নিমাটোড: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:Banglapedia]]
[[Category:Banglapedia]]
[[Image:NematodeHuman.jpg|thumb|400px|মানুষের পরজীবী নিমাটোড: ক. ''Ascaris lumbricoides'' খ. ''Ascaridia galli'']]
[[Image:NematodeHuman.jpg|thumb|400px|মানুষের পরজীবী নিমাটোড: ''Ascaris lumbricoides'' (বামে); ''Ascaridia galli'' (ডানে)]]
'''নিমাটোড''' (Nematode)  Nematoda (বা Aschelminthes) পর্বের কৃমিজাতীয় প্রাণীদের সাধারণ নাম। এদের দেহ বেলনাকার, সম্মুখ ও পশ্চাৎ প্রান্ত সুচালো। মুক্তজীবী বা পরজীবী, অধিকাংশ স্বাদু ও লোনা পানিতে এবং মাটিতে বাস করে। অনেকেই বিভিন্ন গাছপালা ও প্রাণীর দেহে পরজীবী। মাটি ও পানির বাসিন্দা মুক্তজীবী অজস্র প্রজাতির নিমাটোড বাংলাদেশে শনাক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশে মানুষের পরজীবী নিমাটোডের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ''Ascaris lumbricoides, Necator americanus, Ancylostoma duodenale, Trichuris trichura, Enterobius vermicularis, Strongyloides stercoralis,'' এবং ''Wuchereria bancrofti''। লসিকাতন্ত্রবাসী এবং গোদ ও একশিরা রোগের কৃমি ''W. bancrofti'' ছাড়া বাকি সবগুলি নিমাটোডই মানুষের অন্ত্রে বাস করে। প্রায় ১৫ সেমি লম্বা ও সাদা রঙের ''A. lumbricoides'' গোলকৃমি মলে সহজেই শনাক্ত করা যায়। ''E. vermicularis'' সুতাকৃমি খুব ছোট এবং শিশুদের মলদ্বারে রাতে চুলকানি সৃষ্টি করে। ''N. americanus'' ও ''A. duodenale'' বক্রকৃমি অন্ত্রের প্রাচীর কামড়ে আটকে থাকে ও রক্ত শোষণ করে। বাংলাদেশের প্রত্যেকে কোন না কোন সময়, বিশেষত শৈশবে এসব কৃমির এক বা একাধিক প্রজাতিতে আক্রান্ত হয়। খারাপ স্বাস্থ্যব্যবস্থা, যদৃচ্ছা খাবার জিনিস নাড়াচাড়া ও ঘনবসতির জন্য কৃমির ডিম সহজেই ছড়াতে পারে ও রোগসংক্রমণ ঘটায়। গ্রামের তুলনায় শহরেই এই ধরনের রোগের প্রকোপ বেশি।
'''নিমাটোড''' (Nematode)  Nematoda (বা Aschelminthes) পর্বের কৃমিজাতীয় প্রাণীদের সাধারণ নাম। এদের দেহ বেলনাকার, সম্মুখ ও পশ্চাৎ প্রান্ত সুচালো। মুক্তজীবী বা পরজীবী, অধিকাংশ স্বাদু ও লোনা পানিতে এবং মাটিতে বাস করে। অনেকেই বিভিন্ন গাছপালা ও প্রাণীর দেহে পরজীবী। মাটি ও পানির বাসিন্দা মুক্তজীবী অজস্র প্রজাতির নিমাটোড বাংলাদেশে শনাক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশে মানুষের পরজীবী নিমাটোডের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ''Ascaris lumbricoides, Necator americanus, Ancylostoma duodenale, Trichuris trichura, Enterobius vermicularis, Strongyloides stercoralis,'' এবং ''Wuchereria bancrofti''। লসিকাতন্ত্রবাসী এবং গোদ ও একশিরা রোগের কৃমি ''W. bancrofti'' ছাড়া বাকি সবগুলি নিমাটোডই মানুষের অন্ত্রে বাস করে। প্রায় ১৫ সেমি লম্বা ও সাদা রঙের ''A. lumbricoides'' গোলকৃমি মলে সহজেই শনাক্ত করা যায়। ''E. vermicularis'' সুতাকৃমি খুব ছোট এবং শিশুদের মলদ্বারে রাতে চুলকানি সৃষ্টি করে। ''N. americanus'' ও ''A. duodenale'' বক্রকৃমি অন্ত্রের প্রাচীর কামড়ে আটকে থাকে ও রক্ত শোষণ করে। বাংলাদেশের প্রত্যেকে কোন না কোন সময়, বিশেষত শৈশবে এসব কৃমির এক বা একাধিক প্রজাতিতে আক্রান্ত হয়। খারাপ স্বাস্থ্যব্যবস্থা, যদৃচ্ছা খাবার জিনিস নাড়াচাড়া ও ঘনবসতির জন্য কৃমির ডিম সহজেই ছড়াতে পারে ও রোগসংক্রমণ ঘটায়। গ্রামের তুলনায় শহরেই এই ধরনের রোগের প্রকোপ বেশি।


[[Image:NematodePlant.jpg|thumb|400px|পরজীবী নিমাটোড: ক. ''Tylenchus filiformis'' (left); খ. ''Heterodera schachtii'']]
[[Image:NematodePlant.jpg|thumb|400px|পরজীবী নিমাটোড: ''Tylenchus filiformis'' (বামে); ''Heterodera schachtii'' (ডানে)]]
Culex মশাবাহিত ''W. bancrofti'' ফাইলেরিয়ার কৃমি এখন গোটা বাংলাদেশেই ছড়িয়ে পড়ছে। গোদ রোগের আরেকটি কৃমি ''Brugia malayi''। গরু ও ভেড়ার লিভারেও নিমাটোড থাকে। সাধারণ নিমাটোডের মধ্যে আরও আছে রোমন্থক প্রাণীর উদরের ''Haemonchus contortus'' এবং অন্ত্রের ''Oesophagostomum'' species। নিমাটোড আক্রান্ত গাভির দুধের পরিমাণ হ্রাস পায়।হাঁস-মুরগিতেও নিমাটোড পরজীবী থাকে এবং এদের ৯ প্রজাতির কৃমির মধ্যে ''Heterakis gallinae'' সর্বাধিক। Capillaria ও Heterakis থাকে সিকামে ও Ascaridia অন্ত্রে। একটি আছে গিলায়। উভয়চরের মধ্যে কুনোব্যাঙে আর সোনাব্যাঙেও কয়েক প্রজাতির নিমাটোড থাকে।
Culex মশাবাহিত ''W. bancrofti'' ফাইলেরিয়ার কৃমি এখন গোটা বাংলাদেশেই ছড়িয়ে পড়ছে। গোদ রোগের আরেকটি কৃমি ''Brugia malayi''। গরু ও ভেড়ার লিভারেও নিমাটোড থাকে। সাধারণ নিমাটোডের মধ্যে আরও আছে রোমন্থক প্রাণীর উদরের ''Haemonchus contortus'' এবং অন্ত্রের ''Oesophagostomum'' species। নিমাটোড আক্রান্ত গাভির দুধের পরিমাণ হ্রাস পায়।হাঁস-মুরগিতেও নিমাটোড পরজীবী থাকে এবং এদের ৯ প্রজাতির কৃমির মধ্যে ''Heterakis gallinae'' সর্বাধিক। Capillaria ও Heterakis থাকে সিকামে ও Ascaridia অন্ত্রে। একটি আছে গিলায়। উভয়চরের মধ্যে কুনোব্যাঙে আর সোনাব্যাঙেও কয়েক প্রজাতির নিমাটোড থাকে।



০৪:৪১, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

মানুষের পরজীবী নিমাটোড: Ascaris lumbricoides (বামে); Ascaridia galli (ডানে)

নিমাটোড (Nematode)  Nematoda (বা Aschelminthes) পর্বের কৃমিজাতীয় প্রাণীদের সাধারণ নাম। এদের দেহ বেলনাকার, সম্মুখ ও পশ্চাৎ প্রান্ত সুচালো। মুক্তজীবী বা পরজীবী, অধিকাংশ স্বাদু ও লোনা পানিতে এবং মাটিতে বাস করে। অনেকেই বিভিন্ন গাছপালা ও প্রাণীর দেহে পরজীবী। মাটি ও পানির বাসিন্দা মুক্তজীবী অজস্র প্রজাতির নিমাটোড বাংলাদেশে শনাক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশে মানুষের পরজীবী নিমাটোডের মধ্যে উল্লেখযোগ্য Ascaris lumbricoides, Necator americanus, Ancylostoma duodenale, Trichuris trichura, Enterobius vermicularis, Strongyloides stercoralis, এবং Wuchereria bancrofti। লসিকাতন্ত্রবাসী এবং গোদ ও একশিরা রোগের কৃমি W. bancrofti ছাড়া বাকি সবগুলি নিমাটোডই মানুষের অন্ত্রে বাস করে। প্রায় ১৫ সেমি লম্বা ও সাদা রঙের A. lumbricoides গোলকৃমি মলে সহজেই শনাক্ত করা যায়। E. vermicularis সুতাকৃমি খুব ছোট এবং শিশুদের মলদ্বারে রাতে চুলকানি সৃষ্টি করে। N. americanusA. duodenale বক্রকৃমি অন্ত্রের প্রাচীর কামড়ে আটকে থাকে ও রক্ত শোষণ করে। বাংলাদেশের প্রত্যেকে কোন না কোন সময়, বিশেষত শৈশবে এসব কৃমির এক বা একাধিক প্রজাতিতে আক্রান্ত হয়। খারাপ স্বাস্থ্যব্যবস্থা, যদৃচ্ছা খাবার জিনিস নাড়াচাড়া ও ঘনবসতির জন্য কৃমির ডিম সহজেই ছড়াতে পারে ও রোগসংক্রমণ ঘটায়। গ্রামের তুলনায় শহরেই এই ধরনের রোগের প্রকোপ বেশি।

পরজীবী নিমাটোড: Tylenchus filiformis (বামে); Heterodera schachtii (ডানে)

Culex মশাবাহিত W. bancrofti ফাইলেরিয়ার কৃমি এখন গোটা বাংলাদেশেই ছড়িয়ে পড়ছে। গোদ রোগের আরেকটি কৃমি Brugia malayi। গরু ও ভেড়ার লিভারেও নিমাটোড থাকে। সাধারণ নিমাটোডের মধ্যে আরও আছে রোমন্থক প্রাণীর উদরের Haemonchus contortus এবং অন্ত্রের Oesophagostomum species। নিমাটোড আক্রান্ত গাভির দুধের পরিমাণ হ্রাস পায়।হাঁস-মুরগিতেও নিমাটোড পরজীবী থাকে এবং এদের ৯ প্রজাতির কৃমির মধ্যে Heterakis gallinae সর্বাধিক। Capillaria ও Heterakis থাকে সিকামে ও Ascaridia অন্ত্রে। একটি আছে গিলায়। উভয়চরের মধ্যে কুনোব্যাঙে আর সোনাব্যাঙেও কয়েক প্রজাতির নিমাটোড থাকে।

বাংলাদেশে গৃহবাসী টিকটিকি ও দেয়ালের টিকটিকির মলাশয়ে দুই প্রজাতির নিমাটোড Neopharyngodon geckoStrongyloides cruzi আছে। গিরগিটি ৪ প্রজাতির নিমাটোডের বাহক: Pharyngodon, Pareterakis, Cruzia গণের প্রজাতিরা অন্ত্রে এবং S. cruzi মলাশয়ে বাস করে। বাংলাদেশে আরসোলা ৫ প্রজাতির নিমাটোডের বাহক। কেঁচোয় আছে ২ প্রজাতি। মাছের অন্ত্রে Camallanus, Procamallanus, Spirocamallanus, Cucullanelus এবং Gnathostoma গণের প্রজাতি পরজীবী। বঙ্গোপসাগরের মাছে নিমাটোডের লার্ভা পাওয়া গেছে। প্রাপ্তবয়স্ক নিমাটোড না পাওয়ার কারণ সম্ভবত এরা অন্যতর কোন মেরুদন্ডী পোষকে বড় হয়ে থাকে। বিভিন্ন গাছপালা এবং ফসলের অসংখ্য পরজীবী নিমাটোডের বর্ণনা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য Tylenchus, Ditylenchus, Meloidogyne এবং Heterodera-এর কতক প্রজাতি। [যোসেফ ডি’সিলভা]