নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন, ২০০৯: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:Banglapedia]]
[[Category:Banglapedia]]
'''নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন'''''', ''''''২০০৯'''  নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার বিতর্ক ১৯৯১ সাল থেকে শুরু হয়। ২০০৬ সালে অনুষ্ঠেয় সংসদীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে বিতর্ক আরও ঘনীভূত হয়। কারণ, ঐ সময়ে অভিযোগ করা হয় যে, ভোটার তালিকা প্রণয়নে ভোটারদের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায় এবং তদানীন্তন ক্ষমতাসীন চার দলীয় জোট সরকারের প্রার্থীদের আসন্ন নির্বাচনে জয়ী করার জন্যই এটা করা হয়েছিল মর্মে প্রশ্ন উঠে। ফলশ্রুতিতে নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করা হয়। একই সাথে কমিশনকে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের প্রভাবমুক্ত করার দাবি তুঙ্গে উঠে।
'''নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন, ২০০৯'''  নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার বিতর্ক ১৯৯১ সাল থেকে শুরু হয়। ২০০৬ সালে অনুষ্ঠেয় সংসদীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে বিতর্ক আরও ঘনীভূত হয়। কারণ, ঐ সময়ে অভিযোগ করা হয় যে, ভোটার তালিকা প্রণয়নে ভোটারদের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায় এবং তদানীন্তন ক্ষমতাসীন চার দলীয় জোট সরকারের প্রার্থীদের আসন্ন নির্বাচনে জয়ী করার জন্যই এটা করা হয়েছিল মর্মে প্রশ্ন উঠে। ফলশ্রুতিতে নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করা হয়। একই সাথে কমিশনকে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের প্রভাবমুক্ত করার দাবি তুঙ্গে উঠে।


ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচন কমিশনকে অধিকতর শক্তিশালী করণের অংশ হিসেবে ২০০৮ সালে একটি অধ্যাদেশ প্রণয়ন করে। অধ্যাদেশের শিরোনাম ছিল নির্বাচন কমিশন সচিবালয় অধ্যাদেশ, ২০০৮ (অধ্যাদেশ নং ৫, ২০০৮)।
ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচন কমিশনকে অধিকতর শক্তিশালী করণের অংশ হিসেবে ২০০৮ সালে একটি অধ্যাদেশ প্রণয়ন করে। অধ্যাদেশের শিরোনাম ছিল নির্বাচন কমিশন সচিবালয় অধ্যাদেশ, ২০০৮ (অধ্যাদেশ নং ৫, ২০০৮)।
১০ নং লাইন: ১০ নং লাইন:
সর্বমোট ২০টি ধারা নিয়ে আইনটি গঠিত। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধানে সচিবালয় কার্য সম্পাদন করবে। এর মধ্যে প্রধান বিষয়গুলো হলো: কর্মচারী প্রশাসন, আর্থিক স্বাধীনতা, কার্যসম্পাদন পদ্ধতি, সংবিধানের ১২০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি কর্তৃক কমিশনকে প্রয়োজনীয় জনবল প্রদান, শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা, রাষ্ট্রপতির পূর্বানুমোদন নিয়ে বিধি প্রণয়ন, ইত্যাদি।
সর্বমোট ২০টি ধারা নিয়ে আইনটি গঠিত। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধানে সচিবালয় কার্য সম্পাদন করবে। এর মধ্যে প্রধান বিষয়গুলো হলো: কর্মচারী প্রশাসন, আর্থিক স্বাধীনতা, কার্যসম্পাদন পদ্ধতি, সংবিধানের ১২০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি কর্তৃক কমিশনকে প্রয়োজনীয় জনবল প্রদান, শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা, রাষ্ট্রপতির পূর্বানুমোদন নিয়ে বিধি প্রণয়ন, ইত্যাদি।


আইনটির প্রধান বৈশিষ্ট্য (পূর্বে যার কোনো অস্তিত্ব ছিল না) হলো:
আইনটির প্রধান বৈশিষ্ট্য (পূর্বে যার কোনো অস্তিত্ব ছিল না) হলো: (১) সরকারের কোনো মন্ত্রণালয়/বিভাগ নিয়ন্ত্রণমুক্ত স্বাধীন ও স্বতন্ত্র সচিবালয়ের সর্বপ্রথম আইনি স্বীকৃতি; (২) কমিশন সচিবালয়ের প্রতিষ্ঠা এবং এর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আইনের আওতায় প্রণীত বিধি দ্বারা নিয়োগ দান। কেবলমাত্র আইন প্রণয়নে সরকারের আইন, বিচার ও সংসদীয় মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ গ্রহণ; (৩) সচিবালয়ের সুনির্দিষ্ট কার্যপরিধি ও দায়িত্ব; (৪) সরকারের পূর্বানুমোদন ব্যতিরেকে অনুমোদিত বাজেটের বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়; (৫) সংবিধানের অনুশাসন অনুযায়ী সংযুক্ত তহবিলের আওতাভুক্ত প্রশাসনিক ব্যয়। অর্থাৎ এ বরাদ্দের জন্য সংসদে কোনো ভোটের প্রয়োজন নেই; (৬) আইনের অধীনে সচিবালয়ের সচিবকে প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে স্বীকৃতি। তবে, তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নিকট দায়ী থাকবেন; (৭) যেকোন ব্যক্তিকে কমিশনের সচিবের সাথে অথবা তার স্থলাভিষিক্ত কোনো কর্মকর্তাকে সরাসরি যোগাযোগের ক্ষমতা প্রদান; (৮) নির্বাচন কমিশনের কার্যাবলি ও কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করার কর্মসূচী বাস্তবায়নে সচিবালয়কে  ক্ষমতা প্রদান।  [এ.এম.এম শওকত আলী]
 
(১) সরকারের কোনো মন্ত্রণালয়/বিভাগ নিয়ন্ত্রণমুক্ত স্বাধীন ও স্বতন্ত্র সচিবালয়ের সর্বপ্রথম আইনি স্বীকৃতি; (২) কমিশন সচিবালয়ের প্রতিষ্ঠা এবং এর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আইনের আওতায় প্রণীত বিধি দ্বারা নিয়োগ দান। কেবলমাত্র আইন প্রণয়নে সরকারের আইন, বিচার ও সংসদীয় মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ গ্রহণ; (৩) সচিবালয়ের সুনির্দিষ্ট কার্যপরিধি ও দায়িত্ব; (৪) সরকারের পূর্বানুমোদন ব্যতিরেকে অনুমোদিত বাজেটের বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়; (৫) সংবিধানের অনুশাসন অনুযায়ী সংযুক্ত তহবিলের আওতাভুক্ত প্রশাসনিক ব্যয়। অর্থাৎ এ বরাদ্দের জন্য সংসদে কোনো ভোটের প্রয়োজন নেই; (৬) আইনের অধীনে সচিবালয়ের সচিবকে প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে স্বীকৃতি। তবে, তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নিকট দায়ী থাকবেন; (৭) যেকোন ব্যক্তিকে কমিশনের সচিবের সাথে অথবা তার স্থলাভিষিক্ত কোনো কর্মকর্তাকে সরাসরি যোগাযোগের ক্ষমতা প্রদান; (৮) নির্বাচন কমিশনের কার্যাবলি ও কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করার কর্মসূচী বাস্তবায়নে সচিবালয়কে  ক্ষমতা প্রদান।  [এ.এম.এম শওকত আলী]
 
<!-- imported from file: নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন, ২০০৯.html-->
 
[[en:Election Commission Secretariat Act, 2009]]
 
[[en:Election Commission Secretariat Act, 2009]]


[[en:Election Commission Secretariat Act, 2009]]
[[en:Election Commission Secretariat Act, 2009]]

০৫:২৪, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন, ২০০৯  নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার বিতর্ক ১৯৯১ সাল থেকে শুরু হয়। ২০০৬ সালে অনুষ্ঠেয় সংসদীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে বিতর্ক আরও ঘনীভূত হয়। কারণ, ঐ সময়ে অভিযোগ করা হয় যে, ভোটার তালিকা প্রণয়নে ভোটারদের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায় এবং তদানীন্তন ক্ষমতাসীন চার দলীয় জোট সরকারের প্রার্থীদের আসন্ন নির্বাচনে জয়ী করার জন্যই এটা করা হয়েছিল মর্মে প্রশ্ন উঠে। ফলশ্রুতিতে নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করা হয়। একই সাথে কমিশনকে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের প্রভাবমুক্ত করার দাবি তুঙ্গে উঠে।

ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচন কমিশনকে অধিকতর শক্তিশালী করণের অংশ হিসেবে ২০০৮ সালে একটি অধ্যাদেশ প্রণয়ন করে। অধ্যাদেশের শিরোনাম ছিল নির্বাচন কমিশন সচিবালয় অধ্যাদেশ, ২০০৮ (অধ্যাদেশ নং ৫, ২০০৮)।

২০০৮ সালের পরে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী অধ্যাদেশটিকে আইনে রূপান্তর করে। ২০০৯ সালের ২৪ জানুয়ারি আইনটি চূড়ান্ত আকারে গেজেটে প্রকাশিত হয়। এ আইনের ভূমিকায় অভিমত ব্যক্ত করা হয় যে, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৮(৪) অনুযায়ী একটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র নির্বাচন কমিশন সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজনীয় ও জরুরি। উদ্দেশ্য ছিল কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ প্রদান করা। আইনটি ২০০৮ সালের ৯ মার্চ থেকে কার্যকর করা হয়েছে। ঐ তারিখেই পূর্ববর্তী অধ্যাদেশটি জারী করা হয়েছিল। নির্বাচন প্রশাসনের ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রাখার প্রয়োজনেই এ ধরনের পদক্ষেপ সঙ্গত ছিল। কারণ, এর ফলে অধ্যাদেশের আওতায় গৃহীত সকল কার্যক্রম বৈধ বলে গণ্য হবে।

অধ্যাদেশ ও পরবর্তী সময়ে আইনটি জারী হওয়ার পূর্বে কমিশন সচিবালয়ের অধিকাংশ কর্মকর্তা সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। এর ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি ধারণা জন্মেছিল যে সচিবালয় সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত নয়। অর্থাৎ সরকারই প্রকারান্তরে কমিশনের কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে। সুতরাং আইনটির মূল উদ্দেশ্য ছিল এ ধরনের ধারণার বিলুপ্তি এবং কমিশন সচিবালয়কে প্রয়োজনীয় ও অধিকতর প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা প্রদান করা।

সর্বমোট ২০টি ধারা নিয়ে আইনটি গঠিত। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধানে সচিবালয় কার্য সম্পাদন করবে। এর মধ্যে প্রধান বিষয়গুলো হলো: কর্মচারী প্রশাসন, আর্থিক স্বাধীনতা, কার্যসম্পাদন পদ্ধতি, সংবিধানের ১২০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি কর্তৃক কমিশনকে প্রয়োজনীয় জনবল প্রদান, শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা, রাষ্ট্রপতির পূর্বানুমোদন নিয়ে বিধি প্রণয়ন, ইত্যাদি।

আইনটির প্রধান বৈশিষ্ট্য (পূর্বে যার কোনো অস্তিত্ব ছিল না) হলো: (১) সরকারের কোনো মন্ত্রণালয়/বিভাগ নিয়ন্ত্রণমুক্ত স্বাধীন ও স্বতন্ত্র সচিবালয়ের সর্বপ্রথম আইনি স্বীকৃতি; (২) কমিশন সচিবালয়ের প্রতিষ্ঠা এবং এর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আইনের আওতায় প্রণীত বিধি দ্বারা নিয়োগ দান। কেবলমাত্র আইন প্রণয়নে সরকারের আইন, বিচার ও সংসদীয় মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ গ্রহণ; (৩) সচিবালয়ের সুনির্দিষ্ট কার্যপরিধি ও দায়িত্ব; (৪) সরকারের পূর্বানুমোদন ব্যতিরেকে অনুমোদিত বাজেটের বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়; (৫) সংবিধানের অনুশাসন অনুযায়ী সংযুক্ত তহবিলের আওতাভুক্ত প্রশাসনিক ব্যয়। অর্থাৎ এ বরাদ্দের জন্য সংসদে কোনো ভোটের প্রয়োজন নেই; (৬) আইনের অধীনে সচিবালয়ের সচিবকে প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে স্বীকৃতি। তবে, তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নিকট দায়ী থাকবেন; (৭) যেকোন ব্যক্তিকে কমিশনের সচিবের সাথে অথবা তার স্থলাভিষিক্ত কোনো কর্মকর্তাকে সরাসরি যোগাযোগের ক্ষমতা প্রদান; (৮) নির্বাচন কমিশনের কার্যাবলি ও কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করার কর্মসূচী বাস্তবায়নে সচিবালয়কে  ক্ষমতা প্রদান।  [এ.এম.এম শওকত আলী]