িত করার অভিযানে যুবরাজ নুসরত শাহকে গৌড় থেকে এখানে প্রেরণ করা হয়েছিল। তাঁর বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখার জন্য যুবরাজ চট্টগ্রামের নাম দিয়েছিলেন ‘ফতেহাবাদ’। চিকনদন্ডি মৌজার মসজিদ সংলগ্ন গ্রাম ফতেহাবাদ এখনও ঐ নামের ঐতিহ্য বহন করছে।  [শামসুল হোসেন]