নানক

নানক (১৪৬৯-১৫৩৮)  শিখধর্মের প্রবর্তক। তিনি গুরু নানক, বাবা নানক বা নানক শাহ নামেও পরিচিত। ১৪৬৯ সালে লাহোরের নিকটবর্তী তালওয়ান্দি গ্রামের (বর্তমান নানকানা) এক  ক্ষত্রিয় পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা কালু ছিলেন একজন রাজস্ব আদায়কারী। নানক শিখধর্মে হিন্দু ও মুসলিম চিন্তাধারার সমন্বয় সাধনের প্রয়াস পেয়েছিলেন। তাঁর উত্তরসূরি অন্য নয়জন গুরুর মধ্যে সর্বশেষ ও শ্রেষ্ঠ হলেন গুরু গোবিন্দ সিং (১৬৬৬-১৭০৮)।

গুরু নানক

বাল্যকালে নানক  ফারসি শেখেন এবং কিছুদিন তালওয়ান্দি স্কুলে অধ্যয়ন করেন। পরে স্কুল ছেড়ে তিনি মরুচারী হিন্দু-মুসলিম সাধু-সন্ন্যাসী ও ফকিরদের সঙ্গ যাপন করেন। কিছুদিন তিনি জলন্ধর জেলার সুলতানপুরে আফগান প্রধানের হিসাবরক্ষক হিসেবে কাজ করেন। সেখানে মর্দানা নামক এক মুসলিম ভৃত্যের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব হয়, যে ছিল একজন রবাববাদক। নানক স্তোত্রগীত রচনা করতেন এবং মর্দানা সেগুলিতে সুরারোপ করত। এভাবে দুজনে মিলে স্ত্ততিগানের একটি সুসংহত রূপ দেন। সেখানে তাঁরা একটি ক্যান্টিন খোলেন যেখানে মুসলিম ও বিভিন্ন বর্ণের হিন্দুরা একত্রে খেতে পারত।

কথিত আছে যে, সুলতানপুরে নানক এক আধ্যাত্মিক জ্ঞান লাভ করেন, যার মাধ্যমে তিনি মানবসমাজে ঈশ্বরের বাণী প্রচারের আদেশ পান। সে অনুযায়ী তিনি ঘোষণা করেন যে, হিন্দু-মুসলিম বলে কিছু নেই। নানক হিন্দু ও মুসলিম উভয়েরই পবিত্র স্থানসমূহ মক্কা, মদিনা, বাগদাদ, সিংহল, কামরূপ, গয়া, কাশী, কুরুক্ষেত্র, বৃন্দাবন, দিল্লি ইত্যাদি ভ্রমণ করেন। কর্তারপুরে তাঁর শেষজীবন অতিবাহিত হয়। তিনি শিষ্য অঙ্গদকে তাঁর উত্তরসূরি মনোনীত করেন।

নানক ছিলেন একেশ্বরবাদী। তাঁর মতে এক ঈশ্বরই সব কিছুর স্রষ্টা এবং তিনি সর্বত্র বিরাজমান। তিনি ঈশ্বরের একত্ব, মানুষে মানুষে ভেদহীনতা এবং বর্ণপ্রথার অসারত্ব প্রচার করেন। তিনি ছিলেন মূর্তিপূজার বিরোধী।

তিনি তাঁর অনুসারীদের শুদ্ধ জীবনযাপন করার পরামর্শ দেন এবং অতিশয় বৈরাগ্য বা সুখভোগ, ভন্ডামি, স্বার্থপরতা ও মিথ্যাবাদিতা পরিত্যাগ করার আহবান জানান।অনুসারীদের প্রতি তিনি প্রত্যুষে শয্যাত্যাগ, স্নান, পবিত্র নামজপ এবং প্রাত্যহিক কর্ম ঈশ্বরের নামে উৎসর্গের মাধ্যমে ঈশ্বরের উপস্থিতি সম্পর্কে সচেতন থাকারও উপদেশ দেন। শিখদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ গ্রন্থসাহেব-এ গুরু নানকের বাণী ও স্তোত্রগীত সংকলিত রয়েছে। ১৫৩৮ সালের অক্টোবর মাসে তিনি পরলোক গমন করেন।  [সমবারু চন্দ্র মহন্ত]

আরও দেখুন শিখধর্ম