নিখিলবঙ্গ মুসলিম ছাত্র সমিতি: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

সম্পাদনা সারাংশ নেই
(Text replacement - "সোহ্রাওয়ার্দী" to "সোহ্‌রাওয়ার্দী")
 
৬ নং লাইন: ৬ নং লাইন:
এটি স্পষ্ট যে, জন্মলগ্ন থেকেই অল বেঙ্গল মুসলিম স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (এ.বি.এম.এস.এ) প্রবীণ মুসলিম রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতা ও তত্ত্বাবধানে কাজ করেছে। উদাহরণস্বরূপ ১৯৩৩ সালে হুগলি মুসলিম স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন কেবল সেক্রেটারি পদটি ছাড়া বাকি সবগুলি পদেই ছিলেন শিক্ষকবৃন্দ। এ.বি.এম.এস.এ-এর ১৯৩৫-৩৬ সালের কমিটির তালিকাও প্রায় অনুরূপ ছিল। ১৯৩৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত এ.বি.এম.এস.এ-এর দ্বিতীয় কনফারেন্সে অ্যাডিশনাল ডি.এস.পি-কে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, এ.বি.এস.এ-এর কনফারেন্সে যা ছিল অকল্পনীয়। প্রবীণদের এরূপ হস্তক্ষেপের কারণেই এ.বি.এম.এস.এ-কে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল সমকালীন রাজনৈতিক বিষয়াবলি যেমন, রাজবন্দি, সাংবিধানিক পরিবর্তন কিংবা সাম্প্রদায়িক রোয়েদাদ প্রভৃতিতে নিজেদের না জড়াতে।  
এটি স্পষ্ট যে, জন্মলগ্ন থেকেই অল বেঙ্গল মুসলিম স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (এ.বি.এম.এস.এ) প্রবীণ মুসলিম রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতা ও তত্ত্বাবধানে কাজ করেছে। উদাহরণস্বরূপ ১৯৩৩ সালে হুগলি মুসলিম স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন কেবল সেক্রেটারি পদটি ছাড়া বাকি সবগুলি পদেই ছিলেন শিক্ষকবৃন্দ। এ.বি.এম.এস.এ-এর ১৯৩৫-৩৬ সালের কমিটির তালিকাও প্রায় অনুরূপ ছিল। ১৯৩৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত এ.বি.এম.এস.এ-এর দ্বিতীয় কনফারেন্সে অ্যাডিশনাল ডি.এস.পি-কে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, এ.বি.এস.এ-এর কনফারেন্সে যা ছিল অকল্পনীয়। প্রবীণদের এরূপ হস্তক্ষেপের কারণেই এ.বি.এম.এস.এ-কে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল সমকালীন রাজনৈতিক বিষয়াবলি যেমন, রাজবন্দি, সাংবিধানিক পরিবর্তন কিংবা সাম্প্রদায়িক রোয়েদাদ প্রভৃতিতে নিজেদের না জড়াতে।  


১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের অধীনে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচন এগিয়ে আসায় এবিএসএ-এর মতো এবিএমএসএ-ও প্রবীণ মুসলিম রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের শিকারে পরিণত হয়। ইতোমধ্যে ১৯৩৫ সালের কনফারেন্সে মুসলিম ছাত্রদেরকে প্রবীণ নেতৃবৃন্দের কথারই প্রতিধ্বনি করতে দেখা গেছে। ঢাকার নওয়াব ও এম.এ.এইচ ইস্পাহানি প্রমুখ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এ.বি.এম.এস.এ এসময়ে [[হক, এ.কে ফজলুল|এ]][[হক, এ.কে ফজলুল|.কে ফজলুল হক]] ও [[সোহ্রাওয়ার্দী, হোসেন শহীদ|হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী]] প্রমুখ নেতৃবৃন্দের লড়াইয়ের ক্ষেত্রে পরিণত হয়। খুবই স্বাভাবিকভাবে এসব নেতৃবৃন্দের চাপে ছাত্রদের মধ্যে বিভক্তির সৃষ্টি হয়। স্টার অব ইন্ডিয়া-র সমকালীন সংখ্যাগুলিতে মুসলিম ছাত্র রাজনীতির এ বিভক্তির প্রমাণ পাওয়া যায়। বগুড়ায় অনুষ্ঠিত ১৯৩৬ সালের মুসলিম স্টুডেন্ট কনফারেন্স ঢাকার নওয়াবের সভাপতিত্বে গঠিত ইউনাইটেড মুসলিম পার্টির নির্বাচনী মঞ্চ হিসেবে ব্যবহূত হয়েছিল। এ.কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে গঠিত [[কৃষক প্রজা পার্টি|কৃষক প্রজা পার্টি]] এর বিরোধী দল হিসেবে ঢাকার নওয়াবগণ এ দলটি গড়ে তুলেছিলেন। বগুড়া কনফারেন্সে গৃহীত অনেক সিদ্বান্তই পরে ইউনাইটেড মুসলিম পার্টির নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে স্থান পেয়েছিল। এভাবে ১৯৩৬ সালের মধ্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দই এবিএমএসএ-কে রাজনীতিতে টেনে এনেছিলেন।  
১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের অধীনে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচন এগিয়ে আসায় এবিএসএ-এর মতো এবিএমএসএ-ও প্রবীণ মুসলিম রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের শিকারে পরিণত হয়। ইতোমধ্যে ১৯৩৫ সালের কনফারেন্সে মুসলিম ছাত্রদেরকে প্রবীণ নেতৃবৃন্দের কথারই প্রতিধ্বনি করতে দেখা গেছে। ঢাকার নওয়াব ও এম.এ.এইচ ইস্পাহানি প্রমুখ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এ.বি.এম.এস.এ এসময়ে [[হক, এ.কে ফজলুল|এ]][[হক, এ.কে ফজলুল|.কে ফজলুল হক]] ও [[সোহ্‌রাওয়ার্দী, হোসেন শহীদ|হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী]] প্রমুখ নেতৃবৃন্দের লড়াইয়ের ক্ষেত্রে পরিণত হয়। খুবই স্বাভাবিকভাবে এসব নেতৃবৃন্দের চাপে ছাত্রদের মধ্যে বিভক্তির সৃষ্টি হয়। স্টার অব ইন্ডিয়া-র সমকালীন সংখ্যাগুলিতে মুসলিম ছাত্র রাজনীতির এ বিভক্তির প্রমাণ পাওয়া যায়। বগুড়ায় অনুষ্ঠিত ১৯৩৬ সালের মুসলিম স্টুডেন্ট কনফারেন্স ঢাকার নওয়াবের সভাপতিত্বে গঠিত ইউনাইটেড মুসলিম পার্টির নির্বাচনী মঞ্চ হিসেবে ব্যবহূত হয়েছিল। এ.কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে গঠিত [[কৃষক প্রজা পার্টি|কৃষক প্রজা পার্টি]] এর বিরোধী দল হিসেবে ঢাকার নওয়াবগণ এ দলটি গড়ে তুলেছিলেন। বগুড়া কনফারেন্সে গৃহীত অনেক সিদ্বান্তই পরে ইউনাইটেড মুসলিম পার্টির নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে স্থান পেয়েছিল। এভাবে ১৯৩৬ সালের মধ্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দই এবিএমএসএ-কে রাজনীতিতে টেনে এনেছিলেন।  


১৯৩৭ সালে অল ইন্ডিয়া মুসলিম স্টুডেন্ট ফেডারেশন গঠিত হলে এ.বি.এম.এস.এ-এর সদস্যদের অনেকেই পৃথক একটি কংগ্রেস বিরোধী ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে এ দলে যোগ দিয়েছিলেন। কংগ্রেসপন্থী মুসলিম নেতৃবৃন্দও বিকল্প একটি সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু তা বাংলায় জনপ্রিয়তা পায় নি কিংবা দৃঢ়ভাবে বাংলায় প্রতিষ্ঠিতও হতে পারে নি।  [রণজিৎ রায়]
১৯৩৭ সালে অল ইন্ডিয়া মুসলিম স্টুডেন্ট ফেডারেশন গঠিত হলে এ.বি.এম.এস.এ-এর সদস্যদের অনেকেই পৃথক একটি কংগ্রেস বিরোধী ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে এ দলে যোগ দিয়েছিলেন। কংগ্রেসপন্থী মুসলিম নেতৃবৃন্দও বিকল্প একটি সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু তা বাংলায় জনপ্রিয়তা পায় নি কিংবা দৃঢ়ভাবে বাংলায় প্রতিষ্ঠিতও হতে পারে নি।  [রণজিৎ রায়]

১৫:৫৬, ১৭ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

নিখিলবঙ্গ মুসলিম ছাত্র সমিতি  প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৩২ সালে।  তবে এর প্রকৃত তারিখ সম্পর্কে অনিশ্চয়তা রয়েছে। ১৯৩২ সালের আগে বাংলার সামগ্রিক ছাত্র রাজনীতিতে মুসলমান ছাত্রদের মধ্যে এক ধরনের নির্লিপ্ততা ছিল। দ্বৈত শাসন পদ্ধতিতে ক্ষমতা ভাগাভাগি প্রশ্নে হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সামাজিক-রাজনৈতিক অনৈক্য, মুসলমানদের সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার নীতি, ঝামেলা এড়িয়ে চলতে মুসলিম পরিবারের সন্তানদের প্রতি অভিভাবকদের চাপ এবং বাংলার ছাত্র আন্দোলনে হিন্দুদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও প্রতীকের বহুল ব্যবহার প্রভৃতিই সম্ভবত ছাত্র রাজনীতিতে মুসলমানদের অনুপস্থিতির কারণ ছিল।

১৯৩০ সালের ১২ জুলাই ঢাকায় অনুষ্ঠিত বেঙ্গল মুসলিম স্টুডেন্টস-এর সভা এবং ১৯৩১ সালের অক্টোবরে কলকাতায় অনুষ্ঠিত নিখিলবঙ্গ মুসলিম ছাত্র সমাবেশে ছাত্রদের প্রতি তাদের শিক্ষা গ্রহণের পথে সব ধরনের বাহ্যিক হস্তক্ষেপ প্রতিরোধ এবং জাতীয় স্বার্থ, বিশেষ করে মুসলিম সম্প্রদায়ের স্বার্থের পরিপন্থী রাজনীতি এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তবে আইন অমান্য আন্দোলন দ্রুত ঘনিয়ে আসা এবং এতে অল বেঙ্গল স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (এ.বি.এস.এ) এর ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে মুসলিম অভিভাবক এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ আলাদা একটি মুসলিম সংগঠন গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন।

এটি স্পষ্ট যে, জন্মলগ্ন থেকেই অল বেঙ্গল মুসলিম স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (এ.বি.এম.এস.এ) প্রবীণ মুসলিম রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতা ও তত্ত্বাবধানে কাজ করেছে। উদাহরণস্বরূপ ১৯৩৩ সালে হুগলি মুসলিম স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন কেবল সেক্রেটারি পদটি ছাড়া বাকি সবগুলি পদেই ছিলেন শিক্ষকবৃন্দ। এ.বি.এম.এস.এ-এর ১৯৩৫-৩৬ সালের কমিটির তালিকাও প্রায় অনুরূপ ছিল। ১৯৩৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত এ.বি.এম.এস.এ-এর দ্বিতীয় কনফারেন্সে অ্যাডিশনাল ডি.এস.পি-কে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, এ.বি.এস.এ-এর কনফারেন্সে যা ছিল অকল্পনীয়। প্রবীণদের এরূপ হস্তক্ষেপের কারণেই এ.বি.এম.এস.এ-কে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল সমকালীন রাজনৈতিক বিষয়াবলি যেমন, রাজবন্দি, সাংবিধানিক পরিবর্তন কিংবা সাম্প্রদায়িক রোয়েদাদ প্রভৃতিতে নিজেদের না জড়াতে।

১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের অধীনে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচন এগিয়ে আসায় এবিএসএ-এর মতো এবিএমএসএ-ও প্রবীণ মুসলিম রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের শিকারে পরিণত হয়। ইতোমধ্যে ১৯৩৫ সালের কনফারেন্সে মুসলিম ছাত্রদেরকে প্রবীণ নেতৃবৃন্দের কথারই প্রতিধ্বনি করতে দেখা গেছে। ঢাকার নওয়াব ও এম.এ.এইচ ইস্পাহানি প্রমুখ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এ.বি.এম.এস.এ এসময়ে .কে ফজলুল হকহোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী প্রমুখ নেতৃবৃন্দের লড়াইয়ের ক্ষেত্রে পরিণত হয়। খুবই স্বাভাবিকভাবে এসব নেতৃবৃন্দের চাপে ছাত্রদের মধ্যে বিভক্তির সৃষ্টি হয়। স্টার অব ইন্ডিয়া-র সমকালীন সংখ্যাগুলিতে মুসলিম ছাত্র রাজনীতির এ বিভক্তির প্রমাণ পাওয়া যায়। বগুড়ায় অনুষ্ঠিত ১৯৩৬ সালের মুসলিম স্টুডেন্ট কনফারেন্স ঢাকার নওয়াবের সভাপতিত্বে গঠিত ইউনাইটেড মুসলিম পার্টির নির্বাচনী মঞ্চ হিসেবে ব্যবহূত হয়েছিল। এ.কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে গঠিত কৃষক প্রজা পার্টি এর বিরোধী দল হিসেবে ঢাকার নওয়াবগণ এ দলটি গড়ে তুলেছিলেন। বগুড়া কনফারেন্সে গৃহীত অনেক সিদ্বান্তই পরে ইউনাইটেড মুসলিম পার্টির নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে স্থান পেয়েছিল। এভাবে ১৯৩৬ সালের মধ্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দই এবিএমএসএ-কে রাজনীতিতে টেনে এনেছিলেন।

১৯৩৭ সালে অল ইন্ডিয়া মুসলিম স্টুডেন্ট ফেডারেশন গঠিত হলে এ.বি.এম.এস.এ-এর সদস্যদের অনেকেই পৃথক একটি কংগ্রেস বিরোধী ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে এ দলে যোগ দিয়েছিলেন। কংগ্রেসপন্থী মুসলিম নেতৃবৃন্দও বিকল্প একটি সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু তা বাংলায় জনপ্রিয়তা পায় নি কিংবা দৃঢ়ভাবে বাংলায় প্রতিষ্ঠিতও হতে পারে নি।  [রণজিৎ রায়]